গত রবিবার (২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০) অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সাথে মেলবোর্ন বাংলা স্কুল ও মেলবোর্ন বাংলাদেশি কম্যূনিটি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘জাতীয় শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপন করা হয়।
শুরুতেই অতিথিবৃন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ও অভিভাবকদের নিয়ে অমর একুশে উপলক্ষে আয়োজিত শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, চিত্রশিল্পী হাসিনা চৌধুরী মিতা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন ও তাদের মাগফিরাতের জন্যে দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেলবোর্ন বাংলা স্কুলের অধ্যক্ষ ও মেলবোর্ন বাংলাদেশি কম্যূনিটি ফাউন্ডেসনের সভাপতি জনাব মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক। তিনি স্কুলের শিক্ষার্থী ও অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সামনে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, ভাষা রক্ষায় এর প্রয়োজনীয়তা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এর ভূমিকা, ইত্যাদির উপর আলোকপাত করেন ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে ভাষা শিক্ষার উপর গুরুত্ত আরোপ করেন। উনি সমাজ ও দেশের স্বার্থে করা মেলবোর্ন বাংলাদেশি কম্যূনিটি ফাউন্ডেসনের উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড সবার সামনে তুলে ধরেন ও মেলবোর্নে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ও মেলবোর্ন বাংলা স্কুলের উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের জন্যেএরপর অমর একুশের উপর এক প্রামান্য চিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের উইলস অঞ্চলের ফেডারেল এমপি পিটার খলিল, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় মোরল্যান্ড সিটি কাউন্সিলের সন্মানিত মেয়র ল্যাম্ব্রোস টাপিনোস ও কাউন্সিলর স্যু বোল্টন। তারা ব্যাক্তি ও সামাজিক জীবনে মাতৃভাষা শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বাংলা ভাষার ইতিহাস জানতে পেরে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ভাষা ও জীবনের সংগ্রামের সাথে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তুলনা করেন। তারা তাদের ছোটবেলায় ইংরেজীর পাশাপাশি আরবী, ইটালিয়ান ইত্যাদি ভাষা শিক্ষার কথা স্মরন করেন। স্থানীয় পাঠাগারে বাংলা বই সরবরাহ ছাড়াও ভবিষ্যতে বাংলা ভাষা শিক্ষা ও বাংলাদেশী কম্যূনিটির সবধরনের সাহায্যে এগিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আস-সিরাজ এরাবিক স্কুলের অধ্যক্ষ মাজিদা আলি, ও থাই ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের অধ্যক্ষ নামটিপ স্যাংমুরাং ম্যুর। তারা বলেন, যে কোন জাতির ঐতিহ্য ধরে রাখতে বা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে সেই জাতির মাতৃভাষার বিকল্প নাই। তাই মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদার সাথে গুরুত্ব সহকারে বাচ্চাদের শিক্ষা দিতে হবে।
মেলবোর্ন বাংলাদেশি কম্যূনিটি ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেস্টা জনাব ড. মাহবুব আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন রক্ত ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না তেমনি মাতৃভাষা ছাড়া কোন জাতি বাঁচতে পারেনা। তিনি আরও বলেন, আজ ২১ শে ফেব্রুযারী (অন্তর্র্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) সারা বিশ্বের প্রতিটি জাতিকে তাদের মাতৃভাষাকে মূল্যায়ণ ও সংরক্ষনের তাগিত দেয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট জিপি ড. আবুল কাসেম, অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ ইসলামিক কাউন্সিলের সভাপতি জনাব আবু জাফর মোহাম্মাদ আলী, এমবিসিএফের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ কবির হোসেন, চিত্রশিল্পী হাসিনা চৌধুরী মিতা, প্রমুখ।
এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অতিথি স্কুল আসসিরাজ এরাবিক স্কুল ও থাই ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। এরপর তাদেরকে ফুল দিয়ে সন্মানিত করা হয়। সম্মিলিত জাতীয় সঙ্গীত ও অমর একুশের গান গেয়ে শোনায় মেলবোর্ন বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও অতিথি বৃন্দ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করে ও গান গেয়ে শোনায় মেলবোর্ন বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক বৃন্দ। তাদের মধ্যে সুমাইয়া হক, সাদ ইবনুল হক, মানহা মাহবুব, জাফির রায়িদ, আয়েশা বিনতে আফতাব, আরিশা বিনতে আফতাব, ইফতেখার আহমেদ, নেহান রানা, আরাশ রানা, সুমাইতা, মাহরুশ ও জারির উল্লেখযোগ্য।
এরপর শুরু হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। পুরস্কার বিতরন করেন ফেডারেল এমপি পিটার খলিল। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ছোটদের মধ্যে প্রথম হয় আরাশ, দ্বিতীয় হয় সুমাইতা, ও তৃতীয় হয় আরিশা। বড়দের মধ্যে প্রথম হয় সাদ, দ্বিতীয় হয় নেহান এবং তৃতীয় হয় সুমাইয়া হক। তাছাড়া চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে সার্টিফিকেট ও বিভিন্ন পুরস্কার দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানের শেষে সবাইকে অনুষ্ঠানে আসার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন জনাব মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক। সার্বিক তত্তাবধানে ছিলেন মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক, ড. মাহবুবুল আলম, কবির হোসেন, মিতা পারভীন, জোবাইদা আলী, ড. মোসাম্মাৎ নাহার, নাসিমা খান, সাব্বির ফারুক, মুহাম্মাদ সামদানি, এ কে এম আদনান, ইসমত আরা কানন সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠান শেষে সবাই একসাথে দুপুরের আহার উপভোগ করেন।