অনলাইন ডেস্ক: ০৬ জুলাই, ২০১৫
ঘরে বসেই বাসের টিকেট
মালিহা এম কাদির
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সহজ
ষোল কোটি মানুষের দেশ, আর ভ্রমণ তো প্রতিদিনের ব্যাপার! উত্সব-পার্বণ এলে তা যায় বহুগুণে বেড়ে। আর যানবাহন হিসেবে এই দেশে বরাবরই জনপ্রিয় বাস। অথচ কিছুদিন আগ পর্যন্তও এই বাসের বুকিং ও টিকেটিং ব্যবস্থা ছিল সনাতনী পদ্ধতিতে। মালিহা কাদির যখন উন্নত বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করে দেশে ফিরে এসে কিছু করার কথা ভাবলেন, বেছে নিলেন এই মাধ্যমকে। বলাই বাহুল্য, ভিড় ঠেলে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটার যে বিড়ম্বনা, সেটা কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে পেরেছে তার এই সহজ ডট কম। শুধুই ব্যবসার খাতিরে ব্যবসা নয়, প্রিয়জনের কাছে পৌঁছানোর একটা টিকেট হাতে পৌঁছে দিতে পারার যে আনন্দ, সেটা এরমধ্যেই পেয়ে গেছেন মালিহা কাদির, পেয়ে গেছেন পুরো সহজ পরিবার! মালিহা কাদির জানালেন, সহজের এই পথচলাটা সহজ ছিল না, এখনো বেশ সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়েই যেতে হচ্ছে তাদের। মূলত বেশিরভাগ বাস অপারেটরেরই অনলাইন মনিটরিং ব্যবস্থা ছিল না। যাত্রীদের সেবা দেওয়ার স্বার্থে সহজ বাস অপারেটরগুলোকে সেই সফটওয়্যার নিজেরাই করে দিয়েছে। এর ফলে দেশের অধিকাংশ রুটের শীর্ষ বাস অপারেটরগুলোর টিকেট আর কাউন্টারেই সীমাবদ্ধ নেই, আপনার স্মার্টফোনটাও রীতিমতো সব বাসের কাউন্টার হয়ে গেছে! চাইলেই যেকোনো দিন যেকোনো সময়ের টিকেট বুকিং দিয়ে কেটে নিতে পারেন। আর ১৬৩৭৪-এ ফোন করলে সহজ টিমই সেটা করে আপনার বাসায় বা অফিসে পৌঁছে দেবে। বিভিন্ন সময় অনেক অফার থাকে, ওয়েবসাইটে চোখ বুলালেই পেয়ে যাবেন সব তথ্য। মালিহা কাদিরের এই অনন্য উদ্যোগ নেওয়ার সাহসটা আসলে তার পারিবারিক অনুপ্রেরণা আর কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই। সিঙ্গাপুরে তিনি কাজ করেছেন ভিসতাপ্রিন্টের সাথে। নোকিয়ার ডিজিটাল কন্টেন্ট সার্ভিস লাইফ টুলসের স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্টসের কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে মালিহার ঝুলিতে। তাছাড়া হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের এমবিএ তার এই বিশাল পরিসরের পথচলায় অনেকটাই সহযোগী হয়েছে। সহজ নিয়েই সব স্বপ্ন এখন মালিহা কাদিরের। এটাকে কীভাবে আরও জনপ্রিয় করে তোলা যায় সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। শুধুই বাস নয়, লঞ্চ আর হোটেলের বুকিংও শুরু করেছেন তারা। তিনি মনে করেন, সাফল্যের পথ ধরে এগোনোর মূলমন্ত্র সবসময়ই লক্ষ্য ঠিক রাখা। তার নিজের বেলাতেও সেটি হয়েছে। মালিহা মনে করেন, এই প্রজন্ম উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা নিয়ে এ রকম এগিয়ে আসবে এবং উন্মুক্ত হবে সম্ভাবনার হাজারো দুয়ার।
প্রোপার্টির খোঁজ আরও সহজ করতে
মোহাম্মদ শাহীন
ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও, প্রোপার্টি বাজার
