বঙ্গবন্ধু চিকিৎসার জন্যে লন্ডন গেলে তখনও একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়

বঙ্গবন্ধু চিকিৎসার জন্যে লন্ডন গেলে তখনও একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ফজলুল বারী :ভারতের পুনেতে নকল পা লাগিয়ে বাহাত্তরের এপ্রিলে দেশে ফিরে আসেন কর্নেল তাহের। এডজুটেন্ট জেনারেল হিসাবে কাজ শুরু করেন ঢাকা সেনানিবাসে। দেশে ফেরার পর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই তাঁকে দেখতে আসেন। একদিন তাঁর গল্প শুনতে ডাকেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধের গল্প বলার পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সম্পর্কে তাঁর ধারনা-স্বপ্নের কথা এই সুযোগে তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেন। তাহেরের স্বপ্ন ছিল পিপলস আর্মি। যে সেনাবাহিনী জনগনের সঙ্গে জনগনের জন্য কাজ করবে। নিজেরা আয় করবে। নিজেদের আয়ে চলবে সেনাবাহিনী। পাকিস্তান বা প্রথাগত সেনাবাহিনীর মতো সরকারি টাকায় শুধু বসে বসে খাবে আর অভ্যুত্থানের চিন্তা করবেনা। বাংলাদেশের বর্তমান সেনাবাহিনীর বর্তমান কার্যক্রমের অনেক কিছুর সঙ্গে তাহেরের পিপলস আর্মি’র ধারনার মিল আছে। এই সেনাবাহিনীও দেশে-বিদেশে আয় করে। দেশের নানান নির্মানযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত সেনা প্রকৌশল সংস্থা।  পাঁচতারকা হোটেল, ব্যাংক সহ নানান লাভজনক প্রতিষ্ঠান আছে এই সেনাবাহিনীর। বিদেশেও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতেও কাজ করে তারা আয় করে। দূর্যোগে তারা মানুষের ঘরও বানিয়ে দেয়। তাহেরের চিন্তার পিপলস আর্মির মতো এই সেনারা শুধু ক্ষেত-খামার-কারখানায় তারা কাজ করছেনা।  এই সেনাবাহিনীকে জনগনের খাদেম হিসাবেও ভাবতে শেখানো হয়নি। তাকে শেখানো হয়েছে তুমি মালিক। এরজন্যে অভ্যুত্থানের পর এরা কিছু মুখস্ত কাজ করে। রাস্তায় ধরে তাদের মতো করে চুল কাটে। গাছের গোড়ায় চুন লাগায়।
কর্নেল তাহের একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেবার অনুরোধ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ধারনা তাঁকে লিখিতভাবে দিতে বলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আগ্রহ দেখে এ ব্যাপারে তাঁর সাড়া পেয়ে তা লিখে জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন থেকেই প্রথাগত অভ্যুত্থান প্রবন সেনাবাহিনীর পক্ষাবলম্বনকারীরা বলা শুরু করে তাহের সেনাবাহিনীতে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন!  অথচ আসল সত্য হচ্ছে সেনাবাহিনীতে বিশৃংখলা নয়, তাহের পাকিস্তানি কায়দার এই সেনাবাহিনী ভেঙ্গে দিতে বলেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশে তখন একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়। সেই অভ্যুত্থান চিন্তা অঙ্কুরেই ভন্ডুল হয় তাহেরের সক্রিয়তায় । বাংলাদেশ স্বাধীন হবার মাত্র সাত মাস পর ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন পিত্তথলির পাথর অপসারনে লন্ডন যান তখন মন্ত্রিসভার এক সদস্যের ইন্ধনে সেই অভ্যুত্থান পরিকল্পনা হয়।
কিন্তু তৎকালীন সেনা গোপনীয়তার সিদ্ধান্তে সেই অভ্যুত্থান পরিকল্পনাকারীদের নাম প্রকাশ পায়নি। কর্নেল তাহের এবং ঢাকা ব্রিগেডে তাঁর তৎকালীন ডেপুটি জিয়াউদ্দিনের সক্রিয়তায় পন্ড হয় সেই অভ্যুত্থান পরিকল্পনা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান থেকে কর্নেল তাহের সহ যে চার কর্মকর্তা পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন জিয়াউদ্দিন তাদের অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউদ্দিন জিয়ার অধীনে জেড ফোর্সের একটি কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
