ফজলুল বারী: কল্যান রাষ্ট্রগুলো নাগরিকদের নানা ইস্যুতে টাকা দেয়। সংকটে পড়ে তারা যাতে ভয় না পায়, নাগরিকদের পকেটে পয়সাকড়ি থাকলে তাদের মন ভালো থাকবে, তারা ভয় পাবেনা এরজন্যে প্রনোদনার নামে দেয়া হয় এসব টাকা।
এসব টাকা সবার ব্যাংক একাউন্টে যায় বলে তা নিয়ে কোন প্রশ্নও ওঠেনা। বাংলাদেশের মতো মোবাইল ব্যাংকিং উন্নত বিশ্বে নেই। মোবাইল ব্যাংকিং’এর প্রক্রিয়াটিও সবক্ষেত্রে স্বচ্ছ নয়।
বাংলাদেশ কোন কল্যান রাষ্ট্রও নয়। এখানে আগে গরিব লোকজন দেখে ছাগল দেয়া হতো। শেখানো হতো গরু মোটাতাজা করার ফর্মূলা। গরিবকে ছাগল দেবার, গরু মোটাতাজা করার ফর্মূলায় মোটা গরুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি তুলে সে ছবি ছাপার জন্যে দেয়া হতো মিডিয়ায়।
তখন বিটিভি এসব ছাগল দেয়া-মোটাতাজা করার ফর্মূলার গরুর পিছনে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরন নিয়ে প্রচার করতো বিশেষ চিত্তাকর্ষক রিপোর্ট। সেই বিশেষ ছবিগুলো এখনও খুঁজলে নিশ্চয় পাওয়া যাবে বিটিভি আর্কাইভে।
শেখ হাসিনার সমস্যা তিনি ছাগল ভালোবাসেননা। গরু মোটাতাজা করার পূর্বসূরীয় ঐতিহাসিক কর্মসূচি তিনি এগিয়ে নেননি। কাজ নেই কাম নেই তিনি খালি স্কুলের বাচ্চাদের বছরের প্রথমে বই দেন।
প্রত্যেক ইংরেজি বছরের প্রথম দিন এসব বই দেয়া নিয়ে বাচ্চাকাচ্চারা হৈচৈ করে! এভাবে শিশুকাল থেকে সব বাচ্চাগুলো আওয়ামী-বাকশালী হয়ে যায়! প্রত্যেক বছর একই রকম ছবি হয়।
আগের বছরের ছবি আর এ বছরের ছবি, এতে কোন নতুনত্ব নেই। নিশ্চয় বই ছাপার কাজও আওয়ামী লীগাররা পায়!
প্রতি বছর কী এসব বই ছাপা-বিলি নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, বিদেশে পাচার হয়? কী জানি। শেখ হাসিনা নিশ্চয় এসব কাজ-কর্ম জটিল গোপনীয়তার ভিতর করেন!
এরজন্যে বাংলাদেশের কোন মিডিয়া এসবের কোন খোঁজ পায় না! এমন কী সোশ্যাল মিডিয়া-বাঁশের কেল্লাও নয়! বিষয়টি খুঁজে বের করার জন্যে একটি স্বচ্ছ ও আন্তুর্জাতিক মানসম্পন্ন ট্রাইবুন্যাল গঠন করতে হবে। এটাই বলা বাকি আছে!
ছাগল দেয়া, গরু মোটাতাজা করার ঐতিহাসিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে শেখ হাসিনা এখন নতুন বইয়ের সঙ্গে স্কুলের বাচ্চাদের নতুন জামা, ব্যাগ কেনার জন্যে টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু টাকা দেবার প্রক্রিয়াটিও কী অস্থির গোপনীয় পদ্ধতিতে চালানো হচ্ছে?
সেখানেও কী দেড়-দু’শ বাচ্চার জামা-ব্যাগ কেনার টাকা গোপনে একজনের মোবাইল নাম্বারে যাচ্ছে? যা গণমাধ্যম প্রকাশ করতে পারছেনা! অথবা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়ে তারা তা প্রকাশ করছেনা!
কিন্তু বাঁশের কেল্লা কী করে! ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনতো বাঁশের কেল্লার জন্যে প্রযোজ্য নয়! অথবা এই অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মতো বরেন্য শিক্ষকের মৃত্যুর পর একেকজন যা খুশি লিখছেন!
