জাতি গঠনে মেধার মূল্যায়ন অপরিহার্য। দেশ ও জাতির উন্নতি করতে হলে মেধাবীদের সম্মাননা জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। সুদীর্ঘ এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা যোগাতে কাজ করে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিস্থ ‘রংধনু অজ-বাংলা কালচারাল সোসাইটি ইনক’ সংগঠন ।
সংগঠনটির উদ্যোগে গত ৩ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার সন্ধ্যায় লাকেম্বায় সিনিয়র সিটিজেন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এ বছরের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান ‘এনুয়্যাল ট্যালেন্ট এওয়ার্ড অব রংধনু’। সাংস্কৃতিক সম্পাদক তামান্না রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে অনুষ্ঠানটির শুরু হয়। এরপর স্থানীয় শিশু-কিশোরদের দলীয় অংশগ্রহণে মনোমুগ্ধকর গান ও নাচ হয়। সাংস্কৃতিক পর্বটি পরিচালনা করেন তামান্না রহমান। একক গান পরিবেশন করে নাবিলা ও একক নৃত্যে দর্শকদের বিমোহিত করে তুলে অপ্সরা l দেশাত্মবোধক, আধুনিক ও পাহাড়ী গানে দলীয় নৃত্যের তালে সুর-ঝংকারে মঞ্চ মাতিয়ে তুলে কুমকুম, আদ্রিতা, এঞ্জেলা, আফসারা, আফরা, মারসিয়া, আদ্রিনা, জারাহ্, আয়শা, শার্লি, প্রিসিলা, ইশিকা, তালহা, ফারহানসহ আরও অনেকে। এদের প্রত্যেকের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো এক কথায় অসাধারন নজর কাড়া। এ সময় উপস্থিত অতিথিদের সকলেই আনন্দে উচ্ছ্বসিত হোন এবং জোর করতালি দিয়ে প্রশংসা করেন।
নৈশভোজের জন্য মধ্য বিরতি দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। স্বাগত ব্ক্তব্য রাখেন সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি এমএ ওয়াহাব মিয়া, ব্ক্তব্য রাখেন মো. আব্দুল মোতালিব। বিশেষ ব্ক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের লাকেম্বা থেকে নির্বাচিত লেবার পার্টির এমপি জিহাদ ডিব। শুভেচ্ছা ব্ক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহ। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের ওয়েন্টওর্থভিল ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমন সাহা, ক্যান্টারবারী-ব্যাংকসটাউন এলাকার কাউন্সিলর লেবার পার্টির মোহাম্মদ নাজমুল হুদা ও লিবারেল পার্টির শাহে জামান টিটুও এ সময় সংক্ষিপ্ত ব্ক্তব্য রাখেন । এছাড়াও ব্ক্তব্য রাখেন ক্যাম্পবেল টাউন কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী, এমএলসি মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন নির্মল পালসহ প্রমুখ। এরপর শুরু হয় মেধা তালিকানুসারে অসামান্য ফলাফল অর্জনে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পুরুষ্কার বিতরন।
Year 3 NAPLAN-এ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮ জন; ক্রমান্বয়ে তারা হচ্ছেন—ফারিজা হোসাইন, তালহা ইবনে শাহরিয়ার, অরুনিমা কবির জয়িতা, আরিব শাহরিয়ার, মরিয়ম আহমেদ, জয়নাহ ফাতিমা, এমডি জায়েদ ইবনে আলম, জারিফ খান, আমরিন হোসেন। এদের মাঝে পুরুষ্কার প্রদান করেন কাউন্সিলর সুমন সাহা। Year 5 NAPLAN এ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪ জন; ক্রমান্বয়ে সাদাত শাখাওয়াত দিপ্র, ফারহান ইউসুফ, আয়ান হক ও রাইফ খানকে ট্রফি দিয়ে পুরুষ্কৃত করেন কাউন্সিলর নাজমুল হুদা। Year 7 NAPLAN