ফজলুল বারী:একজন তরুন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডক্টর কামাল হোসেন যেভাবে মারমুখো অশোভন প্রতিক্রিয়া দেখালেন টিভিতে এর ফুটেজ দেখে চমকে উঠেছি। তরুন একজন সাংবাদিককে আগামীতে দেখে নেবার হুমকি দিয়েছেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রনেতা! একজন তরুন সাংবাদিক শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক এবং সমসাময়িক রাজনীতির একটি প্রশ্ন করেছেন, আর ড কামাল তরুন সাংবাদিকের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পালটা জানতে চেয়েছেন এ প্রশ্ন করতে তিনি কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বা কারা টাকা দিয়েছে! দেশের প্রধান সব টিভি চ্যানেলের নিউজে ফুটেজটি আছে। এ হুমকিটি শুধু যমুনা টিভির তরুন একজন সাংবাদিককে না, দেশের সব সাংবাদিককে, দেশের সাংবাদিকতার উদ্দেশে এই হুমকি। সাংবাদিক নেতারা আশা করি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। চ্যালেঞ্জ করতে হবে কামাল হোসেনকে। তিনি যত বড় অথবা বুড়া হোননা কেনো এরজন্যে দেশের সাংবাদিকদের কাছে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। নতুবা ভাবতে হবে ঐক্যফ্রন্ট এবং ডক্টর কামাল হোসেনের খবর প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে। বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে তাকে বয়কট করতে হবে।
উপরের দিকে থু থু ফেলেছেন ডক্টর কামাল! তার মেয়ের জামাই ডেভিট বার্গম্যান এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের সাংবাদিক হিসাবে চিহ্নিত। উচ্চ আদালত কক্ষে কান্ডজ্ঞানহীনের মতো মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপরাধে বার্গম্যানকে একদিন আদালত কক্ষ থেকে বের দেয়া হয়েছিল। আর ডক্টর কামাল এখানে মেজাজ হারালেন জামায়াত ইস্যুতেই। জামায়াতের তিনি নতুন রক্ষাকবজ। শশুর-জামাই মিলে গেছেন এক জায়গাতে,
নিয়তের সমস্যার কারনে শুরুতেই এই ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের আচার আচরনে আমরা বারবার বেসামাল কায়কারবার দেখছি। একাত্তর টিভির একাত্তর জার্নালে এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষেপে গিয়েছিলেন আ স ম আব্দুর রব! তিনি এরশাদের গৃহপালিত বিরোধীদলের নেতা ছিলেন। এরশাদের পতনের রাতে তিনিও পালিয়ে গিয়েছিলেন। একাত্তর জার্নালে সাংবাদিক নজরুল কবির প্রশ্নটি করায় আ স ম রব ক্ষেপে গিয়ে জানতে চান নজরুলের বয়স কতো। একদা একজন দায়িত্বশীল ছাত্র নেতা ছিলেন আ স ম আব্দুর রব। তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্তে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাটি প্রথম তোলা হয়েছিল তার হাতে। কিন্তু রাজনীতিতে বেশ্যা শুধু এখন ব্যারিষ্টার মওদুদ না। রব-মান্না এরাও এখন মওদুদের প্রতিদ্বন্দ্বী। নানা জায়গা ঘুরে এখন বিএনপি-জামায়াতের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। সে কারনে একটি টিভি অনুষ্ঠানে মেজাজ হারিয়ে খারাপ ব্যবহার করেছেন একজন তরুন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। পতিত তারকারা যা করে। প্রিয় নজরুল কবিরের উদ্দেশে তখন লিখেছিলাম, আগামীতে এমন কেউ বয়স জিজ্ঞেস করলে বলবে আমরা ইতিহাস পড়ি। সবার ইতিহাস জানি। আপনি আ স ম আব্দুর রব যেমন প্রথম স্বাধীনতার পতাকা তুলেছেন তেমনি এরশাদের গৃহপালিত নেতাও হয়েছেন। মাঝে শেখ হাসিনার মন্ত্রীও হয়েছেন। সেখান থেকে বাদ পড়ার কারনে আপনি এখন নব্য বিপ্লবী! খালেদা জিয়া এখন আপনার নেত্রী! আর মীর মোশাররফ হোসেন যে বিষাদ সিদ্ধু উপন্যাস লিখেছেন এরজন্যে তিনি কারবালার ময়দানে ছিলেননা। ইতিহাস পড়লে কারও এমন কারবালার ময়দান বা তেমন কোথাও থাকা লাগেনা।
