ফজলুল বারী: ঘটনা ঘটেছে পাবনায়। যেখানে দেশের প্রধান মানসিক হাসপাতাল। খবরটি পড়তে গিয়ে শিরোনামটি মনে পড়লো। জেলা শহরের একটি রেষ্টুরেন্টের ইফতারি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সহ ৯ বিচারক। ০তাদের পরিবারের সদস্যরা। অতএব হোটেল মালিক সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনা ঠিক আছে। কিন্তু মামলাটি ত্রুটিপূর্ণ। দেশের হোটেল রেষ্টুরেন্ট সহ খাবারের মান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রনের কর্তৃপক্ষ পাবনাতেও আছে। জেলা প্রশাসক–এসব দায়িত্বের ম্যাজিষ্ট্রেটকে বাদ রেখে মামলাটি করা হওয়ায় বোঝা গেলো বিচারকরা বিষয়টিকে খুব পার্সোনালি নিয়ে ফেলেছেন আর কি!
গত বুধবার সেখানে এক বিচারকের বিদায় অনুষ্ঠান ছিলো। পাবনার কাশমেরী নামের এক রেষ্টুরেণ্ট থেকে ইফতারি আনা হয়। সেই ইফতারি খেয়ে ৯ বিচারক, তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ১৮ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আছেন রেষ্টুরেন্টের মালিক হাসানুর রহমান রনি, ব্যবস্থাপক সাব্বির হোসেন ও সহ ব্যবস্থাপক নাজমুজ সাদাত।
ইফতারি খেয়ে বাড়িতে গেলে তাদের অনেকে অসুস্থবোধ করেন। তাদের ছয়জনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে, কয়েকজনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়। চিফ জুডিশিয়াল আদালতের নাজির মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এ ব্যাপারে মামলা করলে আসামীদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
খবরটা ভালো করে পড়ছিলাম। মামলায় রেষ্টুরেন্টের রাঁধুনি কর্মচারীদের আসামী করা হয়নি। এটা ভালো হয়েছে। তবে বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে না নিয়েই গণশুনানিতে গেলে তারা ভালো করতেন। কারন বিচারকরা যদি বাংলাদেশে বাস করেন তারা বাংলাদেশের হোটেল রেষ্টুরেন্টে অবস্থা জানার কথা।
নিম্ন মজুরির কর্মচারীদের নিয়ে এগুলোর পরিচালনা পরিস্থিতি তাদের অজানা থাকার কথা নয়। নিরাপদ খাবার রান্না করা, মান নিয়ন্ত্রন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষন, পরিবেশনের কোন প্রশিক্ষণই তাদের নেই। আমাদের দেশের যাদের কোন উপায় নেই তারা এসব রেষ্টুরেন্টে খান।
যারা একটু রূচি পাল্টাতে চান তারাও এসব অনিরাপদ রেষ্টুরেন্টে খেতে যান। বিচারকরা এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্তত পাবনার হোটেল–রেষ্টুরেন্টগুলোর অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন–গণশুনানির আয়োজন করলে পাবনাবাসীর উপকার করতেন। তা না করে তারা যা করেছেন, তাতে রোগের নিরাময় হবেনা। লক্ষনে মলম লাগানো হলো মাত্র।
এই ঘটনায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে বিচারকদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের আরেকটি নজির হলো। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ সালাম দেয়নি। এরজন্যে ওই পুলিশও কোর্টে ডেকে নেবার ঘটনা নিশ্চয় মনে আছে। আরেকবার এক বিচারপতির ট্রেন ভ্রমনকে কেন্দ্র করে কমলাপুর রেল স্টেশনে লালগালিচা ব্যবস্থা করা হয়।
ঈদের ওই সময়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ এর কারনে বিচারপতিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সাধারন যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। এ নিয়ে রিপোর্ট হলে আদালত অবমাননার অভিযোগ করা হয়। পাবনার ঘটনার মামলার ত্রুটিমুক্ত করতে জেলা খাদ্য পরিদর্শক ও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে আসামী করার স্পর্ধা তারা রাখেন কিনা সেটা প্রমানের এটি বড় সুযোগ ছিল।
বিচারকরা অস্বাস্থ্যকর ইফতারি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পাবনার এ রকম একটি নামী রেষ্টুরেন্টের পরিস্থিতি বুঝলেন। এখান থেকে পাবনার সাধারন মানের হোটেলের অবস্থা অনুমান করতে পারেন। একটা গৎবাঁধা মামলায় সেখানকার অবস্থা পাল্টে যাবেনা। জেলা শহরের মানুষের জীবনকে নিরাপদ করতে তারা একটু অবদান রাখার চেষ্টা করলে হয়।