অনলাইন ডেস্কঃ ১৭ আগস্ট ২০১৫
গর্বিত বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সেরা বিয়ে’। এই বর অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বাণিজ্যিক এলাকা অবার্ন কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র সেলিম মেহাজের। গত শনিবার সিডনির লিডকম্ব শহরতলিতে বান্ধবী আয়েশার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। ওই বিয়ের জমকালো অনুষ্ঠানে ছিল চারটি হেলিকপ্টার, একসারি লিমুজিন, ফেরারি, ল্যাম্বরগিনি ও মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণে ছিল একদল পুলিশ। অনুষ্ঠানটি অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ শোরগোল তুলেছে।
শোরগোলের অনেকটাই নেতিবাচক। বিয়ের অনুষ্ঠানের এই আয়োজনে লিডকম্ব শহরতলির বাসিন্দারা কিন্তু মোটেই খুশি নয়। বরং স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় তাঁরা বেশ বিরক্তই বলা যায়।
অবার্নের ডেপুটি মেয়র সেলিম মেহাজ কারাগার থেকে তাঁর বাবার মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। নিজের বিয়েতে বাবার উপস্থিতি চাইছিলেন তিনি।
গত শনিবার অস্ট্রেলিয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানের শুরুতেই অবার্ন কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র মেহাজের হেলিকপ্টারে করে একটি স্থানীয় পার্কে নামেন। সঙ্গে ছিল বরযাত্রী। লাল গালিচা মাড়িয়ে তাঁরা ব্যয়বহুল গাড়িবহরের কাছে যান। এ সময় চারপাশেই ছিল ক্যামেরা। পাঁচ কোটি ডলার মূল্যের গাড়িবহরে তাঁরা পৌছান লিডকম্ব শহরতলির ফ্রান্সেস স্ট্রিটে, যেখানে অপেক্ষায় ছিলেন কনে।
বিয়ের অনুষ্ঠানের আগের দিন শুক্রবার রাতে লিডকম্বের ফ্রান্সের স্ট্রিটের বাসিন্দাদের ‘লেটার বক্সে’ একটি চিঠি পোস্ট করা হয়। এই চিঠিতে এলাকার রাস্তা গাড়িবহরের জন্য খালি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। চিঠিতে কড়া ভাষায়ই বলা হয়, রাস্তায় অবৈধভাবে পার্ক করে রাখা গাড়ি পুলিশ সরিয়ে নেবে।
তবে পুলিশের ভাষ্য, বিয়ের অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। রাস্তার ভিড় ও সড়কের গাড়ির চলাচল স্বাভাবিক রাখতে তাঁরা কাজ করেন।
ওই চিঠিতে একটি ফোন নম্বর উল্লেখ করা হয়েছিল, যেখানে পরবর্তী সময়ে ফোন করলে এক ব্যক্তি নিজেকে বরের বন্ধু বলে পরিচয় দেন এবং কথা বলার সময় নেই বলেন।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা ক্রিস লেয়ার্ড বলেন, আগে থেকে এই ব্যাপারে কোনো তথ্যই জানানো হয়নি। ওই পরিবারকে এর খরচের জন্য চিঠি পাঠাতে তিনি স্থানীয় পুলিশ প্রধানকে অবহিত করবেন।
পুলিশের মুখপাত্র ফেয়ারফ্যাক্স মিডিয়াকে বলেন, অবার্ন কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র বিয়ের জমকালো অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানাননি।
বিয়ের অনুষ্ঠানের জমকালো আয়োজনের মধ্যে আরো ছিল বিশাল ড্রামের বাজনা, জেট প্লেনের উড়ে যাওয়া এবং বিমানের মাধ্যমে বিশেষ চিহ্ন ফুঁটিয়ে তোলা। আর পুরো ব্যাপারটি নিরাপত্তা দিয়েছেন সাবেক ফুটবলার জন হপোয়েট। আর রাস্তায় বর ও কনের সঙ্গে নাচেন স্বজন ও বন্ধুরা।
অনুষ্ঠানে টিভি ক্যামেরায় নিচের বিয়ের আয়োজন সম্পর্কে গর্বের কথাই বলেন সেলিম মেহাজের।
অস্ট্রেলিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো শহরের পার্কে বা বাড়ির কাছে বিমান চলাচল ও হেলিকপ্টার নামানোর নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। কিন্তু মেহাজের বিয়ের অনুষ্ঠানে এমন কোনো নিয়ম মানা হয়নি।
অবার্নের কাউন্সিলর আইরিন সিমস বলেন, তিনি অনেক বাসিন্দার অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কাউন্সিলে এই ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হবে।
সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হওয়া সেলিম মেহাজের জন্য নতুন নয়। ২০১২ সালে অসাবধানে গাড়ি চালানোর জন্য মামলা হয় তাঁর নামে। এক নারী ও তাঁর মেয়েকে গাড়িচাপা দেন মেহাজের। ২০১৩ সালে ওই মামলা থেকে খালাস পান তিনি।
তবে এসব অভিযোগে সেলিম মেহাজের তেমন একটা তোয়াক্কা করেন না বলেই ধারণা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি দাবি করেন, তাঁর কাজ ১০০ ভাগ সঠিক। ( সুত্রঃ এনটিভি বিডি)