কুকুরের লেজে তারাবাতি 

কুকুরের লেজে তারাবাতি 

ছবিঃ সংগৃহিত

আজ ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মনে পড়লো , ভাবলাম বলে ফেলি ! আমার শৈশব কেটেছে বড় আর ছোট ভাইদের সাথে , তাই পুতুল খেলার পাশাপাশি দৌঁড় ঝাপ , ব্যাডমিন্টন খেলা আড্ডা দেওয়ার অভ্যাস ছিল । একবার আমি যখন চতুর্থ শ্রেণীর শেষের দিকে আমার বাবাকে চাকুরীর স্বার্থে এক বৎসরের জন্যে আলজেরিয়া আর ইংল্যান্ডে কাটাতে হলো । আমরা তখন চার ভাই বোন , মা তার সুবিধার্থে আমাদের নিয়ে একটা বৎসর গ্রামে আমাদের নানাবাড়িতে কাটালেন । প্রথম প্রথম আমরা অখুশি হলেও আমাদের ভাইবোনদের দূর্দানত ভাল সময় কেটেছে তখন – এখন আমার তাই ই মনে হয় । ভাবলাম গ্রামে থাকব , গ্রামের স্কুলে পড়বো , কেমন না জানি হবে সহপাঠিরা । স্কুলের শিক্ষকরা বেত দিয়ে মারধোর করবেন এতটুকু নিশ্চিত !

আমি আমার দুই মামা আর দুই মামাতো ভাই যে ক্লাসে পড়তো , একই ক্লাসে ভর্তি হলাম । সহপাঠিরা , অন্য শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীরা এমনকি শিক্ষকরাও আমাদের শহুরে পোশাক আশাক , চালচলন কথাবার্তায় বিনোদিত মনে হলো ! অন্য ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীরা আমাদের ক্লাসে একটু উঁকি না দিয়ে হেঁটে যেতে পারতো না । একটা রচনা লিখে শেষে আমি ” the end ” লিখে যে প্রশংসা আর আদর পেলাম শিক্ষকের কাছে , অনেক বড় কিছু করার পরেও হয়তো এমন প্রশংসা পাইনি ! খারাপ লাগতো যখন আমার খেলার সাথীদের ওরফে মামা আর কাজিনদের আমার সাথে তুলনা করা হতো আর ওরা খামোখাই বকা খেতো ! কিন্তু একটু পরই তা ভুলে গিয়ে আবার আমার সাথেই খেলতো ! অল্পদিন পরেই পরীক্ষা – আমার আশংকা বিভীশিকায় পরিণত হলো যখন দেখলাম সব খারাপ ছাত্রদের আমার আশে পাশে বসিয়ে দেয়া হলো ! বলাই বাহুল্য খারাপের মধ্যে কোন ছাত্রী ছিল না । আমাকে আশ্বস্ত করে শিক্ষক বললেন ” ভয় পেয়ো না – ওরা দেখেও ঠিকমত লিখতে পারবে না ! ”

বাড়ির পাশেই ছিল বিশাল মাঠ – সেখানে শুক্রবারে হাট বসতো ! আমার এখন ভাষায় প্রকাশ করার মত ক্ষমতা নেই কি আনন্দ পেতাম সেই হাটে যেয়ে ! মা , খালা মামারা দশ বিশ পয়সা দিতেন , বড়মামা পনচাশ পয়সা – বাতাসা , খেলনা , মাটির পুতুল কত কিই না কিনতে পারতাম সেই পয়সা দিয়ে ! খেলার মধ্যে ওদের সাথে দৌঁড়ঝাঁপ , ফুটবল , ব্যাডমিন্টন , কাবাডি , রান্না বাড়ি সব খেলেছি বাড়ির উঠোনে বা পাশের সেই বিশাল মাঠে ! সবে বেরাতের সন্ধ্যায় ওরা ঠিক করলো একটা কুকুরের লেজে তারাবাতি লাগাবে – আমিও উৎসাহিত , যদিও আমি সাংঘাতিক ভয় পাই কুকুরে ! কি যে কসরত ওদের করতে হলো তারাবাতি লাগাতে , তারপর কুকুর দিল দৌঁড় আর আমরা সব কুকুরের পিছু – যতক্ষণ তারাবাতি জ্বলল কুকুর দৌড়ালো আর আমরাও ! আমি আর একবারই জীবনে তেমন জোরে দৌঁড়েছি , সেটা কোনো রেসে নয় – পরীক্ষা করতে চাঁদ আমার থেকে বেশী জোরে চলতে পারে কি না !

ডাঃ শাহনাজ পারভিন