বাংলাদেশের কারাগারে বন্দী স্ত্রী সাদিয়া আমিনকে মুক্ত করার জন্য বাংলাদেশে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা করেছিল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নওরোজ আমিন। এমন তথ্য পাওয়ার পর ঢাকার পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ গ্রেফতার হওয়া নওরোজের সিরিয়া-ইরাক ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের সঙ্গে কানেকশন আছে বলে ধারণা পেয়েছে। বাংলাদেশের আইএস মতাদর্শী জঙ্গী সংগঠনের সহায়তায় বাংলাদেশে জঙ্গী হামলা করে স্ত্রী সাদিয়া আমিনকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী নওরোজ আমিন। এই ধরনের তথ্য পাওয়ার পর এই বিষয়ে আরও তথ্য বিনিময়ের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ তাদের জানিয়েছেন, তারা গত ১৬ জুন সিডনির ইংলেবার্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ২৬ বছর বয়সী নওরোজ আমিনকে। নিউ সাউথওয়েলস পুলিশের জয়েন্ট কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে যৌথ অপারেশনে গ্রেফতার হওয়া নওরোজ আমিনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের ষড়যন্ত্রসহ মোট তিনটি অভিযোগ এনেছে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সীমানায় প্রবেশ করে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ। অস্ট্রেলিয়ার আদালতে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার যাবজ্জীবন কারাদ- হতে পারে বলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসার সময় নওরোজ আমীনকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এয়ারপোর্টে আটকে দেয়া হয়। ওই সময় তার কাছ থেকে সন্ত্রাসবাদের আদর্শ ধারণ করা কিছু তথ্য-প্রমাণও উদ্ধার করে ওই দেশের পুলিশ। জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নওরোজ আমিনের স্ত্রী সাদিয়া আমিন ঢাকায় কারাবন্দী থাকার খোঁজ পেয়েছে ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। গত বছরের ২ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে স্ত্রী সাদিয়া আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। স্বামী নওরোজ আমিনের হাত ধরে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে সাদিয়া আমিন।
র্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের আদ্-দার-ই-কুতনি বিভাগের সদস্য কারাবন্দী সাদিয়া আমিন। সারোয়ার-তামিম গ্রুপকে বাংলাদেশে আইএস মতাদর্শের অনুসারী নব্য জেএমবি বলেও ডাকা হয়। গত বছরের ২ অক্টোবর চকবাজার এলাকা থেকে সাদিয়া আমিন নামে এক তরুণীকে গ্রেফতার করে র্যাব। অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেফতার হওয়া নওরোজ আমিনের স্ত্রী সাদিয়া আমিন। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার খিলগাঁও থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা থেকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনির কমান্ডার ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী সময়ে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, সে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ব্যাকআপ ব্রিগেড হিসেবে ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি’ শক্তিশালী করার চেষ্টা করছিল। তার সঙ্গে অনেক আনসার সদস্য (সাহায্যকারী), মুহাজির (যোদ্ধা), সালাফী আলেম বোর্ড ও অর্থদাতা দেশী-প্রবাসী ব্যক্তি রয়েছে বলেও জানায়।
র্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ইমাম মেহেদী হাসানের দেয়া তথ্য মতে, গত বছরের ২ অক্টোবর বিকেলে রাজধানীর চকবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি’র সক্রিয় সদস্য সাদিয়া আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সাদিয়া ওই সময় জানিয়েছে, ২০১৪ সালের নবেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবু আতার ওরফে নওরোজ রাইয়্যাত আমিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আবু আতার ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তী সময়ে ১৯৯৫ সালে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। বিয়ের পর ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আবু আতার ওরফে নওরোজ আমিন দুই দফায় বাংলাদেশে এসে ৬ মাস অবস্থান করে। বিয়ের আগেই নওরোজ উগ্রবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল। বাংলাদেশ অবস্থানকালে ২০১৫ সালে নওরোজ আমিনের সঙ্গে উগ্রবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী এক যুবকের পরিচয় হয়। ওই যুবক তাকে ইমাম মেহেদী হাসানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে স্বামী নওরোজ আমিনের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে সাদিয়া আমিন। সাদিয়া আমিনের বাসার ঠিকানা ৯/১০ চকবাজার। খাজা টাওয়ার নামে একটি বহুতল ভবনের চতুর্থ তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত সে। সাদিয়া ২০১৫ সালে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ম্যাপললিফ থেকে ‘ও লেভেল’ সম্পন্ন করার পর পুরান ঢাকার একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করত। সাদিয়া আমিন গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, ইমাম মেহেদী হাসান একাধিক অস্ত্র কেনার জন্য নওরোজের কাছে সাত লাখ টাকা চেয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নওরোজ তার স্ত্রী সাদিয়া আমিনের মাধ্যমে একলাখ টাকা দেয়। সাদিয়া জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য স্বীকার করার পাশাপাশি আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতেও এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ঢাকার পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেফতার হওয়া নওরোজ আমিনের বিষয়ে আরও তথ্য বিনিময়ের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ নওরোজের বাংলাদেশ কানেকশনের বিষয়ে খোঁজখবর করছে। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ বাংলাদেশের পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে যেসব বিষয় জানিয়েছে সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেফতার হওয়া নওরোজই তার স্ত্রী সাদিয়া আমিনকে জঙ্গীবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। অস্ট্রেলিয়ায় থেকেই নওরোজ স্ত্রী সাদিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মাধ্যম হিসাবে ইমাম মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করত। এমনকি ইমাম মেহেদী হাসান সংগঠনের জন্য যে অস্ত্র সংগ্রহ করার চেষ্টা করছিল, তাতে অর্থ সহযোগিতাও করত নওরোজ আমিন। (সূত্রঃ শংকর কুমার দে ,দৈনিক জনকণ্ঠ )