ফজলুল বারী:আমার দেখা বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান গনভিত্তিহীন ভীরু রাজনীতিক হলেন ডক্টর কামাল হোসেন । মাঠ-ঘাট চষে বেড়ানো পপুলার পরিশ্রমী রাজনীতিকের ছিটেফোটাও তার মধ্যে নেই। তিনি মূলত আইন ব্যবসায়ী। পার্ট টাইম রাজনীতিক। টাকা ছাড়া কিছু বোঝেননা। কোথাও কখনও নিরাপত্তার অনুবীক্ষনিক সমস্যা দেখলেই বিদেশে দৌড় দেন। আর প্রতিটি পদক্ষেপে সবকিছুতে দেখেন মার্কিন স্বার্থ। তিনি যে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সেটিও মার্কিন ইচ্ছাতেই হয়েছিল। তার মনে হয়েছিল আমেরিকানরা আওয়ামী লীগকে দেশের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই তার এখানে থাকা চলেনা।
বাংলাদেশ থেকে তসলিমা নাসরিনকে নিরাপদে বের করে নিয়ে যেতে ডক্টর কামাল যে হাইকোর্টে দাঁড়িয়েছিলেন সে ব্যবস্থাটিও তখন করে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। এর কারনে ডক্টর কামালকে তখনও অবশ্য মোল্লাদের ভয়ে বেশ কিছুদিন বিদেশে গিয়ে থাকতে হয়েছে। সেই ডক্টর কামাল হঠাৎ করে যখন এখন প্রতিদিন ‘আমি সাহসী আমি সাহসী’ বক্তব্য দেন তা দেখে হাসি। মুখে বঙ্গবন্ধু বগলে বিএনপি-জামায়াত, সারাক্ষন ট্রল-কটাক্ষ করেন শেখ হাসিনাকে! আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধৈর্যের প্রশংসা করতেই হয়। কারন বাংলাদেশে ডক্টর কামালের কোন গণভিত্তি নেই। শেখ হাসিনার আছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে বলেছেন, অভিনয়ের জন্যে তাকে অস্কার দেয়া উচিত! অভিনয়তো এখন করছেন ডক্টর কামাল স্বয়ং। টেবিলেও ওপাশে বসে হাত মুঠ করে বসে জোরে জোরে সংলাপ উচ্চারনকেই কী সাহস বলে মিঃ অভিনেতা?
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাক্ষন অনলাইনে থাকি বলে জন্মভূমি বাংলাদেশের চলতি নির্বাচনী ডামাডোলের আপডেট জানতে পারি সারাক্ষন। দেশে এখন একজন আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায়। তাঁর নেতৃত্বের দৃঢ়তার কারনে অবিশ্বাস্য উন্নতি হয়েছে দেশে। কিন্তু ডক্টর কামালের নেতৃত্বে একটি জোট গঠন করা হয়েছে যেটির মূল এসাইনমেন্ট যে কোন মূল্যে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে শেখ হাসিনাকে! শুরু থেকে বলে আসছি এই জোটটি পাকিস্তান-আমেরিকান নকশার। শেখ হাসিনার কারনে তারা এখানে মুসিবতে আছে। আমেরিকান অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এ অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থের সঙ্গে চূড়ান্ত বেয়াদবি। এরপর তারা যে দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল সেটির আজকের চোখ ধাঁধানো অগ্রগতি কি তাদের সহ্য হয়? পচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই আমেরিকাকে নমোঃ নমোঃ করে চলেছে। আর শেখ হাসিনা আমেরিকাকে থোড়াই কেয়ার করেন! এটি কি তাদের সহ্য হয়?
একটা বিষয় খেয়াল করবেন বাংলাদেশে এতোকিছু হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এসবের কোথাও দৃশ্যপটে ডক্টর ইউনুস নেই! তিনি প্রচুর কথা বলতে পছন্দ করেন। কিন্তু দেশের নির্বাচন নিয়ে তিনি কোন কথা না বলে ভাত হজম করছেন, এটি কী হয়? তিনি অবশ্যই আছেন। কৌশলে এবং নীরবে। ডক্টর কামালের ছায়ায়। দু’জনেই হরিহর আত্মা। ১/১১’র সময় দু’জনে একসঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে চেষ্টা করেছিলেন । সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর পদ্মা সেতু প্রজেক্ট ব্যর্থ হবার পর ডক্টর ইউনুস এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে। প্রকাশ্যে এসেছেন ডক্টর কামাল। ১/১১’র মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মনসুরগং’কেও নিয়েছেন তার সঙ্গে। এই জোটটি গঠনের পর ডক্টর কামাল প্রথম ব্রিফ করেন বিদেশিদের। এখনো কী করলেন না করলেন তা নিয়মিত বিদেশিদের জানানোর নজর তার। কারন এসাইনমেন্টটি যে তাদের।
কামাল হোসেনকে সবাই সংবিধান প্রনেতা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এসব লিখেন। আমি এখন আর এসব লিখিনা। বাংলাদেশের সংবিধানের কোন ধারায় লেখা আছে দেশের রাজনীতির নানাকিছু নিয়ে প্রতিদিন বিদেশিদের জানাতে হবে বা তাদের কাছে বিচার দিতে হবে? এটি কী একটা দেশের সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব? আমেরিকান রাষ্ট্রদূত বা বিদেশি যারা প্রতিদিন নানাকিছুতে মাতব্বরি করেন তার দেশের কোন কিছুতে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে কী কথা বলতে দেবেন না এলাও করবেন? তারা কী তাদের পদ মর্যাদা জানেন? যুগ্ম সচিব মাত্র।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সবপক্ষকে সিরিয়াসলি ভাবার অনুরোধ করছি। যুদ্ধ করে স্বাধীন করা আমাদের গৌরবের বাংলাদেশ। আকারে দেশ আমাদের যত ছোট হোক, দেশের যত গোলমাল থাকুক না কেনো এসব নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে মাখামাখি খুবই অপমানকর ও আপত্তিকর। বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল ছিল তখন প্রতি বছর বাজেট করার আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রীকে সাহায্যের আশায় প্যারিস কনসোর্টিয়ামের বৈঠকে যেতে হতো। বিএনপির সাইফুর রহমান এমন কতবার যে ব্রিফকেস হাতে প্যারিস গেছেন! তখন সেখানে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবনা দেখেশুনে দাতা দেশগুলো সেই বৈঠকে যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিতেন এর ওপর নির্ভর করতো বাজেট। বিদেশিরা তখন বলে দিতে এই করতে হবে সেই করতে হবে! এটা না করলে কান মলে দেবো।
পচাত্তরের পর থেকে সামরিক সরকারগুলো তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার আশায় বিদেশি দাতা দেশের সরকারগুলোর সমর্থনের কাঙ্গাল হয়ে থাকতো। এখন দেশের অবস্থা বদলালেও সে অভ্যাস এখনো দেশের রাজনীতিকদের যায়নি। এটা দেশের পরিশ্রমী জনগোষ্ঠী-ভোটারদের অপমান ছাড়া আর কী? জনগন যদি ক্ষমতার মালিক হবে তাহলে এভাবে নির্লজ্জের মতো বিদেশিদের কাছে ধর্না কেনো? ডক্টর কামালের আইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নানাকিছুতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস সহ বিদেশি দূতাবাসগুলোর ভাড়া খাটে। দেশটাকেও এরা ভাড়া খাটার উপকরন করে ফেলেছে! প্লিজ ডক্টর কামাল সাহেব আপনি নিজেকে বাংলাদেশের সংবিধান প্রনেতা মনে করলে জবাব দিন এটি একটি স্বাধীন দেশের সংবিধান অনুমোদন করে কিনা। সংবিধানে এ নিয়ে অস্বচ্ছতা থাকলে এটি দূর করার প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে দিলেননা! আপনারা আবার পরিবর্তনের শ্লোগান দেন!
