কাউসার খান:অস্ট্রেলিয়ার ৩০তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন লিবারেল সরকারের সাবেক কোষাধ্যক্ষ স্কট মরিসন। চার দিনের নানান কাণ্ডের পর তাঁকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হয়। সরকারি দল লিবারেল পার্টির ৮৫ জন সাংসদের ভোটের মাধ্যমে দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী পদে পরিবর্তন আনা হয়। আর ২৪ আগস্ট শুক্রবার সংখ্যাগরিষ্ঠ ৪৩ জন সদস্যের স্বাক্ষরের মাধ্যমে অনাস্থা আসায় দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান ম্যালকম টার্নবুল। সাবেক অভিবাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ এবং কোষাধ্যক্ষ স্কট মরিসন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন। তাঁদের মধ্যে ৪৫ ভোট পেয়ে জিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন স্কট মরিসন। তবে অস্ট্রেলিয়ায় হঠাৎ কেন প্রয়োজন পড়ল প্রধানমন্ত্রী বদলের? ম্যালকম টার্নবুল কি নেতা হিসেবে ব্যর্থ? দলের সমর্থনই কেনই বা হারালেন তিনি? এসব নিয়ে নানা আলোচনা চলছে গণমাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হটানোর নাটকীয়তা এক সপ্তাহেরও কম সময় ধরে প্রকাশ্যে চলতে থাকলেও এর শুরুটা ২০১৫ সাল থেকেই। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটকে ওই বছর চ্যালেঞ্জ করেছিলেন টার্নবুল। আর এতে জিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদও পেয়ে যান তিনি। সেই থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত ছিলেন টার্নবুল। বলা হয়ে থাকে, টার্নবুলের রাজনৈতিক কৌশল তাঁর নেতৃত্ব গ্রহণের শুরুর দিন থেকেই ভুল ছিল। এমনটা অবিশ্বাস্য নয়, কেননা টার্নবুল মূলত একজন ব্যবসায়ী। অ্যাবটের মতো দীর্ঘদিন রাজনীতি তিনি করেননি। অথবা অ্যাবটের মতো অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ডের সঙ্গে জড়িত থেকে রাজনীতি শিখে শীর্ষ পদে আসেননি টার্নবুল।
তারপরও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই টার্নবুল ব্যাপক সমর্থন পান। সবাই আশা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সমস্যাগুলো টার্নবুল দ্রুত সমাধান করবেন। শরণার্থী সংকট, মুসলিম বিদ্বেষ, অভিবাসন নীতি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যাগুলোর সমাধান টার্নবুলের নেতৃত্বে দ্রুত হওয়ার কথা ছিল। তবে দলের সবার পরামর্শে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরও সে ব্যাপারে উদাসীনতা ভুল পথে নিয়ে যায় তাঁকে। এরপরও দলের সবাই তাঁকে সমর্থন করবেন বলে ভুল ধারণা ছিল তাঁর। দলের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতা অ্যাবট, কেভিন অ্যান্ড্রুস ও এরিক আবিটসকে খেপিয়ে তোলেন তিনি। তাঁরা সব সময় টার্নবুলের বিরোধিতা করতেন। আর পরবর্তী সময় তাঁদের পাল্লা ভারি হয়েছে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। বিভিন্ন জরিপে লিবারেল পার্টির সমর্থন কমতে দেখা যাচ্ছিল। এরই মধ্যে হয়ে যাওয়া দেশটির উপনির্বাচনের ৮টি আসনে সরকারি দল জয় পায় মাত্র একটি আসনে। বাকি সাতটি আসনের চারটিতে জয় পায় প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। উপনির্বাচনের ফলাফলের পর আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের নড়বড়ে অবস্থান টের পায় লিবারেল দল। আর দোষটা সোজা এসে পড়ে টার্নবুলের ওপর। টার্নবুলের ব্যর্থ নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের সুপ্ত অভিযোগ আবারও সামনে আসে। শুরু হয় টার্নবুলের নানা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা। ১৩ আগস্ট সংসদের প্রথম অধিবেশনে টার্নবুলের বিদ্যুৎনীতির জোরালো বিরোধিতা করেন অ্যাবট। তাঁর প্রতিবাদের মুখে এ নীতির বাস্তবায়ন থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়। আর ম্যালকমের নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা যাবে না বলেই শঙ্কা লাগে লিবারেল দলের। তবে অনেকটাই আকস্মিকভাবেই সাবেক অভিবাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটন চ্যালেঞ্জ করে বসেন ম্যালকম টার্নবুলকে। এর পরের কয়েক দিনের ধাক্কাধাক্কির পর গতকাল প্রধানমন্ত্রিত্বের পরিবর্তন হয় দেশটির। আর এর সবটাই দেশটির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরেই বলে বিশ্বাস দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে সে যা-ই হোক, অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতির ইতিহাস বলছে, নির্বাচনের আগে নেতৃত্বের পরিবর্তন তেমন কাজে আসে না। তবুও সময়ই বলে দেবে দলের এ নেতৃত্ব পরিবর্তন আসন্ন নির্বাচনে লিবারেল পার্টিকে রক্ষা করতে পারবে কি না?