ঐক্যফ্রন্টের নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন চিহ্নিত বেঈমান। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে জমি নিয়ে হাসপাতাল করেছেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে কৃতঘ্নের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। চীনপন্থী বামদের সিংহভাগ অবশ্য এমন কট্টর আওয়ামী বিরোধীই হয়। বঙ্গবন্ধু অবশ্য এসব নিয়ে ভাবতেননা। সব মুক্তিযোদ্ধাকে সন্তান স্নেহে ভালোবাসতেন। আর র মতো লোকজন এর সুযোগ নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বাঁশ দিতেন। এরশাদ আমলে জাফরুল্লাহ ছিলেন এরশাদের ঘনিষ্ঠ। আর এখন বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা হওয়াতে জামায়াতেও তার কোন অরুচি নেই। এখন তার বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার খায়েশ হয়েছে! নিজেকে দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধিজীবী ভাবেন! একটি টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ সম্পর্কে অসত্য তথ্য দেবার পর সেনাবাহিনীর ক্ষোভ চাপা দেবার আশায় কয়েক দফা ক্ষমা চান। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি টিভি অনুষ্ঠানে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনকে প্রশ্ন করেছিলেন। মইনুল এরজন্যে প্রথমে মাসুদা ভাট্টিকে হুমকি দিয়ে বলেন তাকে এ ধরনের প্রশ্ন করার মাধ্যমে তিনি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন! এরপর একজন নারী সাংবাদিককে অকল্পনীয় ধৃষ্ট উচ্চারনে বলেন, তিনি চরিত্রহীন! ১/১১’র সামরিক সরকারের দালাল, মানিক মিয়ার এই কুপুত্রটি ইত্তেফাকের মালিকানায় থাকতে ইত্তেফাক ভবনে ঢুকে এর সাংবাদিকদের সঙ্গে কিভাবে চামারের মতো ব্যবহার করতেন তা ওয়াকিফহালরা জানেন। টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে এসেও তার চরিত্র পাল্টাতে পারেননি। মাসুদা ভাট্টিকে অপমান করার ফল তিনি পেয়েছেন। সারাদেশ জুড়ে ছি ছি রবের মুখে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মতলবী জোটটির সর্বশেষ চেহারা প্রকাশ পেলো এর পালের গোদা নেতা ডক্টর কামালের মেজাজ হারানোয়। যিনি গনতন্ত্র-মানবাধিকার-জনগনের অধিকার-মালিকানা-মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেন! আর প্রশ্ন করলে হুমকি দিয়ে বলেন আগামীতে দেখে নেবেন! কত টাকা নিয়ে তাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছে! ডক্টর কামালের এমন ক্ষেপে যাবার অবশ্য যৌক্তিক কারন আছে। যা যা বলে তিনি চলতি জোট করেছেন এর একটির অস্তিত্বও এখন নেই। কিন্তু তার আর যাবার কোন জায়গা নেই। প্রথম বলেছিলেন তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্ক থাকবেনা। কিন্তু জোটের প্রধান দল বিএনপি তার কথা শোনেনি। নিবন্ধনহীন যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে তারা ঐক্যফ্রন্টের চেয়ে বেশি আসন দিয়েছে। জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীক দেবার সময় নির্বাচন কমিশনে চিঠি লিখে বলেছে তাদের দলের নাম বিএনপি!
অর্থাৎ যাহা জামায়াত তাহাই বিএনপি। যাহা জামায়াত তাহাই তাদের কাছে ডক্টর কামাল! কারন জামায়াতের মতো ডক্টর কামালের দলকেও তারা সাতটি আসন দিয়ে প্রতীক দিয়েছে ধানের শীষ! জোট গঠনের সময় ডক্টর কামাল বলেছিলেন তারেকের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবেনা। তারেক সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘লন্ডনে বসে কী করছেনা করছে’! তারেক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের আইনে পলাতক এবং বাংলাদেশের নাগরিকত্ব-পাসপোর্ট ত্যাগ করে লন্ডনে বসবাস করছেন। সেখান থেকে স্কাইপেতে সাক্ষাৎকার নিয়ে দলের প্রার্থী ঠিক করেছেন। ডক্টর কামালের দলকে কয়টি আসন দেবেন না দেবেন এ সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তারেক। এটিই স্বাভাবিক। কারন ডক্টর কামালের দলে কোন লোকজন নেই। ধানের শীষ যে তারেক তাকে দিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের ভোট নিয়েই ডক্টর কামালের লোকজনকে জিততে হবে। কারন ডক্টর কামালের দলের কারো বাংলাদেশের কোথাও একটি ওয়ার্ড কমিশনার পদে জয়ের মতো নিজস্ব ভোটার শ্রেনী নেই। কাজেই বিএনপির কাছে তারা জামায়াতের মতোই আরেকটি শাখা। সে কারনে যুদ্ধাপরাধীদের দল, বুদ্ধিজীবীদের খুনি জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন করলে ডক্টর কামাল ক্ষেপবেন এটিই এখন স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি মাত্রা অতিক্রম করেছেন। এর মাশুল তাকে দিতে হবে। এবং তিনি দেবেন। এই ডক্টর কামালকে বয়কট করতে হবে। ইয়াহিয়ার মতো জানোয়ার বলে তাকে হত্যা করতে বললামনা। যদিও শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই তার এখনকার আল্টিমেইট লক্ষ্য। কারন এই ভোটে তিনি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেননা। অমুক অমুকের ঘাড়ে চড়ে বসে সব শিকারি শিকার করতে পারেনা।