ফজলুল বারী:সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করছে অনশন করছে। অনশনরতরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদকে চায় না। কারন উপাচার্য তাদের দাবি না মেনে উল্টো পুলিশ ডেকে এনে পিটিয়েছেন!
সাধারন ছাত্রছাত্রীদের নির্দয় পেটানোর গুলিতে আহত করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে! এতকিছুর পরও বেহায়া উপাচার্য যেতে চাননা! কারন তিনি দালালি করে উপাচার্যগিরি পেয়েছেন। দালালি করে যে ছাত্রছাত্রীদের মন পাওয়া যায়না এটা তিনি জানেননা।
আর দলবাজ দালালদের সময়মতো টয়লেট টিস্যুর মতো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সরকার সুনাম নিতে চাইবে তা এই বলদগুলো বোঝেওনা! জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিয়ে বলদটা যে অশ্রাব্য-অশুদ্ধ বক্তব্য দিয়েছে, ধরা পড়লে সে পথেঘাটে বিচুতিপাতার পিটুনিও খেতে পারে।
তখন যে পিছনের অংশ ‘চুলকাইতে চুলকাইতে’ দালালটা কোথায় গিয়ে পড়বে সে কথাই ভাবছি। দেশে দিন যত যাচ্ছে দেশে শিক্ষকতার মান কমছে। অবনতি হচ্ছে ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের। এর বড় একটি কারন দলবাজি ও শিক্ষকসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে নানান দুর্নীতি।
এখন আর আপনার সন্তানকে ‘এইম অব লাইফ’ রচনা লিখতে দিলে পাবেননা, সে বড় হয়ে শিক্ষক হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন তাদের কব্জায় যারা বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায়নি। অন্য কোথাও সুযোগ না পেয়ে এখানে এসেছেন! তাও চাকরি নিয়েছেন ঘুষের বিনিময়ে। অথবা দলবাজি করে।
তিনি যে ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষকতার চাকরিতে ঢুকেছেন এটা তার ছাত্রছাত্রীরাও জানে। অথবা দলবাজির বিনিময়ে ভিসি হয়েছেন। একটি অংশ যারা ছাত্র জীবনে বিস্তর টিউশনি করেছেন, কোচিং সেন্টারে পড়িয়েছেন, তাদের অনেকে শিক্ষকতায় আসার সময় মনে করেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়টা সঙ্গে থাকলে ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ পাবেন বেশি।
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবার একই সঙ্গে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ঝোঁক বেশি! জিজ্ঞেস করলে বলবেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনে তাদের পোষায়না! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনতো জেনেশুনেই গেছেন! আপনাকেতো কেউ হাতেপায়ে ধরে সেখানে নেয়নি।
না পোষালে পদত্যাগ করে চলে যাননা কেনো এসব বললে মুখের ওপর বলবেন, ছেলে বেয়াদব! বিদেশে আমরা ক্লাসে আসার একদিন আগে থেকে শিক্ষকদের প্রস্তুতি নেবার ব্যস্ততা দেখি। আমাদের কালের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের একাগ্রতার কারনেই আমরা শিখেছি।
হেড মাষ্টার স্যার বাবু প্রানেশ কর ক্লাসের দরজার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে খেয়াল করতেন তার শিক্ষক ঠিকমতো পড়াচ্ছেন কিনা। এখন এসব নজরদারি নেই। হেড মাষ্টারই পড়ানো জানেননা, তিনি নজরদারি করবেন কিভাবে।
বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একদল আছেন খুবই জ্ঞানী লোক! নিজের ঘটিতে কি আছে সে খবর নেই! সুযোগ পেলেই অমুক অমুককে সার্টিফিকেট দিয়ে বেড়ান! এমন লোকজন বছরে অন্তত এক-দু’বার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতো লোককেও ধুয়ে দেবার অপচেষ্টা করেন!
অথচ এই অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক জাফর ইকবালের মতো খুব কমসংখ্যক জ্ঞানতাপসস দেশে আছেন যাদেরকে বিভিন্ন সময়ে অনুরোধ করেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে রাজি করানো যায়নি। দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-শিক্ষক মানেই যেন সে কত বড় দালাল!