কর্মব্যস্ত জীবনে আমরাও আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি অনলাইন সেবার উপর। আর তা যদি হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় মাধ্যম, তাহলে তো কথাই নেই। মোহাম্মদ শাহীন আরও এক দশক আগে থেকেই যখন ই-কমার্স নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হন, চেয়েছিলেন এই প্রোপার্টি নিয়েই করবেন। তারও আগে অবশ্য তিনি বাসা ভাড়ার এক ওয়েবসাইট খুলেছিলেন, সেটাও বেশ সাড়া পেয়েছিল। প্রোপার্টি বাজার মূলত বাসা ভাড়া, বিক্রি এমনকি দেশের সব এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয়ের খবরগুলো এক কাতারে এনেছে। আমাদের জন্য ব্রাউজ করে জিনিসটা বের করা যত না সহজ, শাহীনের জন্য কাজটা ছিল ততই কঠিন। একে তো আমরা অনলাইনে অতটা নির্ভরশীল হয়ে উঠিনি, দ্বিতীয়ত একটা আস্থার দরকার হয়। শুরুতে বাড়িওয়ালা-ডেভেলপারদের বোঝাতে হয়েছে, পরে তারাই উপকারিতা টের পেয়ে আসতে শুরু করেছেন ওয়েবসাইটে। সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে কেউ যখন কোনো প্রোপার্টি কিনবে, দেখে শুনে যাচাই করেই সেটা কিনতে চায়। আর এই কষ্টের কাজটা গুছিয়ে দিতেই কাজ করে প্রোপার্টি বাজার। পছন্দসই প্রজেক্ট সহজেই খুঁজে পেতে রয়েছে অনেকগুলো অপশন। ঢাকাই নয়, দেশের সব শহরেই পাওয়া যাবে জমি আর বাড়ির খোঁজ। রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোরও নতুন প্রজেক্ট চলে আসে এখানে আগে ভাগেই। প্রোপার্টি বাজারের উদ্যোক্তা শাহীন নিজেও একজন প্রযুক্তি জগতের মানুষ। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা শেষ করে এমবিএ করেছেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিসহ একাধিক পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য তিনি। ২০১৩ সালে তিনি বেস্ট ভার্চুয়াল রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পদক পান, ২০১৪-তে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার টপ সেভেন এন্টারপ্রেইনারের তালিকায় চলে আসেন। এছাড়া তার বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য গুগলের একাধিক অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে ছিলেন তিনি। কাজ করেছেন তিনি সেলবাজারের মতো ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনের প্রতিষ্ঠানে। মোহাম্মদ শাহীন মনে করেন, কিছুটা সময় নিলেও কয়েক বছরের মধ্যেই অনলাইন নির্ভরতা অনেক বাড়বে। ধৈর্য ধরে এই মাধ্যমে কাজ করে যেতে পারলে অগ্রগতির সম্ভাবনাও অনেক। আর যদি আমাদের প্রতিদিনের মৌলিক চাহিদাগুলোকে নিয়ে কাজ করা যায় তাহলে তো অফুরান সম্ভাবনা। সেরকম চিন্তা থেকেই অর্গানিক খাদ্যের সবজি বাজার নিয়ে কাজ করছেন তিনি। নিজেদের তদারকিতেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সবজি সংগ্রহ করে দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেন তারা। এছাড়া সহজেই গাড়ির জন্য ড্রাইভার খুঁজে পেতে করেছেন তিনি ড্রাইভার বিডি।
আমরা যে রকম ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, সেগুলো বিনির্মাণ হবে আসলে শাহীনের মতো উদ্যোগীদের হাত ধরেই। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন আমাদের চাহিদাগুলোকে হাতের মুঠোয় এনে দিতে। সেগুলো সফলতার পথ ধরে আরও এগিয়ে যাবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ক্লিকেই ঘরে পৌঁছে যাবে চাল ডাল
