অনলাইন ডেস্ক: ০৭ জুলাই ২০১৫
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী। তাঁর দাবি, বাংলাদেশের কিছু তথাকথিত ইসলামপন্থী দল মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে।
গাফফার চৌধুরী ভাষ্যমতে, ‘যারা ধর্মকে রাজনৈতিক পুঁজি করেছে, তারাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি তাদের চাইতে অনেক বড় মুসলমান।’
প্রবীণ এই কলামিস্ট আরো বলেছেন, ‘কোনো সাধারণ মানুষের আল্লাহকে অবমাননা করার শক্তি আছে -এটা প্রচার করাও ধর্মদ্রোহিতা। আমি নিজে মাত্র গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওমরাহ করেছি। সেই ব্যক্তি নিউইয়র্কে এসে ধর্মদ্রোহিতা করবে কী কারণে?’
গত শুক্রবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহর নাম প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন গাফফার চৌধুরী। এই ভিডিও প্রকাশের পর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তাঁর সমালোচনা করে বিবৃতিও দিয়েছে বিএনপি, হেফাজতে ইসলাম। ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে আজ সোমবার নিউইয়র্ক-ভিত্তিক বাংলা টেলিভিশন টাইম টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন তিনি।
নিউইয়র্কে আব্দুল গাফফার চৌধুরী জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি আব্দুল মোমেনের সাথে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গতকাল রোববার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা থেকে আজ সোমবার রাত পর্যন্ত এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে বহুবার ফোন করা হয়। তবে একবারও গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে একবার আব্দুল মোমেন জানান, তিনি নেই, পরে ফোন করতে হবে।
অবশ্য এ সময় গাফফার চৌধুরীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন আব্দুল মোমেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টাকে বিভ্রান্তকরভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এক ধরনের অপসাংবাদিকতা করা হয়েছে। উনি (আব্দুল গাফফার চৌধুরী) যা বলেছেন তার উল্টোটা বোঝানো হয়েছে।’ সেইসঙ্গে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর আল্লাহর ৯৯ নাম সংক্রান্ত বক্তব্যের দায় জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন নেবে না বলেও জানান তিনি।
আব্দুল মোমেনের দেওয়া সময় অনুযায়ী ফোন করলে ফোনটি ভয়েস মেইল সার্ভিসে চলে যায়। সবশেষ আজ রাতে প্রথমবার আব্দুল মোমেন জানান তিনি মিটিংয়ে আছেন। পরে ফোন করলেও ফোনটি আর ধরেননি তিনি।
আজ টাইম টিভিকে গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘তেসরা জুলাই নিউইয়র্কে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি একটি একাডেমিক আলোচনা সভায়। সেটাকে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক মৌলবাদী দল রাজনৈতিক পুঁজি করেছে, এবং মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। তারা বলেছে যে, আমি ধর্মবিরোধী। রসুল, ইসলাম এমনকি আল্লাহর অবমাননা করেছি। কোনো সাধারণ মানুষের আল্লাহকে অবমাননা করার শক্তি আছে- এটা প্রচার করাও ধর্মদ্রোহিতা এবং এই তথাকথিত ইসলামপন্থীরা এটাই প্রচার করছে।’
বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে দাবি করে বিশিষ্ট এই কলামিস্ট বলেন, ‘আমার যাঁরা নিন্দা করছেন তাঁদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমার বক্তব্যটা সম্পূর্ণ পড়ুন। তারপর যদি মনে করেন যে আমি ধর্ম, আল্লাহর রসুলের বিরুদ্ধে কিছু বলেছি, তখন তার শাস্তি বিধান করেন। কিন্তু এই বিনা বিচারে কিছু এই এক শ্রেণির মোল্লার উসকানিতে, তাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, তাঁরা যা করছেন এটার নিন্দা করার ভাষা আমার জানা নেই। তাঁরা আমাকে ছোট করেননি, তাঁরা ধর্মকে, আল্লাহর রসুলকেই ছোট করছেন।’
