অবৈধ পথে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সময় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুতে আটকা পড়েছেন অন্তত ১০১ বাংলাদেশি। মূলত কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের দেশটিতে নিয়ে গেলেও বর্তমানে তারা বন্দি হালে দিন কাটাচ্ছেন। আর এখন পাচার মামলার সাক্ষী হিসেবে তাদের আটকে রাখা হয়েছে।
দেশে ফেরার সুযোগ আদৌ তারা পাবেন কি না, তা নিয়েও রয়েছে বেশ সংশয়। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনও তাদের ফেরানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে দাবি সেই বন্দি বাংলাদেশিদের। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) লন্ডনভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে এসব বাংলাদেশিদের ভানুয়াতুতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের অবৈধভাবে দেশটিতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গত নভেম্বর মাসে অন্তত চার বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। আগামী মাসে তাদের আদালতে তোলার কথা রয়েছে।
বর্তমানে ভানুয়াতু হিউম্যান রাইটস কোয়ালিশন নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে যৌথভাবে এসব বাংলাদেশিদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
আইওএম কর্তৃপক্ষের দাবি, আটক বাংলাদেশিদের সহায়তায় দেশটির সরকার ও ভানুয়াতু সরকারের মধ্যে এক ধরনের যোগাযোগ রক্ষার কাজটি করছে আইওএম।
যদিও বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমরা আটক ১০১ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছি। যে কারণে আইওএমের সঙ্গে ইতোমধ্যে বেশ কয়েক দফা যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে তারা এখনও আমাদেরকে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি।’
এ বিষয়ে ভানুয়াতুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু সলোমান নাপুয়াট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘আটকে পড়া এসব বাংলাদেশিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আগে আমরা আদালতের আদেশের অপেক্ষা করছি। আদালত থেকে চূড়ান্ত আদেশ পাওয়া মাত্রই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’
এদিকে অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি দেওয়ার নাম করে দেশটিতে আটকে রাখা বাংলাদেশিদের মধ্যে একজনের নাম হারুন অর রশিদ।
মোবাইল ফোনে হারুন বলেন, ‘এখানে আমাদের জন্য আর কিছুই নেই। আর বাড়ি ফিরে গেলেও জানি না কী হবে। আমাদের মধ্যে আটক সব বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-কর্জ করে বা জমি বিক্রি করে এখানে এসেছেন। সেই ঋণের টাকা কিভাবে শোধ করবেন, তা নিয়েও মহা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।’
তখন পাশ থেকে আরেক বাংলাদেশি বলেন, ‘ভানুয়াতু ও এর প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন দোকানে বিক্রয় কর্মীর চাকরির লোভ দেখিয়ে আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়। আমাদের কারও কারও কাছ থেকে ১৬ লাখ পর্যন্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভানুয়াতু আসার পরপরই আমাদের নির্মাণ শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমাদের মারধর করা হয়েছে এবং কখনোই প্রাপ্য মজুরিও ঠিকমতো দেওয়া হয়নি।’
পরে হারুন অর রশিদ আরও বলেন, ‘এখানে আটকদের মধ্যে কেউ কেউ এই পরিস্থিতিতে আত্মহত্যাকেও অপেক্ষাকৃত শ্রেয় বলে মনে করছেন। কারণ তাদের সামনে তারা আর কোনো পথ দেখছেন না। আবার দেশেও ফিরতে পারছেন না। কারণ, পাচারের মামলায় সাক্ষী হিসেবে তাদের আটকে রাখা হয়েছে, কিন্তু কাজের কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। দেশের ফেরার চাইতে সুযোগ থাকলে ভানুয়াতুতেই কিছু করে খেতে চান বলেও মত দিচ্ছেন কেউ কেউ।’
উল্লেখ্য, জনশক্তি রফতানিতে অন্যতম শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ। যে কারণে দেশটি অনেকখানি প্রবাসীদের কাছ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি দেশটি থেকে কাজের সন্ধানে বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন। এই সংখ্যা আগের যেকোনো বছরের চেয়ে অনেক বেশি। যদিও আন্তর্জাতিক অধিকার কর্মীদের দাবি, বাংলাদেশিদের বিদেশে যাওয়ার পেছনে দালালদের একটি চক্রও বেশ সক্রিয় অবস্থানে আছে। (সূত্র: দৈনিক অধিকার )