ফজলুল বারী: অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা প্রচেষ্টা মামলার রায় হয়েছে। রায়ের পর আসামী পক্ষের আইনজীবীদের একটি বক্তব্যে ধন্ধ লেগেছে রাষ্ট্রপক্ষ তা ভেবেছে কিনা। আসামী পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, বাংলা একাডেমির মেলা থেকে বাসায় যাবার পথের আক্রমনে হুমায়ুন আজাদের মৃত্যু হয়নি।
মৃত্যু হয়েছে জার্মানিতে স্কলারশীপ নিয়ে যাবার পর। কাজেই বাংলা একাডেমির ঘটনার সঙ্গে তার মৃত্যুকে জড়ানো ঠিক নয়! ধন্দ এখানেই। যা রাষ্ট্রপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট বিচারক তা ভেবেছেন কিনা! মামলাটি যখন হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টে আসবে তখন যাতে আদালত বিষয়টি বিবেচনায় রাখে।
এ ব্যাপারে চিকিৎকদের বক্তব্যও আদালতকে শুনতে হবে। এই মৃত্যুর পর আমার রিপোর্টিং দেখে এক চিকিৎসক বিষয়টি আমার নজরে এনেছিলেন। জার্মানিতে যাবার পর যখন হুমায়ুন আজাদকে তাঁর ঘরে মৃত অবস্থায় পাবার পর আমরা সম্ভাব্য মৌলবাদী হামলা-আক্রমন নিয়ে লিখছিলাম।
কিন্তু তা জার্মানির মতো নিরাপদ দেশে তা সহজ সম্ভব নয়। সেখানকার পুলিশ ও ডাক্তারি রিপোর্টে তেমন কিছুর উল্লেখ ছিলোনা। আজকের যুগে জার্মানি সহ বিশ্বের নিরাপদ দেশগুলোতেও জঙ্গি হামলার যে সব ঘটে তখনও পৃথিবীটা অতটা অনিরাপদ হয়ে যায়নি।
আমার রিপোর্টিং দেখে ওই চিকিৎসক আমাকে বলেন, হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর কারন ঢাকার ঘটনা। তাকে সেখানে মৌলবাদী জঙ্গিরা গলা কেটে হত্যা করতে চেয়েছে। তখন তাকে বাঁচাতে ঢাকা ও ব্যাংককে যে সব বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে এর শক থেকেই তাঁর এমন মৃত্যুর উৎপত্তি!
সেই চিকিৎসক আমাকে বলেন, যাদের এ ধরনের বড় অস্ত্রোপচার হয় এর প্রতিক্রিয়ায় তাদের শরীরে অনেকদিন বড় ধরনের শক’এর উৎপত্তি হতে পারে। মৃত্যুও হতে পারে এসব শক’এর ঘটনা থেকে। হুমায়ুন আজাদের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। কাজেই ঢাকার ঘটনায় হুমায়ুন আজাদের মৃত্যু হয়নি, আসামী পক্ষের এমন বক্তব্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুক্তির ধোপে টেকেনা।
হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি। আমরা সাংবাদিকতায় আসার অনেক আগে থেকে লেখক হিসাবে তিনি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সাংবাদিকতায় আমাদের সূচনার সময়ে লেখক হুমায়ুন আজাদ জনপ্রিয় পাঠক প্রিয় হয়ে ওঠেন। আমি যখন তার প্রথম ইন্টারভ্যু করি তখন তিনি ঢাকার সেন্ট্রাল রোড বা এর আশেপাশের কোন একটি এলাকায় সাধারন একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।
সাংবাদিক ইন্টারভ্যু করলে তার প্রচার হবে তিনি জনপ্রিয় হবেন এমন মনোভাব অন্যদের থাকলেও তা হুমায়ুন আজাদের ছিলোনা। মনে পড়ে আমার সঙ্গে প্রথম কথা বলার দিন গরমের সময় ছিল। হুমায়ুন আজাদ খালি গায়ে অথবা একটা হাতাকাটা ময়লা একটি গেঞ্জি পরা অবস্থায় আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
তাঁর কথাবার্তার ধরন ছিল কাঠখোট্টা টাইপের। শামসুর রাহমান বা হুমায়ুন আহমেদের মতো কথাবার্তায় বিনয়ী টাইপের তিনি ছিলেননা। হুমায়ুন আহমেদের পাঠক প্রিয়তা তখন অবিশ্বাস্য উর্ধমূখী। হুমায়ুন আজাদ হুমায়ুন আহমেদ তাঁর সম্পর্কে বলছিলেন, সেতো ক্লাস এইটে পড়ুয়া মেয়েদের জন্যে লিখে! চাকরানীদের জন্যে লিখে!
