আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত: জাফর ইকবাল

আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত: জাফর ইকবাল

অনলাইন ডেস্কঃ ৩০ আগস্ট ২০১৫

শিক্ষাবিদ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এ স্লোগানের এত বড় অপমান আমি আমার জীবনে কখনো দেখি নাই।’

শাবিপ্রবিতে আজ রোববার উপচার্যের (ভিসি) অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনরত শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাঁদের ওপর হামলা করার সময় হামলাকারীরা জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছিল।

ঘটনার প্রতিবাদে অধ্যাপক জাফর ইকবাল উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে প্রবল বৃষ্টিতে একাই অবস্থান নেন। বৃষ্টিতে ভিজে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে ছাত্ররা যেভাবে আমাদের শিক্ষকদের ওপরে হামলা করেছে, তারা যদি আমার ছাত্র হয়ে থাকে, তাহলে আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত-  তুমি এ রকম একটা ছাত্র তৈরি করেছো।’

বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সাংবাদিকরা হাজির হন জাফর ইকবালের কাছে। আর সাংবাদিকদের কাছেই তিনি এসব ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো গলায় দড়ি দিয়ে মরছি না। কিন্তু আমি তীব্র যন্ত্রণায় ভুগছি।’

জাফর ইকবাল বলেন,  ‘আজকে আমার জীবনে একটা অভিজ্ঞতা হলো। আমি আজকে যে ঘটনা নিজের চোখে দেখেছি, এ ধরনের ঘটনা আমি নিজের চোখে দেখব তা বিশ্বাস করি না।’

ছাত্রলীগের নাম উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমার কাছে খুব কষ্ট লেগেছে যখন আন্দোলনকারী ছেলেরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছে; ছাত্রলীগের ছেলেরা। এ জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এ স্লোগানের এত বড় অপমান আমি আমার জীবনে কখনো দেখি নাই।’

ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দায়ী করে জাফর ইকবাল বলেন, ‘এটা কেমন করে সম্ভব আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমার শিক্ষকদের সাথে এ রকম ব্যবহার করতে পারে। এবং আমাকে এটা বসে থেকে দেখতে হয়েছে। পুরো ব্যাপারটি ঘটেছে কী জন্য? কারণ ভাইস চ্যান্সেলর তাদের লাগিয়ে দিয়েছে এ শিক্ষকদের এখান থেকে সরানোর জন্য।’

উপাচার্যবিরোধী এ আন্দোলন থামানো সম্ভব না জানিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ‘যদি মনে করেন এভাবে একটি আন্দোলন থামানো সম্ভব তাহলে তিনি (উপাচার্য) খুব ভুল করেছেন। সম্ভব না। কারণ এখানে যে শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন তাঁরা কোনো পদের জন্য আন্দোলন করছেন না। কোনো পজিশনের জন্য আন্দোলন করছেন না। তাঁরা আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টি বাঁচানোর জন্য। কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁরা তৈরি করেছেন। এ ভাইস চ্যান্সেলর তৈরি করেন নাই। আমি আজ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। যেখানে ছাত্ররা শিক্ষকদের ওপর হামলা করে এবং যেখানে একজন ভিসি তার প্ররোচনা দেয়; সেটা সহ্য করা সম্ভব না।’

আন্দোলনের বিষয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষকরা মিথ্যাবাদী উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করছেন, আমি তা পূর্ণভাবে সমর্থন করি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সবারই আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। আমি নিজেও একসময় এই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলন করেছি।’

সকালে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলার পর থেকেই নীরব ছিলেন জাফর ইকবাল। উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে বসেই তিনি শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার দৃশ্য দেখেন। এর পর থেকেই প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ভিজে ওই জায়গাতেই বসে ছিলেন জাফর ইকবাল।

পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকালে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে সকাল ৮টার দিকে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের’ ব্যানারে অবস্থান নেন উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকরা। এরও এক ঘণ্টা আগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে উপাচার্য ভবনের নিচতলা দখলে নিয়ে নেয়। সকাল সাড়ে ৮টায় উপাচার্য ড. এম আমিনুল হক ভূঁইয়া কার্যালয়ে এলে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা তাঁকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে বাধা দেন। এরপরই শিক্ষকদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে ছাত্রলীগ। আন্দোলনরত শিক্ষকদের ব্যানারও কেড়ে নেয় ছাত্ররা।

উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম ও আর্থিক অস্বচ্ছতা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তাঁর পদত্যাগ দাবিতে গত ১৩ এপ্রিল থেকে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষকদের একাংশ। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭টি প্রশাসনিক পদ ছাড়েন ৩৫ জন শিক্ষক, যাঁদের মধ্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালও ছিলেন।

গত ২৪ আগস্ট উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি উন্নয়নের আহ্বান জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জিন্নাত রেহানা স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ আহ্বান জানানো হয়। চিঠিতে আন্দোলন বন্ধ রেখে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনায় মনোযোগী হতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ‘আন্দোলন বন্ধ করা’সহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষকরা। ( সুত্রঃ এনটিভিবিডি)