এ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫ জন—সানিহা বিনতে আসাদ, নুশাইবা আনজুম, তাহমিদ ওয়াসিম, রুবাইয়েত শিকদার, হামদান আহমেদ কে পুরুষ্কার দিয়ে অনুপ্রাণিত করেন কাউন্সিলর শাহে জামান টিটু। Year 9 NAPLAN এ কৃতী ফলাফলের জন্য ৪ জন মনোনীত হয়, যথাক্রমে তারা হলেন – ইলহাম হক, ফারহান শফিক, আরিয়ান জামান, আরফি হক। OC তে কৃতিত্বের সাথে ভালো ফলাফলের জন্য ৬ জন শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তারা হলেন আলিফ হোসাইন সিদ্দিকী, জারিফ ফাইয়াজ উদ্দিন, মাহির দাইয়ান, সাহিব আলম, মালিহা তাসনিম, হাসনাইন আবিজ। মেধাবী এই শিক্ষার্থীদেরকে পুরুষ্কার তুলে দেন কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী। Selective এ সাফল্যের সাথে মেধাবী ফলাফলের জন্য ১৬ জন কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তারা হলেন – সামিদ হাসান, ইউসা রহমান কবির, আলিনা কাজী, নির্ভানা তালুকদার, সামিয়া ইসলাম, সামরিন সৈয়দ, সুমাইয়া সুলতানা, অনুরঙ হৃদ কবির, রাফসান রাইয়ান, শাফি আহমেদ, তানিশা জামান, জিয়ান জোহর, আদ্রিতা রহমান, মির জাহিন হাসান, রাদ শাহমত হোসেন, সুহাস কবির। HSC-তে মেধা স্থান অর্জনকারীদের মধ্যে আমির মোহাম্মদ মোস্তাফী অন্যতম। Selective ও HSC-তে কৃতিত্বপূর্ন এ ফলাফলের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ক্রেস্ট প্রদান করেন এমপি জিহাদ ডিব।
এছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন প্রশংসনীয় কাজে সম্মাননাস্বরুপ ক্রেস্ট প্রদান করা হয় সাফল্য অর্জনকারীদের মধ্যে। তারা হচ্ছেন—রোবোটিক্সে নাবিলা স্রোতস্বিনী, ব্যাডমিন্টনে যৌথভাবে নার্গিস বানু ও নাবিলা বানু। আর্টে পুরুষ্কার গ্রহণ করেন আয়াস আহসান, নাচে নেফিউ আহসান, ইলমা খান পুরুষ্কার প্রাপ্ত হন অংক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হিসেবে। মারসুর আহসান বই লিখে সম্মাননা অর্জন করেন। হায়াত মাহমুদ সম্মাননা গ্রহণ করেন কবিতা লিখে। এহসান রেজাকে নজরুল সঙ্গীতের উপর সম্মাননা দেওয়া হয়। লাবিব মাহমুদ’কে ক্রিকেট, আদিল শরিফ ও একেএম আবু শহিদকে ব্যাডমিন্টনে পুরুষ্কৃত করা হয় এবং নির্মল পালকে বাংলা ভাষাকে গুরুত্বারোপ করে কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য নির্মল পালকে সম্মানিত করা হয়। উল্লেখ্য, এ বছরই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৬০ টি পুরুষ্কার বিতরন করা হয়।
সবশেষে ছিলো অতিথি ও আয়োজকবৃন্দের সাথে কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের ফটোসেশন পর্ব।
অনুষ্ঠানটিকে সার্বিকভাবে সফল করে তোলার জন্য উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন লিংকন শফিকউল্লাহ। তিনি জানান—সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের যে কেউ যথাযথ নিয়ম মেনে আগামীতে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে। কৃতী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ-অনুপ্রাণিত করার জন্যই সংগঠনটির একমাত্র প্রয়াস। রংধনু আয়োজিত ‘এনুয়্যাল ট্যালেন্ট এওয়ার্ড অব রংধনু’ অনুষ্ঠানটি সাফল্য করে তুলতে প্রধান সহযোগিতায় ছিলো অস্ট্রালবিল্ট ও অন্যান্যদের মধ্যে লিংকার্স ডেভলপমেন্ট , ডেল্টা ল্যান্ডস্কেপিং, সিডনি ফুড , উইজডম ল, বাংলা হেয়ার, ল্যান্ড এন্ড লিজ এবং গোল্ডেন ফাইবার l