বোবার সম্পত্তি দখল করা হারিছ চৌধুরী বোবার মতো মরে গেছেন

বোবার সম্পত্তি দখল করা হারিছ চৌধুরী বোবার মতো মরে গেছেন

ফজলুল বারী: হারিছ চৌধুরী বিএনপির গুরুত্বহীন কোন চরিত্র ছিলেননা। বিএনপির সর্বশেষ সাম্রাজ্যে মোসাদ্দেক আলী ফালু, হারিছ চৌধুরী দু’জন দাপুটে দুই চরিত্র ছিলেন। দু’জনেই খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক পরামর্শ দিতেন! ১/১১ আসার পর ফালু গ্রেফতার হন। পত্রিকায় ছাপা হয় জিজ্ঞাসাবাদে তাকে একটি কাবিননামা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়।

আর গ্রেফতার এড়াতে হারিছ চৌধুরী তখন পালিয়ে যান। সিলেটের জকিগঞ্জ-বারঠাকুরী সীমান্তের ওপারে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর থানা। শোনা গিয়েছিল হারিছ চৌধুরী গোপনে সীমান্ত পার হয়ে বদরপুরে তার নানা বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।

এরপর কত ঘটনা ঘটে। ১/১১’এর সময় বিএনপি নেতাদের বাড়ির পুকুর থেকে শুধু ঢেউ টিন উদ্ধারের ছবি-খবর ছাপা হচ্ছিল! ত্রানের ঢেউ টিন! গরিব মানুষজনকে দিতে খয়রাতি সাহায্য হিসাবে এসব ঢেউ টিন কেনা হয়েছিল। ত্রানের ঢেউ টিন থাকবে জেলা-উপজেলার ত্রান সামগ্রীর গুদামে।

কিন্তু বিএনপি নেতারা এসব ত্রানের ঢেউ টিন সহ নানাকিছু তাদের বাড়িতে স্তুপাকার করেছিলেন! এরপর ধরপাকড় শুরু হলে তা ডুবিয়ে দেন যার যার পুকুরে! এখন প্রতিদিন সেই বিএনপি নেতারাই কত মিহিন বক্তৃতা দেন! দেশের মানুষও ইস্যুর ভিড়ে সবকিছু মনে রাখতে পারেনা।

কিন্তু কি সব কারনে বিএনপির আজ এত দূর্গতি তা তারা কি একবারও মনে করে আল্লাহর কাছে মাফ চান? ফালু-হারিছ চৌধুরীরাতো তখন দেশের অর্ধেক কিনে নিয়েছিলেন! হাওয়া ভবনকে ঘিরে তখন প্যারালাল শাসন চালু করা হয়েছিল! কোকো লঞ্চের বিষয় ততোদিনে সেকেলে পরিত্যক্ত প্রায়!

ঢাকার বিজয়নগরের মুক ও বধির বিদ্যালয় ভবনে এক সময় হারিছ চৌধুরীর গাড়ি কেনাবেচার শো-রূম, ব্যবসা ছিল। ওমা! হঠাৎ একদিন শুনি ক্ষমতার দাপটে হারিছ চৌধুরী ওই ভবন দখল করে ফেলেছেন! তখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে মন্ত্রীরা দেখা করতে আগে ফালু-হারিছ চৌধুরী এদেরকে তেল মারতে হতো!

অতএব এরা দখল করতে করতে বোবার সম্পত্তিও বাদ দেবে কেনো। ফালুর অনেক দায়িত্ব ছিল বলে তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বাইরেরও নানা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। হারিছ চৌধুরীর নজর বেশি ছিল দখল-সম্পত্তি ক্রয়ে। ঢাকা-সিলেট-লন্ডনে তার নানাকিছুর খবর পাওয়া যাচ্ছিলো!

১/১১ নিয়ে বিএনপির এত অভিযোগ,  কিন্তু হারিছ চৌধুরীর ব্যাপারে সবাই চুপ! খালেদা জিয়া-তারেকের বিরুদ্ধে যত মামলা আছে, বিচার-সাজা হয়েছে, এর বেশক’টিতে হারিছ চৌধুরীও আসামী এবং সাজাপ্রাপ্ত। এসব মামলায় বিএনপির আইনজীবীরা আপিল করলেও হারিছ চৌধুরীর নাম সেখানে রাখেননি!

অতঃপর মৃত্যু সংবাদ লুকোনোকে কেন্দ্র করে হারিছ চৌধুরী আবার আলোচনায়!  কী দেউলিয়াত্ব! একদল বলছেন মারা গেছেন বিলাতে, সেখানে কবর হয়েছে! আরেকদল বলছেন মারা গেছেন ঢাকায়! কবর হয়েছে মোহাম্মদপুরে! মরার আগে তিনি পরিচয় গোপন করে দেশে এসেছিলেন! এমন গোপনীয়তার ভিতর মৃত্যু এবং দাফনের ঘটনা বাংলাদেশে আর ঘটেনি।

বিএনপির উচিত এ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়ে এ ব্যাপারে তাদের অফিসিয়েল অবস্থান জানানো। তিনি যে মানের নেতা তাকে তারা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব বানিয়েছিলেন! দলনেত্রীর সাবেক রাজনৈতিক সচিবের গোপনীয়তার ভিতর মৃত্যু নিয়ে বিএনপির বক্তব্য দেবার সাহস থাকা উচিত।

কারন বোবার সম্পত্তি দখল করা তাদের নেতা  হারিছ চৌধুরী বোবার মতো মরে গেছেন।