ফুল ভালবাসেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। তাই সবাইকে মনোরঞ্জন করতে প্রতিবারের মত সম্পূর্ণ নতুন থিম নিয়ে আবারও আসছে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বসন্ত উৎসব ক্যানবেরাতে। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানীতে এই বসন্ত উৎসবকে বলা হয় “ফ্লোরিয়াড” এবং এই উৎসবে যোগ দিতে সারা অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রায় ৪০০,০০০ দর্শনার্থীর ভিড় জমে প্রতি বছর।
শুধু ফুলের সমারোহ নয় সাথে থাকে ভিন্ন ধরণের সাজ-সজ্জা এবং দিন রাত ব্যাপী নানা ধরণের উৎসবের আয়োজন থাকে। অনেকেই উৎসবটির মিউজিক ও লাইট দেখতে দূর থেকে এসে ক্যানবেরাতে রাত কাটিয়ে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করেন।
এই উৎসব চলবে ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এবং বাগান খোলা থাকবে প্রতিদিন সকাল ৯:৩০মিঃ থেকে বিকাল ৫:৩০মিঃ পর্যন্ত। তবে বিকাল ৫টার পর বাগানে প্রবেশের অনুমতি নাই সাধারণ দর্শনার্থীদের। টিউলিপ, পেন্সি কিংবা নার্সিসাস ফুলের প্রজাতি দিয়ে মিলিয়ন ফুলের সজ্জায় সজ্জিত হবে ফ্লোরিয়াড। প্রতিটা প্রজাতির মধ্যে অসংখ্য নাম ও রঙের বাহার আছে। যারা ফুলের নাম সংগ্রহ করতে ভালোবাসেন, অবশ্যই ফুলের ছবির সাথে নামটিও তুলে নিলে ভবিষ্যতে মনে রাখতে সুবিধে হবে।
এবার ফ্লোরিয়াডের বিভিন্ন বাগানকে নয়টি নতুন থিম দিয়ে সাজানো হবে। থিমগুলোর মধ্যে থাকবে নানা প্রজাতির ফুলের সাথে রঙের সমারোহ। দেখা যাক থিমগুলো কেমন হবে।
১.কালারস্ অফ এসিটি :নীল ,সোনালী এবং সাদা বর্ণের পতাকার রং, কোর্ট অফ আর্মস এবং সাউথার্ন ক্রক্স দিয়ে প্রথম গার্ডেন বেডটি সাজানো থাকবে আইরিশ ব্লো , পেন্সি, টিউলিপ,স্কিলা, রানুকালোস এবং বেলিস ফুল দিয়ে।
২. মিউজিক আইকন :সুরের সাথে মানুষের যুগযুগের বন্ধন। সময়ের সাথে সাথে গানের সুরের পরিবর্তন আসে। শিশুকাল, ভালবাসার সময়, যুদ্ধ ও শান্তি এইতো সুরের খেলা। টিউলিপ নিগ্রিটা ,ট্রাম্প টিউলিপ, নার্সিসাস এর্লিচীর, কাটে কার্লি লিভ এবং পেন্সি ফুলের মিশ্রনে গাঢ় বেগুনী এবং লাল বর্ণের ফুল দিয়ে তৈরী হবে এই বাগানটি।
৩. অস্ট্রেলিয়ান পপ আর্ট :অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত কারুশিল্পী কেন ডোন এর রং – তুলী যেমন অস্ট্রেলিয়াকে সারা পৃথিবীতে পরিচিত করে দিয়েছে ঠিক তেমনটি প্রভাব পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার মানুষের মধ্যে। তার চিত্রকর্মকে প্রাধান্য দিয়ে ভিওলা, টিউলিপ, পেন্সি , নার্সিসাস এবং রানুকালোস ফুল দিয়ে লাল,হলুদ, কমলা, বেগুনী ও সাদা রঙের সমারোহ দিয়ে এই বাগানটি সাজানো হবে।
