ফজলুল বারী:দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থীদের নিয়ে কুড়ি বছর আগে ‘রক্তাক্ত জনপদ’ শিরোনামে আমার একটি সিরিজ রিপোর্ট জনকন্ঠে ধারাবাহিক ছাপা হয় ১৯৯৯ সালে। ওই রিপোর্টের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে চরমপন্থীদের আত্মসমর্পনের ব্যবস্থা-অনুষ্ঠান হয়। আওয়ামী লীগ তখনও ক্ষমতায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে আমাকে সঙ্গে নিয়ে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমার ওই রিপোর্টের করুন দিকটি ছিল এর প্রতিক্রিয়ায় যশোরে জনকন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি, সাংবাদিক শামছুর রহমানকে হত্যা করা হয় ২০০০ সালের ১৬ জুলাই। কারন চরমপন্থীদের গডফাদাররা নিশ্চিত হয়েছিল ওই রিপোর্টের পিছনে শামছুর রহমানের সহায়তা ছিল। তাঁর সহায়তা ছাড়া এ ধরনের একটি সিরিজ রিপোর্ট করা আমার পক্ষে সম্ভবও ছিলোনা। কুড়ি বছর পর ৯ এপ্রিল আবার একটি আত্মসমর্পন হলো পাবনায়। এরমানে দাঁড়ায় সরকার স্বীকার করে নিয়েছে তাদের পূর্ববর্তী আত্মসমর্পন যজ্ঞ স্বত্ত্বেও দেশের চরমপন্থা সমস্যার অবসান হয়নি।
কিন্তু ওই অঞ্চলে খোঁজ নিতে গিয়ে একটি তথ্যে চমকে উঠেছি। আসলেই দেশে এখন মোটা দাগের চরমপন্থা সমস্যা নেই। সেটি এখন ধর্মীয় জঙ্গী সমস্যায় রূপান্তর নিয়েছে। পাবনায় যাদের আত্মসমর্পন করা হয়েছে তারা আসলে চরমপন্থী নামের কিছু ছিঁচকে সন্ত্রাসী। সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে তারা বেঁচে বর্তে ছিল। পরিবর্তিত নানা পরিস্থিতির কারনে ওই নেতারা তাদের আর লালনপালনে নারাজ। তারাই এদের পূনর্বাসনের নামে আত্মসমর্পনের ব্যবস্থা করেছেন। সরকার এ রকম আরেকটি অনুষ্ঠান করলো, কুড়ি বছরেও সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যাকান্ডের বিচার করলোনা। সেই হত্যাকান্ডের পর বিবিসির রিপোর্টে সাংবাদিক শামছুর রহমানকে বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের চলমান কম্পিউটার হিসাবে উল্লেখ করেছিল।
শামছুর রহমান তার ডায়েরিতে লিখে গিয়েছিলেন বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র করেছেন। তদন্তে পাওয়া গেলো তরিকুল ইসলাম ও চরমপন্থীদের ঘনিষ্ঠ যশোরের কয়েকজন সাংবাদিকও হত্যা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু চার্জশীটে তরিকুল ইসলামকে আসামী করা হয়নি। মিজানুর রহমান তোতা, ফকির শওকতসহ কয়েকজন সাংবাদিক, তরিকুল ইসলামের দেহরক্ষী পাগলা সেলিম সহ ১৬ জনকে আসামী করে হত্যা মামলার চার্জশীট দেয়া হয়। তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার তরিকুল এই মামলার সব আসামীকে জামিনে মুক্ত করেন। দিল্লীতে গ্রেফতারকৃত তরিকুল ইসলামের দেহরক্ষী পাগলা শহীদকে গ্রেফতারের পর খুশি খুশি দিল্লী পুলিশের এক কর্মকর্তা জনকন্ঠ অফিসে ফোন করে জানতে চান এতবড় এক খুনিকে ধরতে কোন পুরষ্কার ঘোষনা করা হয়েছিল কিনা। পুরষ্কার ঘোষনা হয়নি শুনে তিনি নিরাশ হন। পাগলা সেলিমকে উল্টো দেশে এনে ব্যবস্থা করা হয় তার নিরাপত্তার। পরে তাকে আবার ভারতে কৌশলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গে বিয়ে করে থাকতে থাকতে সে সেখানকার নাগরিকত্বও পেয়ে গেছে। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী আবার রাষ্ট্রক্ষমতায়। শামছুর রহমানের দুই মেয়েকে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অর্থনৈতিক সুবিধা দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু হত্যাকান্ডের বিচার করার উদ্যোগ নেয়নি রাষ্ট্রের আইন কর্তৃপক্ষ।
