অনলাইন ডেস্ক: ২৫ জুন ২০১৫
মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে কেউ যদি বুধবার রাতে গত সাত দিনের মীরপুর-সংকলন নোটবুকে তুলে রাখতে বলত, ভারত অধিনায়ক কী কী লিখতেন?
বোধহয় লিখতে পারতেন টিমের কাছে যা যা চেয়েছি, এত দিনে পেলাম। প্রেস কনফারেন্সে গিয়ে নিত্য শুনতে হত, ক্যাপ্টেন তোমার টিম পার্টনারশিপ বলতে কিছু বোঝে? আজ একটা নয়, টিম দু’টো দিয়েছে। লোয়ার অর্ডারও রান দিয়েছে। ফিনিশারের ভূমিকা ছেড়ে ব্যাটিং-অর্ডারের সিঁড়ি ভাঙতে হয়েছিল রানের প্রত্যাশায়, প্রায় রুগ্নশিল্পে পরিণত হওয়া ব্যাটিংকে বাঁচানোর আশাবাদে। বুধবারের মীরপুর দু’টোই দিল। মিডিয়ার আক্রমণে অভিমানে বলে ফেলেছিলাম, অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দিন। মনে হয়, আজকের মীরপুরের পর জাতীয় মিডিয়া আপাতত কয়েক দিন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করবে। এখনই আর হিংস্র মূর্তি ধরবে না।
বুধবারের শের-ই-বাংলা থেকে মনে রাখার মতো গোটা কয়েক বিষয় পেয়ে গেলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সিরিজ অবশ্যই রক্ষা হয়নি, তার প্রশ্নও ছিল না। কিন্তু মানসম্মান সম্পূর্ণ পদ্মায় ভেসে যেতে পারত, এটাতেও হেরে গেলে। শেষ ম্যাচ জিতে টিমের প্রচুর লাভ হয়েছে এমনও নয়। কিন্তু নিজেদের উপর বিশ্বাসটা ফিরেছে। যা ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বরে থাকা টিমের কাছে নিত্য দুরমুশ হতে হতে প্রায় উধাও হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সান্ত্বনার জয় সেটা ফিরিয়েছে। ফিরিয়েছে সুরেশ রায়নাদের মুখে আকর্ণবিস্তৃত হাসি, গত কয়েক দিনে যা সম্রাট বাবরের আমলে শেষ ঘটেছে বলে মনে হচ্ছিল। সম্ভবত ক্রিকেটজীবনের কঠিনতম সময়ে বুধবারের মীরপুরকে মনে রাখবেন এমএসডি। মীরপুরও মনে রাখবে ভারত অধিনায়ককে। পাকিস্তান যা পারেনি, ভারত অধিনায়ক তা করে গেলেন।
অভিমানী ধোনির ব্যাটেই রক্ষা পেল ‘বাংলাওয়াশ’!
এমএসডির বোলিংয়ের যা দশা, তাতে এত দিন ধরে তাঁকে সব কিছুর জন্য দোষারোপ করে যাওয়াটা এক এক সময় অতীব অন্যায় মনে হবে। বিশেষ করে, পেস বোলিং। এটাই যদি ভারতীয় পেসের আসল চরিত্র হয়, তা হলে তো এত দিন ধরে দেশকে এত ট্রফি দেওয়ার জন্য অধিনায়ককে অবিলম্বে ‘নাইটহুড’ দেওয়া উচিত! তিনশো প্লাস যে টিম তুলবে তার বোলিংয়ের লক্ষ্য থাকবে বিপক্ষকে স্রেফ গুঁড়িয়ে দেওয়া। অথচ উমেশ যাদব-স্টুয়ার্ট বিনিরা প্রথম দিকে যা বোলিং শুরু করলেন তাতে আট ওভারের মধ্যে চার জন বোলার নামিয়ে দিতে হল ধোনিকে! উমেশ যাদবের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। প্রথম ম্যাচে এতটাই ‘মহার্ঘ্য’বোলিং করেছিলেন যে, দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁকে আর নামানোর সাহস পাননি এমএসডি। এ দিন নামালেন, আর প্রথম বল থেকে বোঝা গেল কেন তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ওভারে চোদ্দো, শেষ পর্যন্ত চার ওভারে তেত্রিশ। ভাবা যায়, দেড়শোর মধ্যে পাঁচটা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশ সাতচল্লিশ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটাকে নিয়ে গেল!
বাংলাদেশ সাংবাদিকদেরও দোষারোপ করা বোধহয় যায় না। দুপুরে তাঁদের কেউ কেউ আক্ষেপ করছিলেন যে, তেন্ডুলকর-গাঙ্গুলির ভারতের থেকে এ জিনিস ভাবা যেত না। যে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ধোনির বর্তমান টিম একটা মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে দিনের পর দিন করে চলেছে। মুস্তাফিজুর ততক্ষণে রোহিতকে আবার গিলে নিয়েছেন, সিরিজে তৃতীয় বারের মতো। আবার মারণ কাটার বেরোচ্ছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে লিখে ফেলা হচ্ছে, এর চেয়ে বাংলাদেশ ‘এ’-কে নামালে তুল্যমূল্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা বেশি হত!
অভিভূত হয়ে পড়ার মতো কথাবার্তা। যে টিম এই সে দিন বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলেছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তাদের দু’টো হারে এত মর্যাদাহানি? বিদ্রুপের এত বিষ-শলাকা? কিন্তু চতুর্দিকের এমন নিরন্তর বিদ্রুপ সম্ভবত এমএসডির কানেও ঢুকেছিল। এবং ক্রমবর্ধমান অপমানের প্রত্যুত্তর দেওয়ার ইচ্ছেতেই হোক বা আত্মসম্মান বাঁচানোর তাগিদ, ভারতীয় ব্যাটিংকে এ দিন শেষ পর্যন্ত আসল ভারতীয় ব্যাটিংয়ে উত্তরণ ঘটাতে দেখা গেল। (সুত্রঃ আনন্দবাজার:২৫ জুন, ২০১৫)