৪.পাজলিং প্যানারোমাস :পাজলিং বইয়ের চরিত্রগুলোর সাথে শিশুদের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের তৈরী হয়ে থাকে দিনে দিনে। এই পাজলিং বুকের থিম নিয়ে টিউলিপ আগ্রাস, নার্সিসাস, রানুকালোস,ভিওলা এবং পেন্সি ফুলের উপস্থিতি থাকবে এই বাগানে।
৫.কমিউনিকেশন লেন :যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন ধরণের বর্ণ অথবা সিম্বেল আমরা বহুকাল থেকে ব্যবহার করে আসছি। কিছু কিছু এই আধুনিক যুগেও ব্যবহার করি। এর মধ্যে দুঃখী ,হাসি, কান্না, উচ্ছাস কিংবা প্রশংসা এই সিম্বেলগুলুর:) (LOL, XOXO ) সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এই সিম্বেল গুলোকে নানা বর্ণের ফুল বিছিয়ে কমিউনিকেশন লেন থিম গার্ডেন বেডটি বানানো হবে দর্শনার্থীদের জন্য।
৬.ষ্টার স্ট্রাক :অস্ট্রেলিয়ার রঙিন পর্দার নামকরা ব্যাক্তিত্ব এবং পপ সঙ্গীত শিল্পীদের স্টাইল যা কিনা যুগ যুগ ধরে অস্ট্রেলিয়ানদের সংগীত ও আনন্দের প্রেরণা এবং তা ফুলের বাগানে কিভাবে প্রকাশ করা যায় সেটাকে নিয়ে ষ্টার স্ট্রাক থিমটি বানানো হবে।
৭.ফিকশনাল ক্যারেক্টারস :অস্ট্রেলিয়াতে প্রচলিত শিশু গল্পের সেই বড় বড় দাদ, মাথায় টুপি পরা ডাইনোসর যে কিনা গোলাপ ফুল খেতে ভালোবাসে কিংবা সন্ধ্যার কল্পনার সেই আজব চরিত্রগুলোকে নিয়ে ফিকশনাল ক্যারেক্টারস বাগানটিতে শোভা পাবে। মজার ব্যাপার হল এই বাগানে কিন্তু কোন গোলাপ শোভা পাবে না কারণ ডাইনোসর যদি খেয়ে ফেলে। এই বাগানে থাকবে সবুজ রঙ্গের পার্সলি বাগানের সাথে টিউলিপ, ভিওলা, পেন্সি , নার্সিসাস এবং ভেল্লিস ফুল।
৮. সুপারহিরো এলি:এই এলি কিন্তু পাখিও না কিংবা এরোপ্লেনেও না, বাস্তবে আমাদের মুভির প্রিয় সুপারহিরোদের নিয়ে এই থিম। সুপারম্যান, স্প্যাইডারম্যান চরিত্রগুলো সবাই একবাক্যে বলে দিতে পারে সুপারহিরো হিসেবে। কিন্তু আরোও কিছু সুপারহিরো আছে। তাদেরকেও দেখা যাবে এই বাগানে।
৯.কিডস ক্র্যাজেস :শৈশবের নস্টালজিক কিছু স্মৃতি আমাদের সব সময় পিছুটানে। এমন কিছু নিয়েই এই বাগানটি সাজানো হবে যেন মনে পরে যাবে আমাদের সেই ফেলে আসা শৈশবকে।
সিডনি থেকে যারা ড্রাইভ করে এই ফ্লোরিয়াড দেখতে যেতে চান, তাদেরকে অবশ্যই কিছু জিনিস মাথায় রাখলে আপনার দিনটি সুন্দর যাবে। ড্রাইভ করার সময় অবশ্যই আপনার গাড়ির গতির দিকে খেয়াল রাখবেন কেননা মনে রাখবেন পুলিশ হয়ত আপনাকে দেখছে। সঙ্গে হালকা খাবার,পানীয় নিতে ভুলবেন না সাথে ।