জিয়া আশরাফ
উদ্যোক্তা, চালডাল ডট কম
জিয়া আশরাফের বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। এখানেই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা। এরপর নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মার্কেটিংয়ে বিবিএ করার জন্য। এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করেন ২০১১ সালে। পড়াশোনা শেষ করেই যোগ দেন ওয়ান ব্যাংকে। কিছুদিন চাকরি করে তার মনে হতে থাকে নতুন কিছু করা উচিত। ২০১২ সালের শেষের দিকে নানা কারণে চাকরি ছেড়ে দিলেন। প্ল্যান করতে শুরু করলেন কিছু একটা করবেন! ছোটবেলার বন্ধু ওয়াসিম আলী ও তেজাস বিশ্বনাথের সাথে আলোচনা করতে থাকেন কী করা যায়। ঠিক করলেন ব্যবসা করবেন। তখন তারা মার্কেট ঘুরে দেখলেন বাংলাদেশের অনলাইন বাজার ধীরে ধীরে বাড়ছে। তারা ঠিক করলেন অনলাইনেই কোনো একটি ব্যবসা শুরু করবেন। কিন্তু কোন সে ব্যবসা! ২০১৩ সালের শুরুর দিকে জন্ম নেয় ‘চালডাল ডট কম’। প্রথম দিকে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উত্পাদনকারী কোম্পানির কাছে গেলেন এবং তাদেরকে এই ধরনের ব্যবসা করতে চান বলে জানালেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো সাহায্য পাননি। তবুও দমে যাওয়ার পাত্র নন তারা। তারা নিজেরা বিভিন্ন দ্রব্য নিজেদের টাকায় কিনে এনে নিজেরাই সেগুলো ডেলিভারি করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম দিকে গুলশান, বনানী, বারিধারাতে তারা সার্ভিস দেওয়া শুরু করেন। ফেসবুক পেজ ও ওয়াবসাইট তৈরি করার ফলে প্রথম দিন থেকে অর্ডার পেতে শুরু করেন। তারা তাদের ওয়াবসাইটকে খুবই সিম্পল রাখার চেষ্টা করেছেন, যাতে কারো কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা না হয়। তারা বিক্রি করতে শুরু করেন সবধরনের চাল, ডাল, তরকারি, সবজি, মাছ, মাংস, ফ্রোজেন ফুড, সাবান, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, স্টেশনারি পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবধরনের পণ্য। ফেসবুকে, নিজেদের পরিচিতদের মধ্যে এই শপকে পরিচিত করে তুলতে থাকেন তারা। জিয়া আশরাফ জানালেন, যখন তারা অনলাইন শপ শুরু করেন, তখন তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মানুষের বিশ্বাস অর্জন। তাদের পণ্যের মান যে ভালো, তাদের সার্ভিস যে ভালো এবং অর্ডার করা যে খুব সহজ তা সকলকে জানানোর চেষ্টা করেন তারা। জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স একটি অনেক ভালো সেক্টর। এই সেক্টরে কাজে প্রচুর সুযোগ আছে। কিন্তু প্রয়োজন মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারা। ই-কমার্স ব্যবসার একটি বড় মার্কেট বাংলাদেশে আছে ফলে কেউ যদি মনে-প্রাণে এই ব্যবসা করে সে সফল হবেই।’ চালডাল ডট কম ২০১৫ সালে এসে একটি বিশাল বড় ব্র্যান্ড হয়ে গেছে। নিজেদের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে জিয়া বলেন, ‘আমরা চাই ‘চালডাল ডট কম’ সারা বাংলাদেশের মানুষকে অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করবে।’ ( সুত্রঃ ইত্তেফাক : ০৬ জুলাই, ২০১৫)