গত রাতের (বুধবার) কনসার্টেও হয়ত গেয়েছেন ‘এই রুপালি গিটার ছেড়ে, একদিন চলে যাবো দূরে.. বহুদূরে’ গানটি। গানের কথামতই, রুপালি গিটার ছেড়ে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু।
বাংলাদেশ ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন।
‘সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো, গোপন করে…’ রুপালি গিটার গানে করা বাচ্চুর এ অনুরোধ রাখেননি তার ভক্তকুল। কাঁদছে সবাই, শোকাস্তব্দ বাংলাদেশ।
বুধবার রংপুরের কনসার্ট শেষ করেই বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা ফেরেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্লান্তি নয় অস্বস্তিবোধ করছিলেন এবি।
সকাল ৮টার দিকে বাসাতে মূর্ছা যান বাচ্চু। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে নেয়া হয় রাজধানী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন আইয়ুব বাচ্চু। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর সংবাদে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। খবর পেয়েই হাসপাতালে ভিড় করেন শিল্পীরা। আসছেন ভক্তকুল, সাধারণ মানুষ।
অস্ট্রেলিয়া সফররত ব্যান্ড শিল্পী মাকসুদুল হক তার ফেইসবুকে বলেছেন, “এটা সত্য হতে পারে না! সবাই মিথ্যা বলছে এবং আমি রাগান্বিত… খুব রাগান্বিত।”
শোক প্রকাশ করেছেন শিল্পী শাফিন আহমেদ। আইয়ুব বাচ্চুর আত্মার শান্তি কামনা করে বলেছেন, “সঙ্গীত দিয়ে লক্ষ মানুষের হৃদয় জয় করেছেন আপনি। আমি খুবই ব্যথিত।”
আগামী ২০ অক্টোবর রাজশাহী স্টেডিয়ামে গান গাওয়ার কথা ছিল আইয়ুব বাচ্চুর। কনসার্টের জন্য প্রস্তুতিও চলছিল স্টেডিয়ামে।
প্রিয় শিল্পীর প্রয়াণে শোকাস্তব্ধ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরাও। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে এসে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ১১ই অক্টোবর সিডনির কনসার্টে বলেছিলেন, বিশ্বের নানা দেশের শিল্পীদের নিয়ে কনসার্টের আয়োজন করতে। যেখানে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সাথে পারফর্ম করবেন তিনি।
সিডনি প্রবাসী ফটোগ্রাফার ফাহাদ আসমার বলেন, “সব মৃত্যুই বেদনার। তবে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের বেড়ে উঠাতো তার গান শুনেই।”
এ্যাডিলেইড প্রবাসী ডাক্তার মোহাম্মদ ওয়াজেদ বলেন, “এমন একজন ভালো মানুষ এভাবে চলে যাবেন ভাবতে পারিনি। আমি খুবই ব্যথিত।”
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির (লাভ রানস ব্লাইন্ড) দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার এবং সংগীত পরিচালক।
ফিলিংস ব্যান্ডের হয়ে ১৯৭৮ সালে সঙ্গীতজগতে তার যাত্রা শুরু। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোলস ব্যান্ডে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাচ্চু। রক ঘরানার গানের এই শিল্পী আধুনিক আর লোকগীতিতেও মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদের।
বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান ‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’। এছাড়া ‘আম্মাজান’ ছবির শিরোনাম গানটিও পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। তবে সাফল্য পান ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’র মাধ্যমে।
বাচ্চুর গাওয়া- চলো বদলে যাই, শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি, ঘুম ভাঙা শহরে, হকার, সুখ, চলো বদলে যাই, রূপালি গিটার, গতকাল রাতে, তারা ভরা রাতে, এখন অনেক রাত, অবাক হৃদয় এবং আমিও মানুষ গানগুলো ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। ( সূত্রঃ হাসান তারিক, এসবিএস বাংলা ,অস্ট্রেলিয়া)