নব্বুইয়ের দশকের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরমপন্থীদের একটি অংশের সঙ্গে আমার একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গোপন চরমপন্থী দল পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল হক ঢাকায় গোপনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। টিএসসিতে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হয়। এ উপলক্ষে সারাদেশ থেকে চরমপন্থী সংগঠনগুলোর নারী-পুরুষ নেতাকর্মী-সমর্থকদের নজিরবিহীন ঢল নামে টিএসসিতে। ছোটবড় লালপতাকায় ছেয়ে গিয়েছিল গোটা টিএসসি এলাকা। আমি এর আগে কখনো এমন একজন বামপন্থী নেতার (তাও আবার গোপন চরমপন্থী দলের অন্যতম শীর্ষ নেতার) এ ধরনের শেষকৃত্য দেখিনি। ভয় এড়িয়ে এভাবে গোপন সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী-সমর্থকদের ঢল আগে কখনো দেখিনি ঢাকায়। তখনও চরমপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের এক ধরনের রাজনীতি ছিল। ভুল যেটা ছিল তা পদ্ধতির। শ্রেনী শত্রু ক্ষতমের নামে মানুষ খুন করা। এটি এক পর্যায়ে এদের কারো কারো চিন্তায় গিয়ে পৌঁছে টাকা না দিলে খুন। এর কারনে গ্রামের মানুষ এদেরকে ভয় পেতো। কিন্তু আব্দুল হকের শেষকৃত্যে যারা এসেছিলেন, তাদের পোশাক-চেহারা দেখেই চিহ্নিত করা যাচ্ছিল এরা গ্রামের মানুষই। তাদের ঢল দেখে দ্বন্দে পড়ে গিয়েছিলাম শহরে বসে সব খবর আমরা পাইতো? লাল পতাকা নামিয়ে স্যালুট দিয়ে শেষ হয় সেই শেষকৃত্য।
আব্দুল হকের শেষকৃত্যের বিবরনীমূলক আমি একটা ফিচার রিপোর্ট লিখেছিলাম। জনকন্ঠে সেটি পড়ে একদিন এক আগন্তুক আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে বলেন রিপোর্টটি পড়ে তাদের ভালো লেগেছে। দলের পক্ষে কৃতজ্ঞতা জানাতে তাকে পাঠানো হয়েছে। বুঝতে পেরে তাকে আমি তার নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করিনি। জিজ্ঞেস করলে হয়তো সঠিক উত্তরও পাওয়া যেতোনা। চরমপন্থী সংগঠনের এই তরুন নেতা মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। তার কাছে চরমপন্থী সংগঠনগুলোর নানান আপডেট রিপোর্টও পেতাম। সেই সময়ে অন্য অনেক রিপোর্টারদের জন্য ছিল বিশেষ এক প্রাপ্তি। সোর্সের গোপনীয়তা রক্ষায় আমি সেই সোর্স নেতাকেও গোপন রাখতাম।
চরমপন্থী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ঢালাও একটি অভিযোগ ছিল তারা চাঁদাবাজি করে। মানুষ জবাই করে চাঁদা না পেলে। কিন্তু আমার এই বিশেষ সোর্সটির একটি আকুতি আমাকে স্পর্শ করেছিল। একবার তিনি আমার কাছে কিছু পুরনো কাপড় চেয়ে বলেন তাদের অনেক সদস্যের একটা মাত্র পোশাক, শার্ট বা পেন্ট। শীতে তারা খুব কষ্ট পায়। আমি যদি তাদের জন্যে কিছু পুরনো কাপড় জোগাড় করে দেই তাদের খুব উপকার হবে। আমি তার সেই অনুরোধ রেখেছি। নিজের বাসা থেকে এবং পুরনো কাপড়ের বাজার থেকে বেশ কিছু শার্ট-পেন্ট কিনে প্যাকেট করে অফিসে রেখে দিয়েছিলাম। একবার এসে প্যাকেটটি নিয়ে যাবার সময় তার চোখে আমি পানি দেখেছি। এটা নিয়ে আমি কখনো কোন রিপোর্ট লিখিনি। কিন্তু যে বোধটি সৃষ্টি হয় তাহলো চরমপন্থী মানেই সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ নয়। ব্যতিক্রমও আছে। আবার চরমপন্থী সংগঠন নিষিদ্ধ হওয়াতে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে তাদের সবাই অপরাধী।
পাকিস্তান আমলে যখন সমাজতন্ত্রের নামে রাজনৈতিক দল করা নিষিদ্ধ ছিল তখন বর্তমান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে শুরু করে নানা নাম ব্র্যাকেটের সমাজতান্ত্রিক দলগুলো এ অঞ্চলে গোপনে রাজনৈতিক দল গঠন এবং এর কার্যক্রম শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সিপিবি, এর সমমনা দল মাওলানা ভাসানী এবং অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপের উভয় অংশ, অনুসারী সংগঠন উদিচী শিল্পী গোষ্ঠী, ছাত্রইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। আবার ভারতের নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রভাবে গড়ে বেশ কিছু চরমপন্থী দল-গোষ্ঠী ভারতে না গিয়ে দেশের বিভিন্ন দূর্গম অঞ্চলে থেকে অংশ নেয় মুক্তিযুদ্ধে। সাম্রাজ্যবাদী দুই কুকুরের লড়াই উল্লেখ করে চীনপন্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক গোপন দল-গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর মনি সিংহের নেতৃত্বাধীন সিপিবি প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে এলেও সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বাধীন সংগঠন সহ কয়েকটি দল-গোষ্ঠী গোপনই থেকে যায়। রাশেদ খান মেনন-হায়দর আকবর খান রনোর নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হলে টিপু বিশ্বাসের নেতৃত্বে গোপন একদল রাজনৈতিক নেতাকর্মী এ দলটিতে এসে যোগ দেয়। এদের কেউ কেউ পরে আবার গোপন সংগঠনে ফিরেও যায়।
