২০২০ সাল নাগাদ ভাসমান শহরে লোকজন বাস করা শুরু করবে ! (ভিডিও)

২০২০ সাল নাগাদ ভাসমান শহরে লোকজন বাস করা শুরু করবে ! (ভিডিও)

অনলাইন ডেস্কঃদিন দিন উন্নত হচ্ছে প্রযুক্তি। মানুষ এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে যাত্রা করছে। ঠিক সেই সঙ্গে বসবাসের উপযোগিতাও হারাচ্ছে পৃথিবী। প্রতি মুহূর্তে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম বিভিন্ন শহর। মানুষ কী তাহলে হার মানবে! মনে হয় না। কারণ এবার পানির উপরে বসবাস করার পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেছে বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া নামের দ্বীপরাষ্ট্র ভাসমান শহর নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে।

দেশটি ইতিমধ্যে সি স্টিডিং ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছেন, প্রায় ২০২০ সাল নাগাদ ভাসমান শহরে লোকজন বাস করা শুরু করবে।

ফ্রেঞ্চ পলেনিশিয়ার তাহিতি নামক দ্বীপে শহরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশটি জানিয়েছে, নির্মাণাধীন শহরগুলো আধা-স্বাধীন শহর হিসেবে গড়ে উঠবে। অর্থাৎ শহরগুলো এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ভেসে চলতে পারবে। যদি কোন পরিবার মনে করে বর্তমান লোকাল সরকারের সঙ্গে তারা বসবাস করবে না, তাহলে ভেসে অন্য শহরে গিয়ে বসবাস করতে পারবে।

সি স্টিডিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠান জানিয়েছেন, শহরটি নির্মাণ করা হবে প্রশান্ত মহাসাগরে। তবে পুরোপুরি খোলা সাগরে রাখা হবে না। পুরো শহরের চারপাশে একটি বাঁধ দেওয়া থাকবে। এই বাঁধটি সাগরের বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে শহরকে রক্ষা করবে। এর মধ্যে যান চলাচলের জন্যও রাখা হবে সীমিত স্থান। এই স্থান দিয়েই বড় যানবাহন শহরের ভেতর প্রবেশ করবে।

পেপালের মালিক পিটার থিয়েলই সি স্টিডিং ইনস্টিটিউটের প্রধান। তিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে গবেষণা করে ভাসমান শহরের একটি মডেল দাঁড় করিয়েছেন।

তিনি জানান, যেভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মনে হয় বিশ্ব একদিন পানির নিচে তলিয়ে যাবে। তখন পানির উপরে অথবা পানির নিচে বসবাস করার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাসমান শহর তৈরি হলে এক শহরের সঙ্গে আরেক শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে।

মোট ৮টি মূলনীতি নিয়ে সি স্টিডিং ইনস্টিটিউট পরিচালিত হয়। এ মূলনীতিগুলো হলো ক্ষধার্তকে খাবার দেওয়া, অসুস্থকে সুস্থ করা, বিশ্বকে শক্তিশালী করা ইত্যাদি প্রধাণ। তার মধ্যে প্রথমটিই হলো ভাসমান শহর।

এবিসি নিউজ থেকে জানা যায়, দেশটির সরকার সি স্টিডিং ইনস্টিটিউটের সঙ্গে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিপত্রে সরকার সে প্রতিষ্ঠানটিকে দুটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এক, নির্মাণাধীন শহরটি অবশ্যই লোকাল জনগণের উপকারের আসতে হবে। দুই, শহরটি অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হতে হবে।

ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া স্বাধীন দেশ নয়। এর মালিকানা ফ্রান্সের। তাই ফ্রান্স সরকার গ্রিন সিগন্যাল দিলেই খুব অল্প সময়ে মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। মাত্র দুই বছরের মধ্যে বসবাস উপযোগী হবে ভাসমান শহরটি।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক রানডলফ হ্যানসেন বলেন, ‘ভাসমান শহরের বসবাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে দেশটির জনগণ। সে জন্য আমরা খুবই আনন্দিত। নির্বাচিত স্থানটিও খুব সুন্দর। আগে এখানে এমন প্রকল্প করার পরিকল্পনা করা হয়নি। তবে আমার ধারণা, এটা খুব দ্রুত করা সম্ভব না। আমরা এ অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত কম স্রোতের স্থান খুঁজছি। কারণ আমরা শহরটিকে খোলা পানির উপরে ছেড়ে দিতে চাচ্ছি না। আধুনিক প্রযুক্তিতে খোলা ভাবেও করা সম্ভব কিন্তু অনেক ব্যয়বহুল।’

অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চাইছেন, শহরটি একটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকবে। কোন অ্যাপার্টমেন্ট সহজেই যেন বাইরে যেতে না পারে এ জন্যই এ ব্যবস্থা

তিনি আরো জানান, শহরটিতে থাকবে নানা সুযোগ-সুবিধা। যেমন মাছ চাষের খামার, স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা গবেষণা সুবিধা এবং টেকসই শক্তি পরাশক্তি উন্নয়নের মতো ব্যবস্থাও এর মধ্যে থাকবে। প্রথম শহরে থাকবে পাঁচটি আয়তকার প্লেটের ডিজাইন। তারপর সেই পাঁচটি থেকে বের করা হবে ১১টি শাখা-প্রশাখা। একটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আরেকটি প্ল্যাটফর্মের যোগাযোগ স্থাপন করা হবে যেন পরস্পরের ভারসাম্য রাখতে পারে।

শহরের ভবন নির্মাণ করা হবে ১০০ বছরের টার্গেট করে। অর্থাৎ ধরা হবে, একটি ভবন প্রায় ১০০ বছর টিকবে। নির্মাণে পরপরই শহরটিতে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষ বাস করতে পারবে। প্রথমটি হবে পাইলট প্রকল্প। পাইলট প্রকল্প সফল হলে এর পরিধি বাড়ানো হবে।

প্রতিষ্ঠানটি আশা করছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ এ প্রকল্পের আওতাধীন থাকবে। অর্থাৎ তখন ভাসমান শহরের বসবাস করার প্রবণতা বেড়ে যাবে। এবং এটি দিন দিন বেড়েই চলবে। (সূত্রঃনতুনসময়.কম)

পাঠকদের জন্য দেওয়া হলো ভাসমান শহরের ভিডিও-