ফজলুল বারী:শুক্রবার সারাদিন দেশের যত মিডিয়ার অনলাইনের পাতা-পর্দা দেখেছি একটাই শিরোনাম মাথায় এসেছে আওয়ামী লীগ হাসছে। কারন সফল একটি সম্মেলন উপস্থাপনের মাধ্যমে সবাইকে যে বার্তাটি আরও জোরেসোরে দিয়েছে তাহলো, আওয়ামী লীগকে মোকাবেলার কোন রাজনৈতিক শক্তি দেশে নেই। আপনার এতে কোন দ্বিমত আছে? থাকতেই পারে। এটি আপনার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার। আবার আপনি পছন্দ করেন আর না করেন, মানেন আর না মানেন, আসল সত্য এ দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এবং এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচাইতে বড় রাজনৈতিক ঘটনা। আজকের প্রজন্মের অনেককেও মাঝে মাঝে বলতে শুনি কোন দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। তাদের ভুল শেখানো হয়েছে। মুজিবনগর সরকার শপথ না নেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোন সংঘটিত রূপ পায়নি। বাংলাদেশের জন্ম সম্পর্কে ভুল জায়গায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগকে কেউ মোকাবেলা করতে পারেনা এবং পারবেওনা।
এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রধান দলটি দেশের জাতির পিতার খুনিদের দল। বাংলাদেশকে স্বাধীন করা দলটি যাতে আর কোনদিন বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে এর প্রধান নেতা তথা বাংলাদেশের জাতির পিতা সহ প্রধান সব নেতাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। আইন করা হয়েছিল ঘৃণ্য এই হত্যাকান্ডের বিচার করা যাবেনা। খুনিদের দলটির মুখোশ আজ জনগনের সামনে প্রকাশিত। সে কারনেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচন বাংলাদেশকে বদলে দেবার পথ করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা এক সময় বলার চেষ্টা করতো সেনাবাহিনীতে আওয়ামী লীগ মোটেই জনপ্রিয় সংগঠন না। বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার সর্বশেষ একটি চেষ্টাও হয়েছে। সব অলীক আশা মাড়িয়ে দাপটেই ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের শক্ত গাঁধুনির পাশাপাশি সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন সব জায়গায় এখন আওয়ামী লীগ সরকারের শক্ত অবস্থান। কতিপয় মাঝে মাঝে এখানে ধাক্কা দেবেন ভাবেন। ভাবনা পর্বেই তারা দম হারান। কেনো হারান, তা এখানে লিখবো।
এবারের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সূচনা পর্বের গীতি আলেখ্য-নৃত্য নাট্য মুগ্ধ করেছে। চমৎকার গাথুঁনি। বাংলাদেশের যা যা সত্য বলা সম্ভব তা আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার সময় তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আমি নিবিড়ভাবে খেয়াল করি। নিজের কাজে আস্থাশীল-আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষেরই এমন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ হয়। সম্মেলনের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আহামরি নতুন কিছু বলেননি। আওয়ামী লীগ যা তাই বলেছেন। আওয়ামী লীগ বিরোধীরা যা তাই বলেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের পরতে পরতে বাঙালির প্রয়োজনে বিকাশ ঘটেছে আওয়ামী লীগ নামের সংগঠনের। আওয়ামী লীগের বিকাশ মানে বঙ্গবন্ধুর জীবন। যেটাকে শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতায় বসে গড়া কোন সংগঠন আওয়ামী লীগ না। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট চেটে খেতে জমায়েত হওয়া লোকজনের সংগঠন আওয়ামী লীগ না। আওয়ামী লীগকে প্রতিদিন যারা ফেলে দেবার খোয়াব দেখেন এখানেই তাদের ভুল। তারা একটা জেনারেলের দলে গিয়ে যোগ দিয়েছিলেন। তারা নানা দলের ব্যর্থ লোকজন একজন ক্ষমতা দখলকারী জেনারেলকে ভাবেন গণতন্ত্রের সক্রেটিস! এদের একটাই লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগকে ব্যর্থ প্রমান করা। উল্টো জনগণের মাঝে প্রতিষ্ঠিত তারাই ব্যর্থ।
আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে জামায়াত ছাড়া গত সংলাপের দলগুলোকে দাওয়াত করা হয়েছিল। তারা যাননি। তারা ভুল করেছেন। বিএনপির দরকার ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যে সরকারি দলের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক-সামাজিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার। বিএনপি একটি সুযোগ পেয়েছিল। কাজে লাগালোনা। আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের মাধ্যমে কাবু করার সামর্থ্য বিএনপির নেই। এসব দমহারানো নেতৃত্ব আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানাতেও অক্ষম। বিএনপির কিছু ব্যক্তি বলার চেষ্টা করেছেন খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে তারা এভাবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যেতে পারেনা। খালেদা জিয়াতো জেল নামের হাসপাতালের ভিভিআইপি কেবিনে গৃহকর্মী ফাতেমা সহ আছেন। কিন্তু শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ডক্টর কামাল হোসেন দেশে ফেরার পর রবগং সহ সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সম্মেলনে যাবেননা! আপনারাতো এই সংসদে যাবেননা বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দল-জনহীন পরিত্যক্ত মানুষেরা মিলে আপনারা কি করতে পারেন তা এরমাঝে দেশের মানুষ ঢের জানে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে না গিয়ে সো-কল্ড ইজ্জতওয়ালারা নিশ্চিত করলেন দেশের রাজনীতির গুনগত পরিবর্তন তাদের দিয়ে হবেনা।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গোটা আওয়ামী লীগ দলটি ক্ষমতার খোলস থেকে বেরিয়ে নাড়া দিয়ে ঢাকায় এসেছে। ক্ষমতাসীন দলের সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে সংগঠিত সম্মেলন যদি দলটি কাজে লাগাতে পারে তাতেই হবে দলের মঙ্গল। এ দলটি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সততা এবং পরিশ্রমী নেতৃত্বের কারনে চলতি উচ্চতায় দাঁড়িয়ে। কত দাপুটে লোকজনকে সম্মেলনের আশেপাশে ভিড়তে দেয়া হয়নি। শেখ হাসিনার বক্তৃতায় আভাস দিয়েছেন দলের চোর-চোট্টাদের তিনি দাবড়েই চলবেন। এটিই এখন পর্যন্ত এই সম্মেলনের মূল ম্যাসেজ। আওয়ামী লীগের শাসনে গণতন্ত্রে ঘাটতি আছে। কারন গণতন্ত্রে মাঠে-ময়দানের সব জায়গাতে গণতান্ত্রিক দল-ব্যক্তিও লাগে। এটা আওয়ামী লীগে যতোটা আছে প্রতিপক্ষ একটা শিবিরেও নেই। বিএনপি দোকানের মালিক খালেদা পরিবার। ডক্টর কামাল-রব-মান্না সবাই যার যার দলের আমৃত্যু নেতা। গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্থিতি-অগ্রগতির স্বপ্ন বাংলাদেশের। এটি এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে টেকসই গণতন্ত্রের জন্যে সবার অংশগ্রহন নিশ্চিত করা লাগবে। আওয়ামী লীগ হাসছে। কারন আওয়ামী লীগকে ধংস করা যায়নি। জাতির পিতার সমকক্ষ কেউ হবেনা। শেখ হাসিনার প্যারালাল নেতৃত্ব বাংলাদেশে নেই। আওয়ামী লীগ হাসছে সে কারনেই।