আল্লাহর ৯৯ নাম নিয়ে গাফফার চৌধুরী মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন এই সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর ৯৯ নাম সম্পর্কে দেবতাদের নাম বলিনি। আমি যেটা বলেছি যে, কালচারাল এসেমিলেশন কীভাবে প্রত্যেকটি সভ্যতা এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতা উপকরণ গ্রহণ করে। বাংলা ভাষাকে হিন্দুদের ভাষা বলা হয়। এটা যে সত্য না- এইটা প্রমাণ করার জন্য বলেছিলাম যে, আরবি ভাষাও ছিল এককালে কাফেরদের ভাষা। এইটা বলা কি আরবি ভাষার অবমাননা? তারপরে বলেছি যে আল্লাহর নাম, গুণাত্মক নামগুলো আগে কাফেরদের দেবতাদেরও ছিল। তা না হলে রসুলুল্লাহর পিতার নাম আবদুল্লাহ কী করে হয়? এইটা তো মুসলমান নাম নয়।’
আল্লাহ নামটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গাফফার চোধুরী বলেন, ‘এখানে আল্লাহ আছে। এই আল্লাহ ছিল কাবা শরিফের কাবার অধিষ্ঠিত মূর্তিগুলার ভিতরে প্রধান মূর্তির নাম। অবশ্য কেউ কেউ এটাকে ইলাহ বলে। ইলাহ থেকে আল্লাহ শব্দের উৎপত্তি। এইভাবে আমাদের রসুল আরবের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেটা ধর্মবিরোধী নয় সেগুলোকে তিনি গ্রহণ করেছেন। এমন কি হজও ইসলামের হজ নয়। এটাও সেই দুই হাজার তিন হাজার বছর আগের কাফেরদের দ্বারা প্রবর্তিত হজ। উনি সেখানে একেশ্বরবাদটাকে যুক্ত করেছেন। এটিই আমি বলেছি যে এটা হচ্ছে একাডেমিক আলোচনা এবং আমি সাহাবাদের সম্পর্কে কোনো কটূক্তিই করি নাই।’
সাহাবীদের নাম ও মুসলমানদের নাম রাখার সংস্কৃতির প্রসঙ্গ টেনে গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘আমি বলেছি যে আমরা আরবি ভাষা না জেনে আরবিতে সন্তানদের নামকরণ করি- সেটা ভুল। আমাদের নামটার অর্থটা জানা উচিত।
যেমন- আবু হুরায়রা। এটা রসুলুল্লাহর সাহাবার প্রকৃত নাম নয়। রসুলুল্লাহ তাকে ঠাট্টা করে বিড়ালের বাবা ডাকতেন। এখন আমরা যেহেতু আরবি জানি না। আমরা সেই বিড়ালের বাবার নামটা আমরা রাখি। যার কাশেম বলে কোনো ছেলে নেই, উনি তাঁর নাম রাখেন আবুল কাশেম। এইভাবে আরবি ভাষা না জানার জন্য অনেক বিভ্রান্তি আমাদের দেশে। মোজাক্কার মোয়ান্নাস বুঝতে পারি না আরবের। আমাদের নামে অনেক সময় আমরা স্ত্রী লোকের নাম রাখি। তারও উদাহরণ দিয়েছি।’
রসুল শব্দের অর্থ দূত জানিয়ে আব্দুল গাফফার চৌধুরী টাইমস টেলিভিশনকে বলেন, ‘রসুল শব্দকে মনে করি, রসুল বললেই বুঝি আমাদের রসুলুল্লাহকে বর্ণনা করা হয়। অথচ পণ্ডিত নেহেরু যখন সৌদি আরবে যান তখন তাঁকে বলা হয়েছিল, মারহাবা ইয়া রসুলে সালাম। হে শান্তির দূত তোমাকে সংবর্ধনা জানাই। অথচ বাংলাদেশে গিয়ে কেউ যদি বলে অমুক একজন রসুল মানে অ্যাম্বাসেডর তাকে মুরতাদ বলা হবে। এই যাঁরা আজকে মুরতাদ বলছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আজকে তাঁরা ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মের অবমাননা করছেন। আমি এঁদের শাস্তি চাই।’
বাংলাদেশের একশ্রেণির ধর্ম ব্যবসায়ী যারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত তারাই রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেন প্রবাসী এই কলামিস্ট। তিনি বলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, বাংলাদেশে ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী, যারা পরবর্তীকালে সব রকম মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ইসলামের নাম করে ব্যবসা করতেছে, ব্যাংক করেতেছে, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি করতেছে এবং আজকে যারা এই ধর্মকে আবার রাজনৈতিক পুঁজি করেছে তারাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি তাদের চাইতে অনেক বড় মুসলমান।’ ((সুত্রঃ ntvbd.com)