সিরাজ শিকদার নিহত হবার পর গোপন দল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নানা ভগ্নাংশের তাত্ত্বিক নেতা হন আব্দুল হক এবং মোফাখখার আহমেদ চৌধুরী, টিপু বিশ্বাস প্রমুখ। স্বাধীনতার পর থেকে গোপন দলগুলোর বিরুদ্ধে সরকারগুলোর অব্যাহত সাঁড়াশি অভিযানে ছত্রখান হয় এসব দল। নিজেদের দ্বন্দ্বে-খুনোখুনিতেও দলগুলো দিনে দিনে শক্তিহীন হয়। অনেকে জড়িয়ে পড়ে চাঁদাবাজিতে। রাজনৈতিক শ্রদ্ধা হারিয়ে দেশের আমজনতার কাছে চরমপন্থী দলগুলোর সাধারন নাম হয় এগুলো চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী দল। এ অবস্থায় গোপন চরমপন্থী দলগুলোর সর্বশেষ গ্রহনযোগ্য তাত্ত্বিক নেতা মোফাখখার আহমদ চৌধুরী দল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ঢাকার মগবাজার এলাকার এক ভাড়াবাসায় গোপন অবসর জীবন কাটাচ্ছিলেন। গত বিএনপি আমলে সদস্যরা তাকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে কুস্টিয়া এলাকায় ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে। আগেই মারা গিয়েছিলেন আব্দুল হক।
‘রক্তাক্ত জনপদ’ শিরোনামে চরমপন্থী সংগঠনগুলো নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে আমি এদের রাজনৈতিক ছত্রছায়া দেখেজেনে চমকে উঠি। যশোরের হাসান সহ আরও কিছু দুর্ধর্ষ চরমপন্থীকে ছত্রছায়া দিতেন বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম। জিয়ার আমলে নওগার আলমগীর কবীর সহ আরও অনেক চরমপন্থী যোগ বিএনপিতে। চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা আবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ছত্রছায়ার নেতাও পাল্টাতো। যেমন কুষ্টিয়ার সিরাজ বাহিনীর সিরাজকে ছত্রছায়া দিতেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ। চুয়াডাঙ্গার দুর্ধর্ষ লাল্টু বাহিনীর লাল্টুর ছত্রছায়া ছিলেন সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান জোয়ার্দার ওরফে সেলুন মিয়া। অবাধ্য শিকারকে মেরে টুকরো টুকরো করে আফ্রিকান মাগুর মাছের খামারে ফেলে দিতো সিরাজ। লাশের কোন প্রমান থাকতোনা। এভাবে লাশের প্রমান না রাখতে লাল্টু বাহিনী লাশ ফেলে দিতো জ্বলন্ত ইটভাঁটিতে। সিরাজ বাহিনী নিয়ে যখন রিপোর্ট করি তখন মাহবুবুল আলম হানিফ কুষ্টিয়ার নেতা। সিডনিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন ব্যারিষ্টার আমির উল ইসলামের রেফারেন্সে তিনি জনকন্ঠ অফিসে আমার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তার প্রতিবাদটি ছাপার ব্যবস্থা করাতে তখন তার খুব উপকার হয়েছে।
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাডার নেতা শিমুল ধরা পড়ার পর পুলিশকে দেয়া ১৬১ ধারার জবানবন্দীতে জানায় তাদের অস্ত্র তারা খুলনার যুবলীগ নেতা লিটুর কাছে জমা রাখে। লিটু তখন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার। আগে যুবদল করলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুবলীগ হয়ে যায়। শিমুলের জবানবন্দী সম্পর্কে লিটুর বক্তব্য নিতে ফোন করলে সে সেই রাতেই জনকন্ঠ সম্পাদকের খুলনাবাসী এক বোনকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাকে দিয়ে ফোন করায় যাতে রিপোর্টটি ছাপা না হয়। ‘আতংকিত খুলনা’ শিরোনামের সিরিজটি ছাপা শুরু হলে লিটু বারবার ফোন দিয়ে মিনতি করে বলতো, বারী ভাই এখন থেকে আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবে চলবো। দাপুটে লিটুকে খুলনায় সবাই বলতো লিটু সাহেব। তার ফোনের জবাবে বলি, কী বলেন এটা, আপনি আমার কথায় চলবেন!
