নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড’ পাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিশ্ব নারী সম্মেলনে (গ্লোবাল সামিট অব উইমেন) তাকে এই সম্মানজনক এ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, আগামী ২৬-২৮ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বাংলাদেশে নারীর সমতা নিশ্চিতে ব্যাপক অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশ্ব নারী সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমন্ত্রণের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়ায় সরকারী সফর করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এনজিও গ্লোবাল সামিট অব উইমেন বাংলাদেশ এবং সমগ্র এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষা এবং নারী উদ্যোক্তাদের কর্মকা- প্রসারে অভূতপূর্ব নেতৃত্ব প্রদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রীকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। গ্লোবাল সামিট অব উইমেন প্রতি বছর নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে উৎসাহিত এবং সারা বিশ্বে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করে থাকে যেখানে নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে বিশেষভাবে সম্মাননা দেয়া হয়। এ বছর সম্মেলনটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত হবে।
‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড’ একটি আজীবন সম্মাননামূলক স্বীকৃতি। গত বছর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এই পদক পান। এ ছাড়া ইতোপূর্বে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা, জাতিসংঘের সাবেক শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার সাদাকো ওগাতা, চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাশেলেট, আয়ারল্যান্ডের সাবেক রাষ্ট্রপতি মেরি রবিনসনসহ অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তি এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সম্মানিত সরকারী ও বেসরকারী, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সকল বিশিষ্ট প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন। এ সম্মাননা গ্রহণ উপলক্ষে তিনি নারীর ক্ষমতায়ন, সমসুযোগ, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীকে জাতীয় উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্তকরণের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের গৃহীত উদ্যোগ, অবদান এবং সাফল্য তুলে ধরে উপস্থিত নারী উদ্যোক্তাসহ সহ¯্রাধিক অন্যান্য প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদান করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগামী ভূমিকা বিশ্বে জোরালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও সুদৃঢ় করতে সহায়ক হবে। তাছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সন্ধিক্ষণে এই স্বীকৃতির ফলে বর্তমান সরকারের নারীর অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রচেষ্টা আরও দৃশ্যমান হবে।
মাহমুদ আলী জানান, প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। বৈঠকটি ২৮ এপ্রিল সিডনিতে অনুষ্ঠিত হবে। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র। উন্নত বিশ্ব থেকে অস্ট্রেলিয়া সর্বপ্রথম ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। জাতীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুতে দু দেশের অভিন্ন অবস্থান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গভীরতর করেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার এ সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৯ সালে এবং পরবর্তীতে ২০১১ সালে ২২তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য অস্ট্রেলিয়া সফর করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, অস্ট্রেলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দু দেশের মধ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, মানব সম্পদ উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিদ্যুত ও জ্বালানি, কৃষি, নিরাপত্তা, তথ্য- যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনা হবে। এ ছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে চলমান ঘটনাবলীর ওপরে দুই প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দু দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দান করবে। পাশাপাশি কমনওয়েলথভুক্ত অন্যতম সদস্যরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও নিবিড় এবং সুদৃঢ় করবে বলে আমরা আশা করি। রাজনৈতিক দিক থেকে এ সফর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক ফোরামে বাংলাদেশের উদ্যোগে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থন আদায়ে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৯০ সাল থেকে প্রতি বছর গ্লোবাল সামিট অব উইমেন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর টোকিওতে এই সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার এই সামিটের আয়োজক অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বের ৬০টি দেশের প্রায় এক হাজারের বেশি প্রতিনিধি এই সামিটে অংশ নেবেন। বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানও এই সামিটে যোগ দেবেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নারী সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে থাইএয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন। আগামী রবিবার রাতে তিনি ঢাকা ফিরবেন। (জনকন্ঠ )