মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিশীলতায় উচ্চাশা ব্যক্ত করেছেন অস্ট্রেলিয়ান বিশ্লেষকরা। গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড, মেলবোর্ন ও ক্যানবেরার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। গত এক দশকে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাফল্যের সুবাদে তারা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রত্যাশার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বাংলাদেশকে উপজীব্য করে বিশ্লেষক, গবেষণা ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা অস্ট্রেলিয়ায় এটাই প্রথম।
মেলবোর্ন ল স্কুলে অনুষ্ঠিত সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ হাইকমিশন, ক্যানবেরা এবং মেলবোর্নভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডেভেলপমেন্ট (সিপিড)। সেমিনারটি দু’টি সেশনে বিভক্ত ছিল। প্রথম সেশন ছিল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের উদীয়মান মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো এবং অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের অংশীদারীত্বে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ভূমিকা। দ্বিতীয় সেশনটি ছিল এশিয়া অঞ্চলে জোরপূর্বক অভিবাসনের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব ও আঞ্চলিক পর্যায়ে গৃহীতব্য পদক্ষেপ।
সেমিনারে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নিউ জিল্যান্ডের সাবেক মন্ত্রী এবং জাতিসংঘের রোহিঙ্গা বিষয়ক উপদেষ্টা ক্রিস কার্টার, ইউএনএইচসিএইচ- এর সাবেক সহকারী হাইকমিশনার এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সহকর্মী এরিকা ফেলার, সিপিডি-র নির্বাহী পরিচালক ট্রেডার মেকলিয়ড, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট ডিন নিকোলাস ফেরাললী এবং অস্ট্রেলিয়ান ডিএফএটি-এর সহকারী সচিব এন্ডেুা কলিনসহ প্রায় ৩০ জন বিশ্লেষক।
বাংলাদেশ হাইকমিশনার সুফিউর রহমান সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে তিনি গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তুলে ধরেন। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশের দ্রুত এবং স্থিতিশীল অগ্রগতির কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান বিশ্লেষকদের ‘বাংলাদেশ’ নিয়ে নিবিড় অধ্যায়নের আহ্বান জানান। বাংলাদেশ কিভাবে সাহায্যনির্ভর দেশ থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে বাণিজ্যিক অংশীদার হবার ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছে তার বিস্তারিক ব্যাখ্যা দেন।
তিনি অদূর ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাব্যতা ব্যাখ্যা করেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে বাণিজ্যিক ও আর্থিক সহায়তার বাইরে অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি কাজ এবং কৌশলগত সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সেমিনারের দ্বিতীয় অংশে আলোচকরা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অভিবাসন এবং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা একমত হন যে, এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে সকলের দায়িত্ব ও সমন্বিত প্রচেষ্টার অবকাশ রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব ও নিরাপত্তাহীনতা দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও আরও দূরে অস্ট্রেলিয়ার মত দেশেও কিভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়। (সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন)