গত কয়েকদিন যাবৎ ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের পিঠা উৎসব নিয়ে অনলাইন বাংলা পত্রিকা বাংলাকথা ডট কমে প্রকাশিত নিউজ ও বাংলাস্কুলের প্রেসরিলিজ নিয়ে পরস্পরবিরোধী রিপোট নিয়ে ফেইসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য চলছে। একটি কমিউনিটি বাংলা স্কুলের বর্তমান এই অবস্থা অতি সত্ত্বর দূর হবে বলে অভিভাবক মহল আশা করছেন।
বাংলাকথা লিখেছেন(গত ২০শে আগস্ট) :এক যুগের ও বেশি পুরাতন সিডনির ঐতিহ্যবাহী ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে যেন অনিয়মটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। এমনিভাবেই কাগজে কলমে চলছে ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির একজন সম্পাদক ও তার কিছু অনুসারিদের কাছে জিম্মি হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষকে পুতুল সাজিয়ে ঐ সম্পাদক সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন । আর অনিয়ম, ও অব্যবস্থাপনার কারণে বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান একেবারেই নিম্নগামী।বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে সপ্তাহে একদিন ঐ স্কুলের শিক্ষার্থীদের এক ঘন্টা গান শেখানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ঐ সম্পাদক ১০ মিনিটের মধ্যে বাচ্চাদের গানের ক্লাস সমাপ্ত করে কয়েক ঘন্টা ধরে নিজের অনুসারীদের নিয়ে প্রতিনিয়ত গানের রিহার্সেল করে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অধিকতর যোগ্য শিক্ষার্থীদের সুযোগ না দিয়ে নিজের পছন্দের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনের ব্যবস্থা করেন তিনি ।
এর পাশাপাশি গান শেখানোর ক্লাসে বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের সাথে দূরব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ আছে গান শেখানোর একটি ক্লাসে ঐ সম্পাদক রেগে গিয়ে টেবিলের উপর এত জোরে শব্দ করেছিলেন যে, ভয়ে প্রায় সব শিক্ষার্থী কেঁদে দিয়েছিল। এর পর পরই স্কুল থেকে একযোগে কয়েকজন শিক্ষার্থী চলে যায় এবং যারা কখনোই ফিরে আসেনি।
সর্বশেষে ঐ সম্পাদক ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে গত ৫ আগষ্ট ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের পিঠা মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন একদল অভিভাবক। তারা বলেছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্য ও সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতায় কারনে ঐ সকল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সকল প্রস্তুতি নিয়ে আসার পরে ও অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেনি। এই সময় অন্তত পক্ষে একজন শিক্ষার্থীকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের জন্য অপেক্ষারত বাচ্চাদের মধ্য থেকে অনেকটা জোর পূর্বকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়।এই সময় ঐ সকল শিক্ষার্থীরা বার বার অভিভাবকদের কাছে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে না নেওয়ার কারন জিজ্ঞাসা করতে থাকে, অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তাদের আকুতির কথা জানাতে থাকে । এই সময় স্কুল কমিটির সভাপতি ঐ সকল শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আলাদাভাবে অংশ গ্রহনের আশ্বাস দিলে ও ঐ সম্পাদক তাতে বাধা দেন। নিরুপায় অভিভাবকরা বার বার ঐ সম্পাদককে, বাদ দেওয়া শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনের ব্যবস্হা করার বিনীত অনুরোধ করলে তা ও অত্যন্ত রুড় ভাবে প্রত্যখ্যান করা। এমনকি এই সময় কমিউনিটির স্হানীয় কয়েকজন নেতা বিষয়টি নিয়ে অনুরোধ করলে, তাও তারা কর্নপাত করেননি। অভিভাবকরা আরো অভিযোগ করে বলেন যে, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের পিঠা মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের অগ্রাধিকার থাকার কথা থাকলেও তা না করে স্বল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান শেষ করে ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্য ও তাদের পরিচিত নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নামে অপ সাংস্কৃতিক প্রদর্শন শুরু করে। যেখানে সারা বিশ্বে তামাক বা ধুমপানের বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের উপর কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে যেখানে স্কুল কমিটির সদস্যরা এই অনুষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে হুক্কা খাওয়ার প্রদর্শনী করেছে।
এই ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ অভিভাবকরা তাদের সন্তাদের আর ঐ স্কুলে না পাঠানোর ও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সংগঠক ইসমাইল মিয়া । তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন, বাংলা স্কুলে এমনিতেই শিক্ষার্থীদের সংকট থাকে, এছাড়া এদেশে জন্ম নেওয়া বাচ্চারা বাংলা শিখতে বা চর্চা করতে চাই না, এরকম অবস্থায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা কোমলমতি শিশুদের সাথে এরকম আচারন তাদের মনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্ঠি করবে। তারা আর স্কুলে আসতে চাইবে না। ফলে ঐ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সংকট আরো বাড়বে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্হিত ছিলেন বাংলাদেশ এসোশিয়েসন নিউ সাউথ ওয়েলসের সভাপতি মাহবুব রহমান, যিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে বাধা দেওয়ার ব্যাপারটিকে দুর্ভাগ্যজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মনে করেন তিনি ।তিনি ম্যানেজিং কমিটিকে এই ব্যাপারে আরো উদার হওয়ার আহবান জানান।
এই ব্যাপারে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের সভাপতি আবদুল জলিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন , তিনি বলেন মাত্র একজন শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহন করতে দেওয়া হয়নি কারন সে ফাইনাল রিহার্সেল অংশ নেয়নি, তিনি আরো বলেন, আমারা এই বছর সিদ্বান্ত নিয়েছিলাম যে , কোন শিক্ষার্থী যদি রিহার্সেল অংশ না নিলে তাকে মুল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের অনুমতি দেওয়া হবে না। তিনি ঘটনার জন্য দূঃখ প্রকাশ করেন।
তবে এই ব্যাপারে অভিভাবকদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের ক্ষুদে বার্তায় কোথা ও বলা হয়নি ফাইনাল রিহার্সেল অংশ না নিলে মুল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে পারবে না। প্রমান স্বরুপ তারা এই প্রতিবেদককে ক্ষুদে বার্তাটি ও দেখান।
শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্কুলে বয়স্কদের অংশগ্রহন সম্পর্কে আবদুল জলিল বলেন, ফান্ড রেইজিং এর জন্য মান সম্মত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে বেশ কয়েকজন শিল্পীকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল।অন্যদিকে স্কুলের কার্যক্রমের অনিয়ম সম্পর্কে জানতে অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব হয় নি।
সংগঠনটির সাবেক একাধিক সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই ধরনের আচারনের নিন্দা করেন। এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক সভাপতি রিহার্সেলে অংশ না নেওয়ার কারনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে বাধা দেওয়া এবং ব্যাক্তি বিশেষ এর ইশারায় স্কুল পরিচালনার ঘটনা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং এটাকে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন । তিনি বলেন, সুস্হ মস্তিস্কের কেউ শিশুদের সাথে এই ধরনের কাজ করতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনি আরো বলেন ” এই ধরনের সদস্যদের কমিটি থেকে বের করে দেওয়া উচিত , তা না হলে এরা স্কুলটিকে ধংস করে দেবে।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্যদের বিভিন্ন অনিময় ও স্বেচ্ছাচারি কার্যক্রমে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে ক্যাম্বেলটাউন এলাকার বাংলাদেশী সচেতন মহল ফুঁসে উঠেছে। তারা বিদ্যালয়ের স্বার্থে ঐ সকল বিতর্কিত ও অযোগ্য ব্যাক্তিদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন।
এর জবাবে বাংলাস্কুল কতৃপক্ষ প্রিয়অস্ট্রেলিয়া ডট কমে প্রেস রিলিজে লিখেছেন (২২ শে আগস্ট) :
গত ২০শে আগস্ট “বাংলা কথা’ নামক একটি অনলাইন সংবাদপত্রে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের কার্যক্রম এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে যে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও অবমাননাকর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি।
প্রথমত স্কুল কারো একক সিদ্ধান্তে পরিচালিত হয় না। নির্বাহী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহই এই ক্ষেত্রে অনুসৃত হয় । সুতরাং প্রতিটি সিদ্ধান্ত স্কুলের স্বার্থ সর্বাগ্রে রেখে নেয়া হয় বিধায় এখানে স্বেচ্ছাচারিতার কোনও সুযোগ নেই। স্কুলে লেখাপড়ার মান নিয়ে কোন ধরনের অবহেলা করা হয় না বিধায় এই স্কুলের গ্রহণযোগ্যতা এবং সুপরিচিতি আজ গর্ব করার মতো।
দ্বিতীয়ত প্রতি রবিবার দুপুর বারোটা থেকে একটা পর্যন্ত এক ঘন্টা নিয়ম করে গানের ক্লাস হয়। যেখানে সব ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করে। বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে অনেক সময় অন্যান্য দিনেও গানের অনুশীলনের ব্যবস্থা করা হয়। সেক্ষেত্রেও সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের পথ উন্মুক্ত রাখা হয়। শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী নিয়ে গানের চর্চা করা হয় এমন অভিযোগের কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই।
তৃতীয়ত বিগত পিঠা মেলায় স্কুলের পরিবেশনার সার্বিক মান বজায় রাখার স্বার্থে সব শিক্ষার্থীকে রিহার্সালে অংশ নিতে অনুরোধ করা হয়। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রিহার্সাল ব্যতীত কেহই চূড়ান্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে একাধিক বার অভিভাবকদের জানিয়ে দেয়া হয়। অভিভাবকেরাও স্কুলের এই সিদ্ধান্তকে সাদরে গ্রহণ করে অনুশীলন পর্ব গুলিতে তাদের সন্তানদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে। এই বিষয়টিকে পত্রিকাটি যেভাবে চিত্রায়িত করেছে তা সর্বৈব মিথ্যা।
চতুর্থত ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল, বাংলা ভাষা শিক্ষা ও আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি প্রচার ও প্রসারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই আমাদের মূল দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক কোনও কর্মকাণ্ডে আমরা কখনও সংযুক্ত হতে পারি না। বিগত পিঠা মেলায় আবহমান বাংলার কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে সাজ সজ্জার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছিল। এরই অংশ হিসাবে গ্রামীণ জনপদে ব্যবহৃত হুক্কাকে সাজসজ্জার উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এখানে কেউ হুক্কা পান করেননি। যেই ছবি দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে সেটি অনুষ্ঠান শেষে সবার প্রস্থানের পর অনুষ্ঠানস্থল পরিষ্কার করার সময় ব্যক্তিগত উদ্যোগে তোলা হয়েছিল। এই ছবিগুলো শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তির ফেসবুকে তার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা হয়েছে। প্রসংগত উল্লেখ্য এখানেও হুক্কা পান করা হয়নি, শুধুমাত্র ছবি তোলা হয়েছে। কোন দর্শকের উপস্থিতি সেখানে ছিল না। ঘটনার সত্যতা বিন্দুমাত্র যাচাই না করে এমন কল্পনাপ্রসুত সংবাদ পরিবেশন এবং অনুমতি ছাড়া কারো ফেস বুক থেকে ছবি নিয়ে তার অপব্যবহার করা সুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে না এবং Australian Privacy Act এর পরিপন্থি।
পঞ্চমত যেই শিক্ষার্থীর বেলায় এই অভিযোগটি আনা হয়েছে সেই ছোট মেয়েটি কখনও গানের ক্লাসে অংশগ্রহন করেনি এবং একটি ক্লাস রিহার্সিল ছাড়া অন্য কোন রিহার্সালে অংশগ্রহণ করেনি। তার অভিভাবকও স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে রিহার্সালে আসার অপারগতা জানাননি । অভিভাবক যোগাযোগ করলে অবগত হতেন যে, যেসব বাচ্চারা নির্ধারিত দিনে রিহার্সালে আসতে পারেনি তাদের রিহার্সালের জন্য দ্বিতীয় ব্যবস্থা ছিল। বাংলা স্কুলের নিয়মের প্রতি সেই নির্দিষ্ট অভিভাবকের উদাসীনতার কারণে এবং আয়োজনের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রীটিকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখানে বলা প্রয়োজন বাংলা স্কুল সব ছাত্রছাত্রীর সুবিধা অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে থাকে এবং কখনই কোনও ছাত্রছাত্রীকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে চায় না | মূলধারার স্কুলের নিয়ম কানুনের সাথে বাংলা স্কুলের নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম নেই | তা ছাড়া যে সকল বাচ্চা রিহার্সালে অংশ নিয়েছিল, অনুষ্ঠান এর দিন সকালে প্রথমেই শুধু তাদেরকে নিয়ে লাইন করা হয়। কোন বাচ্চাকে জোর করে লাইন থেকে বের করার পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি। উপরন্তু বাইরে থেকে বাচ্চাকে লাইন এ যোগ করানোর জন্য চাপ দিয়েছেন সেই অভিভাবক এবং দায়িত্বরত শিক্ষকের সাথেও তিনি স্কুল কম্পাউন্ডএ অন্যান্য বাচ্চাদের সামনে অত্যন্ত রূঢ় ব্যবহার করেছেন যা কিনা নিন্দার যোগ্য |
সংবাদপত্র সমাজের দর্পন এবং সংবাদ কর্মী সমাজের বিবেক। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অসত্য, কল্পনাপ্রসুত, ভিত্তিহীন, অরুচিকর সংবাদ পরিবেশনের অধিকার কেউ রাখে না।
ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল অত্যন্ত দৃঢ় ভাষায় “বাংলা কথা”‘য় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করছে এবং নিন্দা জানাচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ উক্ত সংবাদপত্র এবং সাংবাদিককে এই মিথ্যা, অবমাননাকর এবং বাস্তবতা বিবর্জিত সংবাদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে, অন্যথায় ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল পরবর্তী পন্থা গ্রহনে বাধ্য হবে।
পরিশেষে, বাচ্চাটির পিঠা মেলার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে না পারায় স্কুল কতৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সে জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।
এই প্রেস রিলিজের জবাবে বাংলাকথা তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছেন(২৩ শে আগস্ট) :
প্রতিবেদক ও বাংলাকথার বক্তব্যঃ
প্রথমত গত ১৯ আগষ্ট প্রকাশিত সংবাদে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল নিয়ে প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল “ ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়”। যেখানে স্কুলটির সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্যের (ম্যানেজিং কমিটির সব সদস্য নয়) বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়(ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলকে নিয়ে নয়) । যার উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাছে অভিভাবকদের অভিযোগ গুলো তুলে ধরা যাতে তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা গ্রহন করেন। কিন্তু আমরা এখানে গভীর দূঃখের সাথে লক্ষ্য করলাম স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটি একজন সম্পাদক ও তার কিছু অনুসারিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ার অভিযোগের (অভিভাবকদের ) সত্যতা লক্ষ্য করলাম। যার ফলে ঐ গোষ্ঠী সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটিতে যে ভাষায় প্রতিবাদ করেছে তাতে মনে হয় মুখের আড়ম্বর যেন তাদের পুঁজি । সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানাতে জোসেফ গোয়েবলসের নীতির অনুসরন করছে।একটি বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদনে হলুদ সাংবাদিকতার সস্তা ট্যাগ দিয়ে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছেন।
প্রতিবাদ লিপির প্রথমেই তারা গত বাধা ভাবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিভাবকদের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায় সারলে ও গান শেখানোর একটি ক্লাসে অভিযুক্ত সম্পাদক কর্তৃক রেগে গিয়ে টেবিলের উপর জোরে আঘাত এবং প্রায় সব শিক্ষার্থী কেঁদে দেওয়া এবং এর পর পরই স্কুল থেকে একযোগে কয়েকজন শিক্ষার্থী চলে যাওয়ার সুনির্দিষ্ঠ অভিযোগের ব্যাপারে কোন কিছুই বলা হয়নি। প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে রিহার্সাল ব্যতীত কেহই চূড়ান্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না তা অভিভাবকদের জানিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্র আমাদের প্রশ্ন তাহলে নিয়ম ভংগ করে স্কুল কমিটির সভাপতি কেন আবার ঐ শিক্ষার্থীকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আলাদাভাবে অংশ গ্রহনের আশ্বাস দিয়ে প্রবঞ্চনা করলেন।
হুক্কা ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়েছে “ বাংলার কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে সাজ সজ্জার মাধ্যমে তুলে ধরা অংশ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। অথচ হুক্কা সম্পর্কে উইকিপিডিয়া বলা হয়ছে “হুক্কা আরবি: أرجيلة, ফার্সি: قلیان, উর্দু حقّہ ধূমপান করার মাধ্যম। যা মাদকের চেয়েও ক্ষতিকর। অনেকে নল জল, হুকি নামেও ডেকে থাকে। আবার অনেকে ভারতীয় ধুমপান পাইপ বলেও ডেকে থাকেন। হুক্কার মাধ্যমে ধুমপান স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর এই জল কখনোই পরিশুদ্ধ নয়।বরং শরীরের জন্য সংক্রামক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ধারণা করা হয় মুঘল সম্রাটের ইরফান শাইখ বা পারস্যের সাফাভি রাজবংশ এই হুক্কার আবিস্কারক।আর সেখান থেকেই গোটা ভারতবর্ষে হুক্কা ছড়িয়ে পড়ে কিছু দিনের মধ্যই ওসমানি সম্রজ্যের সময়ে হুক্কা পার্শবর্তী সাফাভি রাজবংশ থেকে মিসর ও লেভ্যান্ট ছড়িয়ে পরে।
এখানে দেখা যাচ্ছে হুক্কা হচ্ছে ধূমপান করার মাধ্যম যা মাদকের চেয়েও ক্ষতিকর এবং সাফাভি রাজবংশ এই হুক্কার আবিস্কারক। এরকম একটি বিষয়কে প্রতিবাদ লিপিতে বাংলার কৃষ্টি ও ঐতিহ্য হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে যার মাধ্যমে ঐ গোষ্ঠী বাংলার কৃষ্টি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের দৈনতা আরেকবার কমিউনিটির সামনে প্রকাশ করলো। এছাড়া বাংলাকথার প্রতিবেদন হুক্কা পানের কোন কথা বলা হয়নি, কিন্তু তাদের এই বক্তব্য যেন গ্রামীন শ্লোক “ ঠাকুর ঘরে কে রে ? আমি কলা খাইনি” কে মনে করিয়ে দেয়।
অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের ব্যানারে হুক্কা ব্যবহারের ছবি , তাদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ছবি গুলো ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখানে অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় গনমাধ্যম গুলোর নীতিমালা অনুসরন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ান প্রাইভেসী এ্যাক্টের কোন ব্যতয় ঘটেনি। কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে হুক্কার মত ধুমপানের বস্তুর প্রদর্শনীর লজ্জা এড়াতে এখান তারা “ উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে”চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
সাংবাদিকরা দেশ ও জাতির শেষ ভরসা। সৎ সাংবাদিকের কোনো বন্ধু নেই এবং দেশ-কাল-পাত্র নেই। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের উপর হুমকি, নির্যাতন, মামলা এবং হামলা চরম অসহিষ্ণ এবং অগণতান্ত্রিক আচরণেরই বহিপ্রকাশ।আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।এই অসুখ সব দেশ সব সমাজের সর্বস্তরে কমবেশি প্রকাশিত। তবে আমরা এই ধরনের সামাজিক অনাচার ও বৈপরিত্যের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আমাদের লেখনী অব্যাহত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিক্ষুদ্ধ অভিভাবকদের সাথে আমরা এখন বিশ্বাস করি ম্যানেজিং কমিটির ব্যানারে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু অযোগ্য এবং অদক্ষলোক স্কুলটিকে ভুলভাবে পরিচালিত করছে এবং প্রতিবাদ লিপির শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাষা ঐ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হীমমন্যতা ও নীচুতার পরিচয় বহন করে।
আমরা ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল কমিটির মুক্তমনা দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষন করে, স্মরন করিয়ে দিতে চাই যে, আমরা আপনাদের বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে ( মিনিস্টার্স এওয়ার্ড নিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি) সংবাদ প্রকাশ করে আপনাদের পাশে থেকেছি। বাংলাভাষা প্রসারে আপনাদের মহতি উদ্যোগের আমরা একজন সহযোদ্ধা। তাই নিজেদের ভুল ত্রুটি এবং সিডনির বিভিন্ন সাবারবের বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলা স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহন করুন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাকথা ও সম্পাদনা পরিষদের সদস্যদের নামে অপ্রচার ও কুৎসা রটনা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা করুন, প্রতিবাদলিপির নামে বিভিন্ন স্থানে প্রকাশিত মানহানিকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিন। অন্যথায় বাংলাকথা, অস্ট্রেলিয়ার প্রচলিত আইন অনুযায়ী সম্ভাবপর সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করতে বাধ্য হবে।
সূত্রঃ
১.http://banglakatha.com.au/details/51083/42/%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%89%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%EF%BF%BD
২.http://www.priyoaustralia.com.au/community-news/sydney-news/2018/08/22/%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%89%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95-4/
৩.http://banglakatha.com.au/details/51115/42/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%93-%E0%A6%A8%EF%BF%BD