একটা কথা বিভিন্ন লেখায় বারবার লিখি, তাহলো বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল কোন রামকৃষ্ণ মিশন বা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম না। শেখ হাসিনাও রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায়েত না, ডক্টর কামালও না। ক্ষমতার রাজনীতি একটি কৌশলের খেলা। আপনাদের কৌশল যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যাবেন। আর শেখ হাসিনার কৌশল কী হবে ‘এসো এসো আমার ঘরে এসো’ গান ধরে আপনাদের ক্ষমতায়নের অপেক্ষা করা! শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের অনেক অসম্পূর্নতা আছে। কিন্তু এই যে রাতদিন কাজ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা দেশকে আজকের উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন এর সর্বৈব কী মিথ্যা? না বয়স হওয়ায় চোখেও সবকিছু ঠিক দেখেননা? বাংলাদেশে নির্বাচন কী এই প্রথম হচ্ছে? আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকতে সব বাধা পেরিয়ে নির্বাচন করার সংগ্রামগুলো কী ভুলে গেছে বাংলাদেশ? প্রশাসন-পুলিশের সব হয়রানি স্বত্ত্বেও আওয়ামী কী লড়াই করে জেতেনি? কোর্টে প্রার্থীদের প্রার্থীতা বাতিল হচ্ছে? আপনারা এতো বিজ্ঞজন! কিন্তু এসব সমস্যা উল্লাহদের প্রার্থী করার সময় কী বিষয়টি মাথায় ছিলোনা? না তারেকের মনোনয়ন বানিজ্যের কারনে তখন ‘চেয়ে চেয়ে দেখলেন, বলার কিছু ছিলোনা’? আর আপনারা এত বড়বড় উকিল, রায় নিজের মক্কেলের পক্ষে না গেলে ফাইল বিচারকদের দিকে ছুঁড়ে মারার অভ্যাস, এখন কোর্টের সঙ্গে পারেন না কেনো? ঈমান দূর্বল?
ডক্টর কামালের প্রতিদিনের ঝারিজুরির সারমর্ম যেন ঠিক করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ-শেখ হাসিনাকে হারতে হবে, তাহলে বলা যাবে নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে! অভিযোগে ইনারা এরমাঝে রিজভির কাছেও ফেইল! বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে বসে ডক্টর কামাল-রব-মান্নাদের মাথায় ঢুকেছে উনারা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রভাবশালী রাজনীতিক! আর শেখ হাসিনা সহ মহাজোটের নেতারা সবাই হরিদাশ পাল! তাদের পিছনে কোন লোকই নেই! তরুনদের কথা বলেন! দেশের তরুনদের আইকন মাশরাফি-সাকিবরা ঘোষনা দিয়ে কোন পক্ষ নিয়েছে, গুলশানে ফারুকের পিছনে, মানিকগঞ্জে মমতাজের পিছনে জনতার ঢল কেনো, দেশের জনপ্রিয় তারকা-শিল্পীরা কোনপক্ষ নিয়েছে এসব কিছুই চোখে পড়েনা? যুদ্ধাপরাধীদের নিবন্ধনহীন দল জামায়াতের প্রার্থীদের প্রতারনামূলক বিএনপির পরিচয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে দাঁড় করিয়েছেন ডক্টর কামাল হোসেন! মুখে সারাক্ষন বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু বলে প্রতারনা করেন, বঙ্গবন্ধুর সংবিধানের কথা বলেন, জিয়া-এরশাদের সংবিধান এটি কী বঙ্গবন্ধুর সংবিধান! তরুনদের ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে বাগাড়ম্বর করেন, আর তরুন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে খামোশ বলে থামিয়ে দেন! তাদের সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন! আপনার এসাইনমেন্ট, অভিনয় সব এরমাঝে ফাঁস হয়ে গেছে। আমি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধৈর্যের প্রশংসা করি। ডক্টর কামালগং এর নানা উস্কানি স্বত্ত্বেও তারা এখনো কোন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না। কিন্তু এ অবস্থা চলবে কতোক্ষন? মিরপুরের সামান্য দৌড়ানিতেই এমন নাজুক অবস্থা? আমি নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছি। ডক্টর কামালদের আসল কারসাজি শুরু হবে তখন। অতএব সাধু সাবধান!