বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার পেয়েছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় সিডনির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে জমকালো অনুষ্ঠানে নারী নেতৃত্বের সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতা কাজে লাগাতে এবং তাদের সহযোগিতা ও অধিকার তুলে ধরতে একটি নতুন বৈশ্বিক জোট গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত এবং সম্মানিতবোধ করছি। আমি বিশ্বের নারীদের এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি, যারা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছেন।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের আমন্ত্রণে উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড নিতে তিনদিনের সফরে সিডনি অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলকেও ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। বাংলাদেশের নারী শিক্ষা ও ব্যবসায়িক উদ্যোগের বিশেষ অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই পুরস্কার দিয়েছে। ‘গ্লোবাল উইমেন সামিট’-এর প্রেসিডেন্ট আইরিন নাতিভিদাদ-এর কাছ থেকে মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে এক নৈশভোজ অনুষ্ঠানে মর্যাদাপূর্ণ এ সম্মাননা গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্লোবাল সামিট অব উইমেন-এর প্রেসিডেন্ট আইরিন নাতিভিদাদ। এ সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় দেড় হাজার নারী নেতৃত্ব যোগদান করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কার গ্রহণকালে নারী নেতৃবৃন্দ বেশকিছু সময় দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে তাঁকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়নে সরকারের নানা উদ্যোগ নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীদের সহযোগিতা ও তাদের অধিকার তুলে ধরতে আমাদের একটি নতুন জোট গঠন করতে হবে। লাখ লাখ নারীর স্বার্থে আমরা অবশ্যই আমাদের অভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধ নিয়ে একত্রে কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী চেঞ্জ মেকারদের দেখতে পাওয়া আমার জন্য বিশাল আনন্দের বিষয়।’ মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কারের জন্য তাঁকে মনোনীত করায় তিনি গ্লোবাল সামিট উইমেন কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি সবাইকে প্রান্তিক, দুস্থ, যারা অনাহারী এবং স্কুলে যেতে অনাগ্রহী ও নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়াতে গতানুগতিক লিঙ্গ বৈষম্য থেকে ফিরে এসে নারীর সক্ষমতা বাড়াতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কোন মেয়ে ও নারী পিছিয়ে পড়ে থাকবে না। তিনি বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা দূরীকরণসহ উৎপাদনশীলতা জোরদার করার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা তার চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, প্রথমত: নারীর সক্ষমতা নিয়ে প্রচলিত যে ধারণা সমাজে রয়েছে, তা ভাঙতে হবে। দ্বিতীয়ত: প্রান্তিক অবস্থানে ঝুঁকির মুখে থাকা সেইসব নারীদের কাছে পৌঁছাতে হবে, যারা আজও কম খাবার পাচ্ছে, যাদের স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না, যারা কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কোনো নারী, কোনো মেয়ে যেন বাদ না পড়ে। তৃতীয়ত: নারীদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে তাদের সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। চতুর্থত: জীবন ও জীবিকার সমস্ত ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণেই সুষ্ঠু, অধিকারভিত্তিক, লিঙ্গ সংবেদনশীল এবং বাস্তবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন নারী ক্ষমতায়নের রোল মডেল।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সংগ্রামে বাঙালি নারীদের ত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির কথা উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নের নিজের সংগ্রামের কথাও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থানে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। (ইত্তেফাক)