নাইমুল ইসলাম খান সম্পাদিত সাপ্তাহিক খবরের কাগজ বাংলাদেশে কলাম লেখকদের পাঠক প্রিয় করে তোলে। হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিন সহ অনেকে তখন সাপ্তাহিক খবরের কাগজে কলাম লিখে অবিশ্বাস্য পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠেন। খবরের কাগজের এই ধারায় বেরোয় মোজাম্মেল বাবু সম্পাদিত সাপ্তাহিক পূর্বাভাস।
হুমায়ুন আজাদের প্রথম তুমুল পাঠকপ্রিয় গ্রন্থ ‘নারী’। এই বইর লেখাগুলো সাপ্তাহিক পূর্বাভাসে প্রকাশ পেতে শুরু করে। নারী’ গ্রন্থের লেখার আয়োজনে মোজাম্মেল বাবু’র ভূমিকাও আমাদের চোখে দেখা। নারী গ্রন্থের পর ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ সহ একের পর বেরুতে থাকে হুমায়ুন আজাদের সব জনপ্রিয় গ্রন্থ।
তখন রোজার ঈদে সাপ্তাহিক বিচিত্রা, রোববার, সচিত্র সন্ধানী, চিত্রালী, পূর্বানী সহ পত্রিকাগুলোর ঢাউস সাইজের ঈদ সংখ্যা বেরুতো। হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন থেকে শুরু করে পাঠক প্রিয় লেখকরা এক সময় ঈদ সংখ্যার লেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতেন।
অন্য লেখকদের বই বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে বেরুলেও হুমায়ুন আজাদের বই শুধু আগামী প্রকাশনী থেকে বেরুতো। বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলায় হুমায়ুন আজাদ শুধু আগামী প্রকাশনীর স্টলে বসতেন। এ নিয়ে আমরা আগামী প্রকাশনীর ওসমান গনি, মেনন এদের সঙ্গে অনেক মজাই করতাম।
পাক সার জমিন সাদ বাদ’ প্রকাশের পর মৌলবাদীরা হুমায়ুন আজাদের প্রতি ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সহ অনেক মোল্লা তার বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক বক্তব্য রাখেন। যার প্রতিক্রিয়ায় এক রাতে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে আক্রান্ত হন হুমায়ুন আজাদ।
সেদিন তাকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করা হয়। হুমায়ুন আজাদের পরিবার পরিজন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা তখন ছোট। কিন্তু সেই আক্রমনের পর বাংলাদেশটা হয়ে ওঠে তাঁর পরিবার। আক্রান্ত হুমায়ুন আজাদকে তারাই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
খালেদা জিয়া তখন ক্ষমতায়। সরকারি উদ্যোগে তাকে দ্রুত সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সিএমএইচ সামরিক বাহিনীর বর্তমান-সাবেক সদস্যদের ও তাদের পরিবার পরিজনের হাসপাতাল। কিন্তু আমাদের রিপোর্টিং’এর শুরু থেকে দেখছি সরকার চিকিৎসা দেবার পাশাপাশি কাউকে আড়াল করতেও সিএমএইচে নিয়ে যায়।
