গত ১৬ জুলাই রবিবার সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো ঢাকা কলেজ আ্যলামনাইদের আনুষ্ঠানিক মিলনমেলা শুরু হলো সিডনির রকডেলের হিমালয় রেস্টুরেন্টে। ‘নিজেকে জানো’ মূলমন্ত্রে ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বরে গোড়াপত্তন হয়েছিল ঢাকা কলেজের। ঐতিহ্য-গৌরবের এই দীর্ঘ পথচলায় ভাষা আন্দোলন ও স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে অসংখ্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রাজসাক্ষী এই কলেজ।
বাংলাদেশের সেরা ছাত্রদের চারণভূমি ঢাকা কলেজ। সেই কলেজের অনেক প্রাক্তন ছাত্রই থিতু হয়েছেন অস্ট্রেলিয়াতে। কোন ধরণের ডাটাবেজ না থাকায় অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত ঢাকা কলেজ আ্যলামনাইদের একসাথে জড়ো করা কঠিন ব্যাপার হলেও অন্তত সিডনিতে প্রথমবারের মতো সেই কাজটি সম্ভব হয়েছে। প্রথমবারের মতো ঢাকা কলেজ আ্যলামনাই পরিবার বসেছিলেন একসাথে এক গল্প ও আড্ডায় , যেখানে ছিলেন ১৯৬৫ সাল থেকে ২০০২ সালের কলেজ আ্যলামনাইরা। অনেকেই ফিরে পেয়েছেন তাদের ব্যাচের আ্যলামনাইদের যাদেরকে ফেলে এসেছিলেন কয়েকযুগ আগে সেই কলেজ জীবনে।
বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত সমস্বরে গেয়ে অনুষ্ঠানের শুরু করা হয়। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ পর্বে অংশ নেন ১৯৬৫ সালের কলেজ আ্যলামনাই জনাব মোস্তফা আব্দুল্লাহ যিনি তুলে ধরেন তৎকালীন কলেজ ব্যবস্থাপনা, মেধাবী ছাত্রদের নানাবিধ গল্প এবং কলেজ জীবনের নিয়ম ভাঙ্গার শাস্তির নানাবিধ মজার অনেক কিছু। এই পর্বে আরো প্রফেসর ড. আলী কাজী যিনি ১৯৬৮ সালের কলেজ আ্যলামনাই তুলে ধরেন ঢাকা কলেজ ছাত্রদের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে অসংখ্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস। দেশ স্বাধীন হবার পরের প্রজন্মের মধ্য থেকে ঢাকা কলেজ ছাত্রদের হোস্টেল জীবন, শিক্ষক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিয়ে কিছু রসাত্মক স্মৃতিচারণ করেন লরেন্স ব্যারেল।
আয়োজক ও আ্যলামনাইদের ক্রেস্ট প্রদান পর্বটি ছিল চমৎকারভাবে সাজানো , আ্যলামনাই ক্রেস্ট গ্রহণের পাশাপাশি কলেজ জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠেন কেউ কেউ ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল কলেজ আ্যলামনাইদের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেখানে গান পরিবেশন করে সিডনির নামকলা শিল্পীদের মধ্যে সিরাজুস সালেকিন , অনুপম গোস্বামী , আকম ফারুক , মামুন হাসান খান ও অমিয়া মতিন। আবৃত্তি করেন শাহীন শাহনেওয়াজ।
আজাদ আলম , শাহরিয়ার ইমতিয়াজ চৌধুরী ও আর গানের তালে তালে নাচে নতুন প্রজন্মের শিশু ফারজান জামান।
অনবদ্য ও সুশৃঙ্খল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বটি খুবই উপভোগ্য ছিল। অনুষ্ঠানটি চমৎকারভাবে সঞ্চালনা করেন পাভেল দেওয়ান।
মেলবোর্ন , ক্যানবেরা , পার্থ , ব্রীজবেন ও এডিলেড থেকেও অনেক আ্যলামনাইরা সারা দিয়েছেন অনুষ্ঠানে যুক্ত হতে কিন্তু সময়ের সল্পতার জন্য অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দিতে পারেননি।
অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পর্বে ছিল , সব আ্যলামনাইদের নিয়ে কেক কাটা এবং একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার মাধ্যমে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয় ,অদূর ভবিষ্যতে বড় ভেন্যু এবং পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আ্যলামনাইদের আমন্ত্রণ জানিয়ে পরবর্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও রাতের খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়ে সমাপ্তি টানা হয় অনুষ্ঠানটির।