সিলেটের কুমারগাঁওয়ে কিশোর রাজনকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িত এমন চারজনকে শনাক্ত করা গেছে। পেটানোর সময় এই চারজনই উপস্থিত ছিল।
অনলাইন ডেস্কঃ ১৩ জুলাই ২০১৫
সিলেটে একজন কিশোরকে চোর সন্দেহে ভিডিও ক্যামেরার সামনে পেটানোর পর তার মৃত্যু ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার নিষ্ঠুরতা দেখে মানুষজনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ।
অনেকেই তাদের সেই ক্ষোভ ও যন্ত্রণার কথা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে, মন্তব্য করে অকপটে প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশে কোনো একটি ঘটনায় এরকম স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া সাম্প্রতিক কালে খুব একটা দেখা যায়নি।
বেশিরভাগ প্রতিক্রিয়াতেই ক্ষোভের পাশাপাশি তারা ঘৃণা ও তাদের অসহায়ত্বের কথাও লিখছেন।
তাদের ক্ষোভ এতোটাই তীব্র যে কেউ কেউ রাজন নামের ওই কিশোরকে যেভাবে ‘পিটিয়ে হত্যা’ করা হয়েছে, নির্যাতনকারীদেরকেও সেই একইভাবে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এই দাবি জানিয়ে একজন মন্তব্য করেছেন, “আমার এ ইচ্ছায় মানবিকতা যদি আহত হয়, রাষ্ট্র যদি নাখোশ হয়, তবুও নড়বো না একচুল এ দাবি থেকে …।”
ভিডিওটি দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। রাজনের অসহায় নিষ্পাপ মুখ দেখে মনে হল, পৃথিবীটা এত কদর্য হতে পারে, সেটি মৃত্যুর খানিক আগেও বোধহয় সে বুঝতে পারেনি…
ভিডিওটি দেখে যে মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়েছে সেটিও তারা প্রকাশ করেছেন অকপটে। একজন লিখেছেন, “পাড়ার এমন কোন বাড়ি নেই যার গাছের ফল আমি বা আমার বন্ধুরা চুরি করিনি! রাজন হত্যার ভিডিওটি দেখে খুব কষ্ট পেলাম! আর সহ্য হচ্ছে না! তাই আমি চিৎকার করে বলছি; রাজনের মতো আমিও চোর! আমায় হত্যা করো!”
আরেকজনের মন্তব্য এরকম: “ভিডিওটি দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। রাজনের অসহায় নিষ্পাপ মুখ দেখে মনে হল, পৃথিবীটা এত কদর্য হতে পারে, সেটি মৃত্যুর খানিক আগেও বোধহয় সে বুঝতে পারেনি।”
কেউ লিখেছেন তারা ভিডিওটি দেখতে চান নি। কারণ এটা দেখার সাহস নেই তাদের। যারা দেখেছেন তারাও লিখেছেন যে কিছুক্ষণ দেখার পর তারা সেটা আর দেখতে পারেন নি।
একজন মন্তব্য করেছেন: “রাজন, যে মাটিতে তুমি শুয়ে আছো এ তোমার দেশ ছিল। এখানেই তুমি ভূমিষ্ঠ হয়েছো; হামাগুড়ি দিতে দিতে একদিন দাঁড়িয়ে এই দেশকেই তুমি দেখেছ। আজ মাতৃভূমি তোমাকে যে দাম দিল- এ আমার জাতির লজ্জা। তোমার জীবনের শেষ আর্তিগুলো ফ্রেম-বন্দি- কিন্তু আমি ভয়ে চোখ সরিয়ে নিয়েছি।”
একবার ভাবলাম কিছুই লেখার দরকার নেই। লিখে কী হবে? কিন্তু তারপর লিখলাম। হয়তো কাল রাত থেকে মাথার ভেতরে যে যন্ত্রণা কাজ করছে সেটা উগড়ে দেয়ার জন্যই লিখলাম। আমরা এভাবে অনেক কিছু লিখি, লিখে দায়মুক্ত হতে চাই হয়তো..
কেউ কেউ লিখেছেন, তারা এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা না করেও থাকতে পারেন নি।
একজনের স্ট্যাটাস: “একবার ভাবলাম কিছুই লেখার দরকার নেই। লিখে কী হবে? কিন্তু তারপর লিখলাম। হয়তো কাল রাত থেকে মাথার ভেতরে যে যন্ত্রণা কাজ করছে সেটা উগড়ে দেয়ার জন্যই লিখলাম। আমরা এভাবে অনেক কিছু লিখি, লিখে দায়মুক্ত হতে চাই হয়তো।”
অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনারও কোনো বিচার হবে না। তাই এই নিষ্ঠুরতার কোনো প্রতিবাদ, ক্ষোভ বা ঘৃণা কিছুই জানাতে চান না তারা।
অপ্রকাশিত এরকম হাজারো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে। কিছুদিন হয়তো তা নিয়ে হৈচৈ হবে তারপর আরেক ঘটনার আড়ালে তা হারিয়ে যাবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিচার হয়তো শুরু হয় তারপর আর কোনো খবর থাকে না
এরকম অসহায়ত্ব প্রকাশ করে একজন লিখেছেন, “অপ্রকাশিত এরকম হাজারো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে। কিছুদিন হয়তো তা নিয়ে হৈচৈ হবে তারপর আরেক ঘটনার আড়ালে তা হারিয়ে যাবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিচার হয়তো শুরু হয় তারপর আর কোনো খবর থাকে না।”
কিশোর রাজনের ওপর নির্যাতনের ছবিতেও সয়লাব হয়ে গেছে ফেসবকু।
তার ছবি দিয়ে ব্যানার, গ্রুপ ইত্যাদি তৈরি করে সেখানে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হচ্ছে।
কেউ কেউ ঢাকার শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানোর আহবান জানিয়েছেন।
একজন লিখেছেন, “আজ ঘণ্টা খানেক সময় ফেসবুক ছেড়ে শাহবাগে আসুন বিকেল ৪টায় শিশু রাজন হত্যার প্রতিবাদ জানাতে !!” ( সুত্রঃ বিবিসি বাংলা, ১৩ জুলাই ২০১৫)