একুশে আগষ্টের গ্রেনেড হামলার পর আইভি রহমানকে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হুমায়ুন আজাদকে দেখতে সিএমএইচে রওয়ানা হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সেনানিবাসের গেটে তাকে আটকে দেয়া হয়।
তখন তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে রওয়ানা হন। বেশ কিছু পথ হাঁটতে গেলে নেতাকর্মী ও সাংবাদিক মিলে সেনানিবাসের মধ্যে মিছিলের মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা একটি রিকশা নিয়ে এলে শেখ হাসিনা তাতে চড়ে বসেন। তার রিকশাকে ঘিরেও তৈরি হয় একটি মিছিল।
চিকিৎসার জন্যে এক পর্যায়ে সিএমএইচ থেকে হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাংককে। আগামী প্রকাশনীর ওসমান গনি তার সঙ্গে ব্যাংকক যান। তখন জনকন্ঠ থেকে প্রতিদিন ব্যাংককে ওসমান গনি ভাইকে ফোন আমি আপডেট রিপোর্ট করতাম।
চ্যানেল আই’র ফরিদুর রেজা সাগর ভাই ব্যাংককের হাসপাতালে তাঁকে গিয়ে ওসমান গনি ভাই’র হাতে একটি ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে আসেন। হুমায়ুন আজাদ ব্যাংককের চিকিৎসায় সুস্থ হবার পর ওসমান গনি সেই ভিডিও ক্যামেরায় তার সাক্ষাৎকার নিতে থাকেন।
সেই সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন আজাদ তার ওপর হামলার পূর্বাপর ঘটনা বলতে থাকেন। সেখানেই হুমায়ুন আজাদ বলেন তাকে হত্যার সম্ভাব্য পরিকল্পনাকারী হিসাবে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর নাম। ওসমান গনি সেই সাক্ষাৎকার সিডিতে আমাকে দিলে আমি তা লিখে জনকন্ঠে ছাপার ব্যবস্থা করি।
এভাবে হুমায়ুন আজাদের জবানীতে সম্ভাব্য হত্যা পরিকল্পনাকারী হিসাবে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর নাম জনকন্ঠে প্রথম ছাপা হয়। ব্যাংককের চিকিৎসা শেষে হুইল চেয়ারে বসে দেশে ফিরে আসেন হুমায়ুন আজাদ।
তার মুখ-গলাজুড়ে ছিল কাটাছেঁড়া আর অস্ত্রোপচারের স্মৃতি সব দাগ। ব্যাংকক থেকে ফিরে হুমায়ুন আজাদ একদিন জনকন্ঠ অফিসে আমাকে ফোন করেন। নারী গ্রন্থটি লেখার পিছনে সাপ্তাহিক পূর্বাভাসের ভূমিকা নিয়ে আমার লেখা রিপোর্ট তিনি চরম অপছন্দ করেছেন।
ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে স্বভাবসুলভ তুমুল বকাঝোকা করছিলেন হুমায়ুন আজাদ। আমাকে তিনি বলছিলেন, ফজলুল বারী, আমার বিরুদ্ধে কে পয়সা খরচ করে তোমাকে দিয়ে এসব লিখিয়েছে। বিব্রত আমি ফোনের এ প্রান্ত থেকে শুধু স্যার স্যার করছিলাম।
ব্যাংকক থেকে ফিরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন হুমায়ুন আজাদ। এক রকম জীবনরক্ষার তাগিদেই স্কলারশীপ নিয়ে তিনি চলে যান জার্মানিতে। লেখকদের সংগঠন পেন তাঁকে সেখানে নিয়ে যায়। ২০০৪ সালের ১২ আগষ্ট। মিউনিখের ফ্লাটে পাওয়া যায় হুমায়ুন আজাদের মৃতদেহ!