পরে তিনি সিরাজ শিকদারের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। সেই অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সারবত্তা তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউল্লাহও জানতেন। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর তাঁকে ঘটনা জানানো হয়।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাতে গুরুত্ব দেননি। উল্টো তাহেরকে বদলি করা হয় কুমিল্লা সেনানিবাসে। সেই জিয়াউদ্দিন এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন চট্টগ্রামে। জেনারেল শফিউল্লাহ বা জিয়াউদ্দিন আজ পর্যন্ত সেই অভ্যুত্থান পরিকল্পনাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করেননি।
কেন করেননি সেটি আজ পর্যন্ত রহস্য হয়ে আছে। অশীতিপর অবস্থায় দেয়া জিয়াউদ্দিনের সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী নানাকিছুর সমালোচনা করেন। কিন্তু অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকারীদের প্রসঙ্গ চেপে যান।
জিয়াউর রহমান তখন কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে বদলি নিয়ে ঢাকায় আসেন। লুৎফা তাহেরকে পেয়ে তাঁর কাছে ঢাকার নানাকিছু জানতে চান খালেদা জিয়া। যেমন ঢাকার কোন বাজারে গেলে সস্তায় বাজার করা যাবে সস্তায় জিনিসপত্র কেনা যাবে।
সোয়ারিঘাটে গেলে সস্তায় মাছে কেনা যাবে কিনা। সেই সস্তায় বাজার সদাইর সন্ধানকারী খালেদা জিয়া পরে কেমন বদলে গেলেন! কুমিল্লা সেনানিবাসে গিয়ে তাহের সেখানকার পতিত জমিতে চাষাবাদের উদ্যোগ নেন।
সেনাবাহিনীর সদস্যদের দিয়ে গাছ লাগাতে শুরু করেন। এভাবে সেনা সদস্যদের দিয়ে গাছে লাগানো, মাছ চাষ এসবকে ভালোভাবে নেননি প্রথাগত আর্মি চিন্তার অফিসাররা। তাদের কথা মাছ চাষ করবে জেলে-জাইল্যা সম্প্রদায়।  চাষবাস করবে কৃষক-চাষাভূষার দল। সেনাবাহিনী এসব কেনো করবে। আজকে দেশে পৃথিবীতে মাছ চাষ-মাছের ঘের-কৃষি খামার-বাগানবাড়ি এসবও একেকটি লাভজনক শিল্প। মানুষ জানেন এসবও অনেক আধুনিক সময়ের মানুষের পেশা হতে পারে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশের মানুষের চিন্তার গন্ডিতে এসব তখনও ঢোকেনি। সেনাবাহিনীরতো নয়। তাদের অনেকে তখন পড়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয় বাদাম চাষী! বর্নবাদী শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে এটি হাস্য-কৌতুকের তথ্য হয়!  অথচ তাদের অনেকেই তখনও জানতেনওনা যে আমেরিকার মতো দেশে কৃষি খামার মালিকরাই আসল ধনাঢ্য ব্যক্তি। আমেরিকার বাদামচাষী মানে বাংলাদেশের পদ্মার চরের হাড্ডিসার কৃষক বা বর্গাচাষী নয়। সেনা সদস্যদের দিয়ে গাছে লাগানো, মাছ চাষ করাতে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে সেই বদলির সিদ্ধান্ত তাহেরকে ব্যথিত ক্ষুদ্ধ করে। যে দেশের জন্যে তিনি যুদ্ধ করেছেন, নিজের অঙ্গ দান করেছেন, তিনি দেখেন স্বপ্নের দেশ হাঁটছে সেই পুরনো ধারায়!  মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীও পুরনো গড়পড়তা পাকিস্তানি ধারায় হাঁটা শুরু করেছে দেখে তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এখানে সেনাবাহিনীতে থেকে কথিত বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চাননি। নিজেই সরে গেছেন।  বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেঃ কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমের পদত্যাগপত্রটিতেই তিনি এসব বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেনঃ

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, গণ-প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ, সমীপেষু। মাধ্যম: যথাযথ কর্তৃপক্ষ।

বিষয়: পদত্যাগ।

আমি ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করি এবং ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই তারিখে এই সেনাবাহিনী ত্যাগ এবং সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আগমন করা পর্যন্ত সেখানে নিযুক্ত ছিলাম। সীমান্ত অতিক্রম করে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ১১নং সেক্টরে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে কাজ শুরু করি। ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর তারিখে একটি সম্মুখ সমরে আমি আঘাতপ্রাপ্ত হই। আমাকে ভারতের এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমি ১৯৭২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অবস্থান করি। বাংলাদেশে ফিরে আসার পর আমাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জেনারেল হেড কোয়ার্টারে অ্যাডজ্যুটেন্ট জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। দু’মাস পরে আমাকে জেনারেল হেড কোয়ার্টার থেকে বদলি করা হয় এবং ৪৪নং ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এখন সেনা বাহিনীর চিফ অব স্টাফ আমাকে ডি ডি পি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরিতে অবস্থান করার আমার কোনো ইচ্ছে আর নেই এবং নিম্নলিখিত কারণে আমাকে অব্যাহতি দেয়ার ইচ্ছে আমি পোষণ করি। (ক) ১৯৭১ সালের আগস্টের গোড়ার দিকে যখন আমি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করি, আমি দেখতে পাই মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন রকম অসুবিধার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গণপ্রতিনিধিরা যেমন এমএনএ এবং এম.পি.এ.-রা মুক্তিযুদ্ধ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছে এবং কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধকে তারা বিস্তৃত করার ব্যাপারে সাহায্য করেনি। এমনকি তারা এও বলাবলি করে যে তারা কেবল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিল। স্বাধীনতা চায়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এ ধরনের বহু প্রতিনিধি ঘৃণার বস্তুতে পর্যবসিত হয় এবং আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সব সময়ই উপদেশ দিতাম এমএনএ এবং এম.পি.এ.-দের প্রতি রূঢ় না হওয়ার জন্য। এই জন্য যে, স্বাধীনতা অর্জনের পর এই ধরনের গণপ্রতিনিধিরা জনগণকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবে না। সম্ভবত এই ভয়েই মুজিবনগরে অবস্থিত অস্থায়ী সরকার ভারতের সঙ্গে একটি অপমানজনক গোপন চুক্তিতে প্রবেশ করে এবং স্বাধীনতা শেষে তাদের ক্ষমতায় বসাবার জন্য ভারতের সশস্র সাহায্য এবং সহযোগিতা লাভ করে। যখন মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা সব ক্ষেত্রই প্রস্তুত, তখনই ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং সম্পদ লুটে নিয়ে যায়। অস্থায়ী সরকার এভাবেই মুক্তিযোদ্ধা এবং জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে। এ প্রসঙ্গে আমি হলিডে পত্রিকায় প্রকাশিত কর্নেল জিয়াউদ্দিনের লেখা ‘হিডেন প্রাইস’ প্রবন্ধটির উল্লেখ করছি। এমনকি আমি এই চিন্তাটুকু গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছি যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু চুক্তিটি সংশোধন করবেন এবং দেশের প্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।  আমি চিন্তা করেছিলাম বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবজনক সেনাবাহিনী গড়ে তুলব। আমি ছাউনিতে অবস্থানকারী সেনাবাহিনীতে কাজ করেছি এবং আমি বুঝতে পারি একটি অনুন্নত দেশের জন্য এই ব্যারাক আর্মি কতটুকু বিপজ্জনক হতে পারে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই বলেই এমন স্বেচ্ছাচারী ধরনের শাসনের ফলে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল এবং সর্বশেষে দেশটিকে ধ্বংস করে ফেলে। আমি উৎপাদনশীল গণমুখী সেনাবাহিনী, যা দেশের প্রগতির জন্য অত্যন্ত কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে, সে ধরনের একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলার ধারণা নিয়ে কাজ করতে শুরু করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ এবং আরও কিছু উচ্চপদস্থ অফিসার আমার এই ধারণার ব্যাপারে কোনো ধরনের উৎসাহ ও সহযোগিতা দান করেননি। এই মৌলিক বিষয়ে সেনা বাহিনীর চিফ অব স্টাফের সঙ্গে আমি মতৈক্যে পৌঁছতে পারিনি।  (খ) প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবে চাইতেন চিকিৎসার জন্য যাতে আমি বিদেশে যাই। যখন আমি দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলাম তখন জানতে পারি যে, মন্ত্রীসভার জনৈক সদস্যসহ সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার প্রধানমন্ত্রীর দেশে অনুপস্থিতির সুযোগে দেশের ক্ষমতা গ্রহণের চেষ্টা করছে (সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করেন)। আমি তখন ভাবলাম প্রধানমন্ত্রী দেশা ফেরা পর্যন্ত আমার বিদেশ গমন স্থগিত রাখা উচিত। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলোই না উপরন্তু সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ আমাকে ৪৪ নং ব্রিগেডের কমান্ড ত্যাগ করে ডিডিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে বলেন। আমি অনুভব করছি ষড়যন্ত্র এখনো চলছে এবং আরও অনেকে এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এ ধরনের ক্ষমতা দখল হচ্ছে সামগ্রিকভাবে জনগণের আশা-আকাঙ্খার বিরুদ্ধে এবং এটাকে অবশ্যই রুখতে হবে। যদি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে সেনাবাহিনীর যে সুনাম রয়েছে তা নষ্ট হবে এবং সেনাবাহিনীতে আমার কাজ করা সম্ভব নয়। আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম একজন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে নয় বরং একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, আমি এটাকে আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক বলে মনে করি। জনগণের স্বার্থই আমার কাছে সর্বোচ্চ। আমি সেনাবাহিনী ত্যাগ করে জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই; যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন আমার চারদিকে জড়ো হয়েছিল। আমি তাদের বলবো কী ধরনের বিপদ তাদের দিকে আসছে।  আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হলে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকব।

আপনার একান্ত বাধ্যগত  লে. কর্নেল এম এ তাহের  কমান্ডার,

৪৪ ব্রিগেড  কুমিল্লা সেনানিবাস।

তারিখ: ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭২।