শোকাবহ ১৫ আগস্ট ও ইতিহাসের অমর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু

শোকাবহ ১৫ আগস্ট ও ইতিহাসের অমর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু

অনলাইন ডেস্কঃ ১৫ আগস্ট ২০১৫

দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা, রক্তগঙ্গা বহমান
নাহি নাহি ভয় তবু হবে জয়, জয় শেখ মুজিবুর রহমান।

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কময়, বেদনার দিন। ১৯৭৫ সালের এদিনে বাঙালি হারায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এদিন কাকডাকা ভোরে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্য ধানমন্ডীর ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বাঙালি জাতির ললাটে এঁটে দেয় কলঙ্কের তিলক। যে কলঙ্ক থেকে দেশ-জাতি আজো মুক্ত হতে পারেনি। বাংলার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছিল অটুট বন্ধন, আত্মার আত্মীয় ছিল সবাই। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে ছিল তার প্রতিচ্ছবি, যা এখনো জ্বল জ্বল করছে সবার মনে। তিনি ছিলেন এমন এক নেতা যার ব্যক্তিগত সম্পদ বলে কিছুই ছিল না। জনগণের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি। জনগণের ভালোবাসাই ছিল তার একমাত্র সম্পদ। যে সম্পদ কেউ কোনোদিন কেড়েও নিতে পারে না। আর পারেনি বলেই ১৫ আগস্ট এলেই তা গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়।

তাকে কোনো বাঙালি হত্যা করতে পারে এমন বিশ্বাস কারো মনে কোনোদিন ছিল না; যা ছিল না বঙ্গবন্ধুর মনেও। আর তাই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ঘনিষ্ঠজনদের শত অনুরোধ উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতি হয়েও বঙ্গভবনের মতো সুরক্ষিত স্থানে না থেকে সাধারণ মানুষের মতো থেকেছেন ধানমন্ডীতে অরক্ষিত নিজ বাড়িতে। প্রতিটি মূহুর্ত থেকেছেন গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে। আর এটিই তার কাল হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী ওই ঘাতকচক্র হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে। যা ছিল পৃথিবীতেও বিরল মর্মান্তিক ঘটনা।

মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং, লিংকন, লুমুম্বা, জন এফ কেনেডি, ইন্দিরা গান্ধী পর্যন্ত রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু কাউকেই বঙ্গবন্ধুর মতো সপরিবারে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়নি। এদিন ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামালসহ ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেলও এই নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। যে কাজটি বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীও করার সাহস করেনি, সেটিই করলো এ দেশের কিছু কুলাঙ্গার। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গঠন করতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন তখনই ঘটানো হয় এ নৃশংস ঘটনা। পরিসমাপ্তি ঘটে একটি ইতিহাসের।

বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলার আকাশ-বাতাস-মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকরা। যা কোনো দিন হয়নি, হবেও না। পৃথিবীতে বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে – ততদিনই থাকবে বঙ্গবন্ধুর নাম, তার কর্ম। ২০০৯ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ৫ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়। এর ফলে দীর্ঘদিন পর কলঙ্কমুক্ত হয় বাঙালি জাতি। বুক থেকে নামে শোকের পাঁথর|

আসুন আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করি। জাতির জনক ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমাদের দায়িত্ব হবে দেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে জাতির জনকের সেই স্বপ্ন পূরণ করা। তা হলেই তার আত্মা শান্তি পাবে এবং আমরা এই মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারবো।

( সুত্রঃ somewhereinblog.net)