জার্মানিতে গিয়ে তাঁর হঠাৎ মৃত্যুর খবরে হতভম্ভ হয় দেশ। যেখানে তাঁর মৃত্যু হয় এর আশেপাশে খুব বেশি বাংলাদেশী ছিলেননা। আমি তাদের কয়েকজনকে খুঁজে বের করে ফোনে কথা বলে রিপোর্ট করছিলাম। তাদের একজনকে দিয়ে যে ঘরে তার কফিন রাখা সে ঘরের বারান্দায় ফুল রেখে ছবি আনিয়ে আমি জনকন্ঠের রিপোর্টে ব্যবহার করছিলাম।
কিন্তু তাঁর ঢাকার বাসায় গিয়ে রিপোর্ট করতে সমস্যা হচ্ছিল। তাঁর ছেলে অনন্য আজাদ ও তার বন্ধুরা প্রথম আলো পড়তেন। প্রথম আলোর সাংবাদিক বাসায় যতোটা আমল পেতেন আমি তা পেতামনা। কিন্তু আমার রিপোর্ট থামেনি। মরদেহ এসেছে অনেকদিন পর।
হিমঘরে থাকলেও এতদিনে মরদেহে কিছুটা বিকৃতি এসেছিল। পুরু একটি স্টিলের বক্সে করে মরদেহ আসে। সেটি কেটে প্রথম মুখ দেখে পরিবারের সদস্যরা চিৎকার ছিল এ লাশ আমাদের না। মুন্সিগঞ্জের রাড়িখাল গ্রামে জন্ম নেয়া হুমায়ুন আজাদের শেষ শয্যা হয় সেই গ্রামেই।
কিন্তু কবরটি অনেকদিন পুলিশ পাহারায় রাখতে হয়েছে। কারন তার কবর নিয়েও ফতোয়া দেয়া হয়। আমাদের দেশের কিছু লোকজনের হাতে অফুরন্ত সময়! তাদের কাজ নেই বা কাজকর্ম করে খেতে হয়না। তাদের কাজই হলো ফতোয়া দিয়ে বেড়ানো! যোগ্যতা থাকলে লিখে জবাব দিতে পারতো। দিনের পর দিন বিস্তর পড়ে বিস্তর লিখেই হুমায়ুন আজাদ নিজস্ব যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
তাঁর পরিবারের সঙ্গে অনেক দিন ফোনে যোগাযোগ ছিল। কবি ও লেখক হুমায়ুন আজাদের স্ত্রী লতিফা কোহিনুর, মেয়ে মৌলি আজাদের এর প্রথম দিকের কিছু লেখা আমি জনকন্ঠে ছাপার ব্যবস্থা করেছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখনই পরিবারটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে বের করে দিতে চাইতো তখনই আমরা এর বিরুদ্ধে লিখতাম। কারন তখনও পরিবারটির মাথাগোঁজার কোন ঠাঁই হয়নি।
এক পর্যায়ে তার ছেলে অনন্য আজাদও দেশে থাকতে পারলোনা! মৌলবাদী হামলার হুমকিতে সেও দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। বাংলাদেশটা অদ্ভূত এক দেশ! এখানে অনেক উচ্চ মার্গীয় চোর-ডাকাত-ব্যাংক ডাকাত-অর্থ পাচারকারীও থাকে! দেশের আইন ও সংবিধান বিরোধী লোকজন থাকে!
কিন্তু একটুতে কারও লেখা অপছন্দ হলে সে আর নিজের জন্মভূমিতে থাকতে পারেনা! দাউদ হায়দারকে যে ফ্লাইটে কলকাতা পাঠানো হয়েছিল সে ফ্লাইটে আর কোন যাত্রী ছিলোনা! এভাবে বাংলাদেশের লেখকদের আশ্রয় দেয় আরেক দেশ! তাদের পাসপোর্ট পর্যন্ত রিনিউ করা হয়না
হুমায়ুন আজাদের হত্যা মামলার রায় বেরুবার পর তার মেয়ে মৌলি আজাদ চমৎকার কিছু কথা বলেছেন। বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডল গ্রেফতার হবার পর দেশের স্বনামখ্যাত লেখকরা সেভাবে রাস্তায় নেমে আসেননি। একা একজন সাধারন মানুষের মতো তিনি জেল থেকে বেরিয়েছেন!
পরীমনির নাম না উল্লেখ করে মৌলি আজাদ বলেছেন, অথচ কিছুদিন আগে আমরা দেখলাম জেল থেকে বেরুবার পর হুডখোলা গাড়িকে ঘিরে অনেক ভিড়ের ছবি। হুমায়ুন আজাদ কিন্তু যে কোন অন্যায় দেখলে সেখানে ছুটে যেতেন। তাকে হত্যার চেষ্টায় গলা কাটা দেখে যেন সবাই ভয় পেয়ে গেছেন! হত্যার চেষ্টাকারীরাতো এটাই চেয়েছিল।