অস্ট্রেলিয়ার সিডনীর ইঙ্গেলবার্ন কমিউনিটি হলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে সিডনি বাঙালি কমিউনিটি গত ১৬ ই ফেব্রুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় মুজিব বর্ষের প্রথম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রথমেই ছিল “ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা এবং অবদান” শীর্ষক আলোচনা সভা। এই পর্বের শুরুতেই ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত সংগৃহীত বিভিন্ন আলোকচিত্র, পত্রিকার রিপোর্ট সহ অন্যান্য তথ্যাবলী প্রদর্শন করা হয়। আলোকচিত্র প্রদর্শন ও তথ্যাদি উপস্থাপন সহ অনুষ্ঠানের আলোচনা সভার সার্বিক পরিচালনা করেন সেলিমা বেগম। তথ্যসমূহ ও ছবি দিয়ে সহায়তা করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক পীর হাবিব এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রাহক অমি রহমান পিয়াল।
ফেডারেল এমপি এন স্ট্যানলি, প্রবীন রাজনীতিবীদ প্রাক্তন ফেডারেল এমপি লরি ফার্গাসন এবং মিসেস মৌরিন ফার্গাসন সিডনী বাঙ্গালীর কমিউনিটির পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়াতে বাংলা ভাষা এবং সাংস্কতিতে সাফল্য অর্জনের প্রেক্ষিতে কৃতি এবং মেধাবী প্রজন্মের হাতে সার্টিফিকেট এবং পুরস্কার তুলে দেন।
আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণ করে নতুন প্রজন্মের অনুভা আহমেদ। প্রধান অতিথি প্রাক্তন ফেডারেল এম পি লরি ফার্গাসন বলেন, “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সল্ পর্যন্ত যে সমস্ত তথ্য ও ছবির প্রদর্শন করা হয়েছে এটাই সবচেয়ে সহজতর উপায়”।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বর্তমান ফেডারেল এম পি এনি স্ট্যানলি বলেন ,অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের অনেক মাতৃভাষা হারিয়ে গেছে চর্চা ও সংরক্ষনের অভাবে। তাই অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশী শিশু কিশোরদের মধ্যে বাংলা ভাষা শিক্ষা ও বাংলা সাংস্কতিক চর্চার এই মহান উদ্যোগটি পরিচালনার জন্য সিডনি বাঙালি কমিউনিটির প্রশংসা করেন। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি সিরাজুল হক এবং সংগঠনের সভাপতি অজয় দত্ত, সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পূরবী পরমিতা বোস, জনপ্রিয় নৃত্য শিল্পী অর্পিতা সোম, জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী আতিক হেলাল, অভিভাবকের পক্ষ থেকে শাম্মি আহম্মেদ, বাংলা প্রসার কমিটির সভাপতি রফিক ইসলাম ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কতিক অনুষ্ঠান শুরুর আগে ভাষা শহীদদের প্রতি সন্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সম্মলিত কন্ঠে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গান দিয়ে সাংস্কতিক পর্ব শুরু করা হয় । অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোরদের সংগঠন কিশোর সংঘের সদস্যরা একুশে ফেব্রুয়ারী, ভাষা আন্দোলন, বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশ নিয়ে একক এবং দলীয় ভাবে আধুনিক, ফোক, দেশাত্ববোধক এবং রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করে।একক নৃত্য পরিবেশন করে সারিকা। দলীয় নৃত্যে ছিল সাফায়ার, সামারা এবং মেঘা। নৃত্য পরিবেশনায় সার্বিক নির্দেশনায় ছিলেন বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী অর্পিতা সোম ।
কিশোর সংঘের গানের পরিবেশনায় ছিল অনুভা আহমেদ , ফাহমিদা পাঠান , সুবাহ শফিক , সুবাহ কবির, মহিমা বিশ্বাস , রিডা হক , মুন , রেহনুমা , পৃথিবী তাজওয়ার , জাফরী আহমেদ , সামীর শফিক , সাইফান কবির, রিয়া খান ও একক নাচ পরিবেশন করে শাকিরা ।
সর্বশেষে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি টানা হয়।
খাবার স্টলের ব্যবস্হাপনায় ছিল কিশোর সংঘের ফাহিম এবং ঈশান। পোশাকের স্টলের দায়িত্বে ছিল সাতরঙ্গ বুটিক। সংগীত পরিবেশনায় পূর্ণ সহযোগীতা করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সীমা আহমেদ! ব্যদ্যযন্ত্রে সার্বিক সহায়তা করেন সীমা আহমেদ, সাকিনা আখতার এবং ঈশান তারিক। নৃত্য পরিবেশনায় সার্বিক সহায়তা করেন জনপ্রিয় নৃত্য শিল্পী অর্পিতা সোম। অনুষ্ঠানের শব্দ নিয়ন্ত্রনে ছিলেন আত্তাবুর রহমান । অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন অজয় দত্ত এবং সেলিমা বেগম, পরিচালনায় ছিলেন পূরবী পরমিতা বোস, প্রচারনা এবং প্রকাশনায় ছিলেন আবু তারিক এবং শাহ জামাল বাদল।