পৃথিবীর সবচেয়ে কম ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। যদি প্রতি বর্গ কিলোমিটার জায়গায় মানুষের বসতি সমান ভাবে থাকত তাহলে মাত্র ৩ জন মানুষ থাকত প্রতি বর্গ কিলোমিটারে । কিন্তু বাস্তবতা হল, ২০১৬ সালের সেন্সাস(CENSUS) অনুযায়ী সিডনির বাসিন্দা ৫,০০৫,৪০০ জন যা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগ (১৯.৪১%)। এর মধ্যে পটস পয়েন্ট, অল্টিমো এবং চিপিংডেলে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে থাকে ১৫,০০০ জন।
সিডনির আবাসায়ন প্রকল্প প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। ব্ল্যাকটাউন, ক্যাম্পবেলটাউন , ক্যামডেন, পেনরিথ, সাদারল্যান্ড ,হর্নসবি যেদিকেই চোখ যায় শুধু নতুন বাড়ি। অধিকাংশই বন কেঁটে উজাড় করে তৈরী হয়েছে রাস্তা, বাজার, স্কুল,হাসপাতাল ও মানুষের আবাসায়ন ব্যবস্থা।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের তথ্য অনুযায়ী নিউ সাউথ ওয়েলসের প্ল্যানিং মিনিস্টার এন্থনি রবার্ট বলেছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চ ২০১৮ সালে ৩৩,৮৯৩টি নতুন বাড়ি তৈরী হয়েছে। অতিরিক্ত মানুষের চাপ কমানোর জন্য প্রতিদিনই কাঁটা হচ্ছে গাছ পালা এবং বিনষ্ট করা হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। এছাড়াও ২০২৬ সালে নির্মিত হবে ব্যাডগ্যারি ক্রীক এয়ারপোর্ট যা কিনা সিডনি শহর থেকে ৫০ কিলো মিটার দূরে একটি প্রকৃতি ঘেরা পরিবেশ। কাঁটা পড়বে গাছ এবং ধ্বংস হবে অসংখ্য প্রাণীকুলের বাসভূমি।
নতুন আবাসিক ব্যবস্থা ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে সিডনির শহর থেকে দূরের নতুন আবাসিক এলাকার চারপাশে। নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার গ্লাডিস বেরেজিকলিয়ান ,শুধু গাছ লাগানোর জন্য আগামী ১২ বছরে ৩৮.৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনা মোতাবেক ৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান নেটিভ গাছ লাগানো হবে যেসব জায়গায়ই গাছ কমে গেছে এবং নতুন আবাসিক এলাকা হয়েছে বা হচ্ছে তারই আশেপাশে।
৫ মিলিয়ন গাছ লাগালেই কি কাঙ্গারুকে তার দলবল নিয়ে ফিরতে পারবে তার পুরাতন চারণভূমিতে ? পারবে কোয়ালা তার সঙ্গীকে নিয়ে গামট্রির গাছে গাছে চড়ে বেড়াতে ?পারবে কি লোরেকিট গাছের ডালে ডালে তাদের দলবল নিয়ে চিৎকার করে গান করতে ? নাকি গতকাল খুব সকালে হেরিংটন পার্কের নতুন আবাসিক একালার সামনে এসে উত্তরাধিকারের মত মাথা উঁচু করে এই ক্যাঙ্গারুটার মত বলবে “দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য লও হে নগর” !
তথ্য সূত্রঃ সিডনি মর্নি হেরাল্ড ও সেনসাস