রিপোর্ট বন্ধ হচ্ছেনা দেখে লিটু একটা দল পাঠায় ঢাকায়। টাকা অথবা খুন যে কোনভাবে রিপোর্ট বন্ধ করতে হবে। ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডের যে গলিতে আমি থাকতাম সে গলিতে যুবলীগের ক্যাডার নেতা লিয়াকত থাকতো বলে অনেকে সে গলিকে লিয়াকতের গলি হিসাবে জানতেন। ইস্কাটনে খুন করতে লিয়াকতের অনুমতি লাগতো। লিটুর দল লিয়াকতের কাছে প্রস্তাব নিয়ে গেলে তা নাকচ হয়ে যায়। উল্টো তাদের হুমকি দিয়ে বলা হয় আমার এলাকায় কোন সাংবাদিক খুন করা চলবেনা। এরপর এই গ্রুপ আমার এক রিপোর্টিং বসকে টাকায় ম্যানেজ করে ফেলে। আমাকে তিনি ডেকে বলেন, অফিসের সিদ্ধান্ত এই রিপোর্ট আর যাবেনা।
যশোরে শামছুর রহমান ভাইকে ফোন করে বললে তিনি বলেন, সর্বনাশ এই রিপোর্ট বন্ধ হলে পত্রিকার বদনাম হবে। তিনি তখন জনকন্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট যাবার ব্যবস্থা করেন। রিপোর্ট বন্ধের প্রতিশ্রুতিতে যিনি টাকা খেয়েছিলেন তিনি লিটুকে ফোন করে বলেন, রিপোর্ট আমি বন্ধ করেছিলাম, শামছুর রহমানের কারনে তা আবার যাচ্ছে। রিপোর্ট বন্ধে যে দল ঢাকায় এসেছিল সেই দলটি চলে যায় যশোরে। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই। সন্ধ্যা রাত। যশোর জেলরোডের এক ভবনে পাশাপাশি ইনকিলাব এবং জনকন্ঠের অফিস। ঘাতক দলটি অপেক্ষা করতে থাকে ইনকিলাব অফিসে। জনকন্ঠ অফিস ফাঁকা হতেই সে কক্ষে ঢূকে বলে তারা একটি রিপোর্ট নিয়ে কথা বলতে এসেছে। শামছুর রহমান তাদের বসতে বলেন। বসতে বসতে তারা ব্যাগ থেকে অস্ত্র বের করে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় দেশের একজন সেরা সাংবাদিকের। আজ পর্যন্ত সেই হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি।
কিন্তু সেই লিটু আর কোনদিন স্বস্তি পায়নি। পত্রিকার রিপোর্টের মাধ্যমে আমরা সর্বক্ষন তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছি। RAB এর হাতে ক্রসফায়ারে মারা যাবার আগ পর্যন্ত সে তাড়নার মধ্যেই ছিলো। এবার নতুন আত্মসমর্পনের খবর নিতে গিয়ে জানতে পারি গত কয়েকবছর ধরে চরমপন্থীদের সন্ত্রাস নিয়ে কোন রিপোর্টও হয়না। গত কয়েকবছরে RAB-পুলিশের ক্রসফায়ারে প্রান হারিয়েছে ৪-৫শ চরমপন্থী। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির ধরা পড়া ক্যাডার নেতা শিমুলের আত্মীয়স্বজন ছিলেন পুলিশের গুরুত্বপূর্ন পদে। তারা শিমুলকে জেল থেকে বের করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। কুষ্টিয়ার সিরাজ, চুয়াডাঙ্গার লাল্টুও এখন ব্যবসায়ী ভদ্রলোক! দেশেবিদেশে যাওয়া আসা করে। পাবনায় আত্মসমর্পনের সময় বলা হয়েছে আগে যারা আত্মসমর্পন করেছিল তাদের অনেককে আনসার বাহিনীতে চাকরি দেয়া হয়েছিল তারা বাহিনীতে না থেকে আবার গোপন দলে ফিরে গিয়েছিল। যারা চাঁদাবাজির মাধ্যমে ভালো টাকাপয়সা রোজগারে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল তারা স্বল্প বেতনে আনসারে থাকবে কেনো। তাই আমার মতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সরকারি ঋন দিয়ে তাদেরকে ক্ষুদ্র ব্যবসায় উৎসাহিত করা যাতে পারে।