২ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় সিডনির ব্যাংকসটাউনেই ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটারে মঞ্চস্থ হলো সেলিম আলাদিনের রচিত ‘কিত্তনখোলা’ নাটকটি। সিডনিবাসী আবারো মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করলেন অসাধারণ আরো একটি মঞ্চ নাকট।এই নাটকটি প্রযোজনায় করেন সিডনিতে গড়ে উঠা মঞ্চ নাট্যদল ‘সখের থিয়েটার’ এবং সার্বিক নিৰ্দেশনায় ছিলেন শাহীন শাহনেয়াজ।
‘সখের থিয়েটার’ এর আগে সিডনিতে প্রথম মঞ্চ নাটক ‘কঞ্জুস’ উপহার দিয়েছিলেন যা একাধিকবার মঞ্চস্থ হয়েছিল দর্শকদের অনুরোধে।
প্রবাসী জীবনে ব্যস্ততার মধ্যে সময় বের করে গ্রামের এত গুলো চরিত্রকে এক এক করে গড়ে তুলে আনাটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ কেননা সিডনিতে শহরটি অনেক বড় যেখানে বাঙালিরা বসবাস করে দূর দূরান্তে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিনয় করতে আসা শিল্পীদের টানা কয়েক মাস রিহার্সেল করার পরেই সম্ভব বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার সামাজিক কঠিন বাস্তবতার এমন একটি চিত্র মঞ্চে ফুটিয়ে তোলা। আর এই কাজটি বিস্ময়ের ব্যাপার হলেও বাটবে সম্ভব করেছেন ‘সখের থিয়েটার’
সন্ধ্যা ৭:৪৫ নাটকটি শুরু হয় , বিরতির পর দ্বিতীয় পর্ব শেষ হয় রাত ৯:৩০ মিনিটে। কানায় কানায় পূর্ন ছিল ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটারটি সিডনির বিভিন্ন পেশার লোকজনের উপস্থিতিতে।
‘কিত্তনখোলা’ বাংলাদেশে মঞ্চস্থ করে আসছেন ঢাকা থিয়েটার। গ্রামের সামাজিক ও পেশাগত বাস্তবতার উপরে ভিত্তি করে নাটকটি লেখা। যেখানে রয়েছে নানা রূপান্তরের নায়ক মৃগী রোগে আক্রান্ত সোনাই। সে কিত্তনখোলা মেলায় এসে সমাজ অভ্যন্তরে বিদ্যমান পেশাগত রূপান্তরের বস্তুগত রূপটি সে প্রথমবারের মত প্রত্যক্ষ করে। যাত্রাদলের নায়িকা বনশ্রী বালা, বছির, চালের ব্যবসায়ী গোলাপগাছি প্রত্যেকেই রূপান্তরিত জীবনের মর্মবেদনা বয়ে বেড়াচ্ছে অষ্ট প্রহর। ইদু কন্টাক্টর সামাজিক রূপান্তরের ফসল। সোনাই, বছির, রুস্তম, গোলাপগাছি, বনশ্রী, ডালিমন বঞ্চিত ও রূপান্তরিত জীবনের প্রতিচ্ছবি। জীবনের অর্থ খুঁজতে তারা ব্যস্ত। সহস্র বাঁক পরিবর্তন তারা প্রত্যক্ষ করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘জীবন’ আসলে কি তারা তা খুঁজে পায় না। আর এই জীবনের ‘পালাকার’ কে তাও তারা খুঁজে ফেরে। তাদের এই অনুসন্ধান মূলত নাট্যকারেরই অনুসন্ধান।
ছায়ারঞ্জন চরিত্রে বরাবরের মতো ফুটিয়ে তুলেছেন শাহীন শাহনেওয়াজ , সোনাই চরিত্রে শাকিল চৌধুরী মন কেড়েছেন দর্শকদের , বনশ্রীবাবার ভূমিকায় আফসানা রুচি চমৎকার অভিনয় করেছেন। এছাড়াও রবিদাসের ভূমিকায় ফয়সাল খান , সুবল ঘোষের ভূমিকায় সুব্রত সরকার, ইদু কোনোকদাররের চরিত্রে শাওন অরিজিৎ , মালেকের ভূমিকায় মেহেদী হাসান , ডালিমন চরিত্রে মাসহুদা জামান ছবি , বছির বুল্বুল আহমেদ সাজু , মালকা চরিত্রে অফার অর্চি হোসেন , ননীবালা চরিত্রে শাজনীন মাহমুদ সারা , গোলাপ গেছি মোঃ আক্তার হোসেন , বৃদ্ধা শিরিন আক্তার মুন্নি , গাড়িওয়ালা মেহবুব রানা হিল্লোল , বায়োস্কোপওয়ালা সায়েম হোসেন , জুয়ার মালিক আশিকুর রহমান , ভিক্ষুক জিসান , যাত্রার প্রচারক ও ঔষুধ বিক্রেতা জাকি খন্দকার , গ্রামবাসী সৈয়দ আজিম চঞ্চল , সারাফ , সামিনা এবং শিশুশিল্পী ছুটনীর ভূমিকায় ছিল শামায়লা চৌধুরী। সব কয়টি চরিত্র নিখুঁত ভাবে ফুঁটে উঠেছে যার যার অভিনয় কৌশল ও দক্ষতা দিয়ে।
নাটকটি শেষ করেই শাহীন শাহনেওয়াজ সখের থিয়েটারের প্রতিটি চরিত্রের সাথে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং তুলে ধরেন নাটকটি মঞ্চস্থ করার পিছনে দীর্ঘ দিনের অধ্যবসায়ের কথাগুলো। ধন্যবাদ জানান দর্শকদের এবং যারা উৎসাহ যোগান দিয়েছেন নাটকটি বাস্তবায়ন করতে। তিনি আরো বলেন , আগামীতে ‘কিত্তনখোলা’ আবারো মঞ্চস্থ হবে সিডনিতে যারা টিকিটের স্বপ্লতার জন্য।