ফজলুল বারী: রাহাত চলে গেছে। এখন তার শেষ যাওয়া যাচ্ছে জন্মভূমি বাংলাদেশে। কুমিল্লায়। তবে এ রাহাত সে রাহাত নয়। বিমানের আসনে বসে সে সিডনি এসেছিলেন। কিন্তু যাবার সময় তার জন্যে আসন খোঁজা হয়নি। এখন চিরদিনের জন্যে দেশে যাবার বেলায় রাহাত যাবেন কফিনবন্দী লাশ হয়ে। রাহাত বিন মোর্শেদ। তার সঙ্গে একটি স্বপ্ন এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। নিজের স্বপ্ন। একটি পরিবারের স্বপ্ন। এখানেই সে স্বপ্নের মৃত্যু ঘটেছে।
শুক্রবার সিডনি থেকে নিয়ে হচ্ছে একটি মৃত স্বপ্ন রাহাতের লাশ। শনিবার সেটি ঢাকায় গিয়ে পৌঁছবে। সেখান থেকে কুমিল্লায়। অনেক কান্না হবে মা-বাবা স্বজনদের। রাহাতের বন্ধুরাও কাঁদছেন। আর কী করার আছে। কারন রাহাতকে নিয়ে তাদের পরপর তিন বন্ধুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। তিনটিই অপমৃত্যু। গত পহেলা নভেম্বর সিডনির ওয়াটামোলা সমুদ্র সৈকতে এক মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয় রাহাতের। রাহাত-বাপন-ফয়সল তিন বন্ধু সেখানে সাগরে লাফিয়ে পড়ে সাঁতরাতে গিয়েছিল। ওই জায়গাতে সবাই সাগরে লাফিয়ে এডভেঞ্চার করতে যায়। কিন্তু সেটিই যেন হয়ে গেছে মৃত্যুঝাঁপ রাহাতের। সেই ঝাঁপে তিনি তলিয়ে যেতে থাকেন সাগরে। বাপন-ফয়সল দুই বন্ধু রাহাতকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন। তারাও তলিয়ে যাচ্ছিলো। বাপন-ফয়সলকে হাসপাতালে নিয়ে বাঁচানো গেছে। কিন্তু ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাহাতের। পুলিশের এমবুলেনস তাকে মৃত অবস্থাতেই উদ্ধার করে নিয়ে যায় হাসপাতালে। সেই থেকে কাঁদছেন রাহাতের বাবা-মা। কারন এভাব মরার জন্যেতো তারা ছেলেকে পড়াশুনার জন্য অস্ট্রেলিয়া পাঠাননি। স্বপ্ন মরে গেছে। গত জানুয়ারিতে পড়াশুনার জন্যে অস্ট্রেলিয়া আসেন রাহাত। বন্ধুদের সঙ্গে থাকতেন সিডনির ওয়ালি পার্কে। আইটির ছাত্র রাহাত এখানে কাজ করতেন উবারইটসের সংগে। ম্যাগডোনাল্ডেও জব হয়েছিল তার। কিন্তু সে জবে যোগ দেবার আগেই চিরতরে হারিয়ে যান প্রিয় প্রজন্ম রাহাত।
তার মৃত্যুর ঘটনা নাড়া দিয়েছে সিডনি প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজে। কারন গত কিছুদিনে এখানে পরপর এমন বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি ছাত্রের দূর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। নিউসাউথ ওয়েলস পুলিশের আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ পেয়ে ৭ নভেম্বর বাদজোহর রাহাতের প্রথম জানাজা হয়েছে সিডনির রুটিহিলস মসজিদে। তার শেষ শয্যা হবে কুমিল্লায়। যেখানে তিনি জন্মেছিলেন। যেখানে বন্ধুরা ভালোবাসার ফুল দিতে যেতে পারবেন তার কবরে।