আর এই লোকগুলো যেহেতু দালালি করে ভিসি বা শিক্ষক হয় তারা ছাত্রছাত্রীদের প্রতিও দায়বদ্ধ থাকেনা। এই দায়বদ্ধতা-পারষ্পরিক ভক্তি-শ্রদ্ধার অভাব থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় অনাকাংখিত নানাকিছু ঘটে। এটা এরশাদ-খালেদা আমলেও ঘটেছে এখনও ঘটছে।
খালেদা জিয়ার আমলে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন দমন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে নজিরবিহীন হামলা ঘটলো। রাতের বেলা পুলিশ গিয়ে মেয়েদের হলের ভিতর ঢুকে মেয়েদের বেধড়ক পিটিয়েছে! আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী তখন ভিসি। বিএনপির দালালি করে তিনি ভিসিগিরি পেয়েছিলেন।
আন্দোলন দমন করতে তখন তাকে যারা ঘিরে রেখেছিল তারাও বিএনপি দালাল শিক্ষক। এখন তেমন এক শিক্ষক অনেক ভালো কথা লিখেন বলেন! তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের করায়ত্ত করতে বলছিলেন, আমি মিথ্যা বলতে পারি কিন্তু আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী স্যার মিথ্যা বলতে পারেননা।
তখন সেই ব্রিফিঙ থেকে বেরিয়ে এসে জনকন্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা আমাকে বলছিলেন, এই ফ্রডটা না এক সময় আপনাদের সঙ্গে কাজ করতো! সেই বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা এখন দেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করছেন। তার সেদিনের বর্ননার ফ্রডটা এখন তার পত্রিকাতেই কলাম লিখেন।
শামসুন্নাহার হল ভিত্তিক ছাত্র আন্দোলনের তোড়ে কিন্তু সেই দালাল ভিসি আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী ভেসে গিয়েছিলেন। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভিসি ফরিদ উদ্দিনও ভেসে যাবেন। কারন ছাত্র আন্দোলন কখনও ব্যর্থ হয়না। যে শিক্ষক পুলিশ দিয়ে ছাত্র পিটায় সে দস্যু।
দস্যু কখনো স্যার হতে বা থাকতে পারেনা। মাঝখান দিয়ে জেদাজেদিতে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট-ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। করোনা মহামারীর এই সময়ে তারা যে আন্দোলন করছে এটা ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকে এখন অমিক্রন ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
আমার সাংবাদিক জীবনের অভিজ্ঞতা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন কোন ঘটনা ভিত্তিক ছাত্র আন্দোলন কখনও প্রধান ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে হয়নি। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন এসব আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালালে সরকারের ক্ষতি হয়।
আর তারা নিজেরা আরও ছাত্র-গণবিচ্ছিন্ন হন। এসব আন্দোলন মূলত ছোট ছোট বাম ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগ নেতৃত্বে গড়ে ওঠে। তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেয় সাধারন ছাত্রছাত্রীরা। প্রধান ছাত্রসংগঠনগুলো এক পর্যায়ে এখানে যোগ দিয়ে আন্দোলনটা আত্মস্মাত করতে আসে।
সাধারন ছাত্রছাত্রীরা তখন সেখান থেকে সরে যায়। নিকট অতীত অথবা বর্তমান নানা চারিত্রিক কারনে অথবা দূর্নামে প্রধান সংগঠনগুলোকে সাধারন ছাত্রছাত্রীরা ভয় পায়। এই ভয় ভালোবাসা থেকে নয়।
পত্রিকায় এসেছে শাবিপ্রবির দালাল উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন বাসায় বসে সিসিটিভিতে চোখ রেখে আন্দোলন মনিটর করছেন! নানান জনকে দিচ্ছেন নানান নির্দেশনা! এভাবে স্যারগিরি অথবা ভিসিগিরি টিকেনা দালাল উদ্দিন সাব। আল্লাহরওয়াস্তে বিদায় হন। ছেলেমেয়েগুলোর পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে।
সরকার কেনো চুপ? এসব আন্দোলন চললে কি সরকারের লাভ হয়? এই ছেলেমেয়েগুলো ভোট দেবার সুযোগ পেলে ফল কি দাঁড়াবে? দালাল উদ্দিন ভিসিকে টয়লেট পেপারের মতো ছুঁড়ে ফেলে দেবার এখনই সময়। শাবিপ্রবির আন্দোলনে উজ্জ্বল ছেলেমেয়েগুলোর প্রতি অনেক দোয়া আর ভালোবাসা।