তাদের কারও বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, তাদের ধরা হয়েছে কি? এ বিষয়টি তদন্তের জন্যেও স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ট্রাইবুন্যাল গঠন করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মার্কা ট্রাইবুন্যাল করলে চলবেনা।
কারন এই ট্রাইবুন্যালের কাজ হলো পাকিস্তানি ইসলামের সেবকদের যুদ্ধাপরাধী নাম দিয়ে ফাঁসি দেয়া। এই ট্রাইবুন্যালের লোকজন দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ওয়াজের একটাও ক্যাসেট শুনে নাই। খালি লইট্যা ফিস মেশিনম্যানের অডিও শুনেছে।
একাত্তরের দেইল্লা রাজাকার নাম বদল করা স্বত্ত্বেও তাকে ধরে ফেলে শাস্তি দিয়ে চাঁদ হুজুরকে কারাগারে রেখেছে। যেখানে ইসলামের ইতিহাসের আর কোন হুজুর চাঁদে যেতে পারেননি, সেই চাঁদ হুজুর সাঈদি আজ কেনো কারাগারে!
এই রহমতের মাসে তার শুশ্রু রঙ্গিন করার সামগ্রী তাকে ঠিকমতো দেয়া হচ্ছে কীনা, পাকিস্তানিটা দেয়া হচ্ছে কীনা তা নিয়েও আওয়ামী বাকশালী কোন মিডিয়া রিপোর্ট পর্যন্ত করছেনা।
এখন উল্টো তার ছেলে রকি চৌধুরীদের নিয়ে মিটিং করছেন, না বাবু নগরীকে নিয়ে মিটিং করছেন এসব মিডিয়ায় ফাঁস করানো হচ্ছে। বিশিষ্ট ফটো প্রেমিক রকি চৌধুরী! এমন কেউ বাদ নেই যার সঙ্গে তার ছবি নেই!
এমন একজন বিশিষ্ট ছবি শিল্পী যে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে দুই পা ভেঙ্গেছেন, ব্যথা পেয়েছেন, তার চিকিৎসার জন্যে কোন মেডিক্যাল বোর্ড পর্যন্ত গঠনের খবর নাই।
করোনা মোকাবেলায়ও শেখ হাসিনা সম্পূর্ন ব্যর্থ। বাংলাদেশের লোকজন আগে চিকিৎসার জন্যে ভারত যেতো, সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক যেতো। এসব বাংলাদেশের হাসপাতালে গরিব টাইপের লোকজন ছাড়া কেউ যেতোনা।
এমনকি মির্জা ফখরুলও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যেতেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় সিঙ্গাপুর-ব্যাংককতো বটে, ভারতও বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট, এমনকি ট্রেন-বাস সব বন্ধ করে দিয়েছে!
অতএব কেউ পছন্দের দেশে চিকিৎসার জন্যে যেতে না পেরে মারা যাচ্ছেন! এসব মৃত্যুর জন্যে শেখ হাসিনা দায়ী! তাঁর সরকার যদি শক্তিশালী হতো, কূটনীতিতে দক্ষ হতো তাহলে এসব ফ্লাইটও বন্ধ হতোনা, করোনায় দেশের ফকির টাইপের লোক ছাড়া কেউ মরতোনা।
শেখ হাসিনার আরেক ব্যর্থতা হলো বেশি করে ধান ফলানো! এবার নাকি তিন কোটি মেট্রিক টনের বেশি বোরো ধান উৎপাদন করা হয়েছে! স্কুল-কলেজের ছাত্রদের পড়াশুনা বাদ দিয়ে নেয়া হয়েছে ধান কাটতে!
এভাবে সুপরিকল্পিতভাবে দেশের ভবিষ্যত ছাত্রদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে! পড়াশুনা শিখে তারা ভবিষ্যতে ডাক্তার-ইঞ্জিনীয়ার হবে? না ধান কাটার ক্ষেত মজুর হবে?
দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীদের এ ব্যাপারে গভীর মনোযোগ দিয়ে প্রতিবাদ করা উচিত। এখন যদি দেশে বেশি করে গুদাম বানানো না হয়, গণভবনের খালি জায়গাতেও ধান রাখার ব্যবস্থা করা না হয়!
তাহলে এভাবে তিন কোটি-চার কোটি মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করে কী লাভ? এতে করে আমরা যে সব দেশ থেকে চাল আমদানি করতাম, সে সব দেশের সঙ্গে আমাদের বানিজ্যিক-কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হবে।
এমনিতে সরকারি ব্যর্থতায় দেশের মানুষ এখন বিদেশে চিকিৎসার জন্যে যেতে না পেরে করোনায় মরছে! এবার কেউ ঈদ শপিং’ও যেতে পারেনি! এখন বেশি ধান উৎপাদনের নামে দেশে বিদেশে নতুন সংকটের সৃষ্টি করা হচ্ছে!
করোনার কারনে সরকারের ব্যর্থতায় কৃষক ক্ষেতের সবজি-পুইশাক-কচু শাক কিছুই বাজারে নিতে পারছেনা! ধুন্দল নিতে পারছেনা। আর সরকার এখন ডাকবিভাগের গাড়িতে করে এসব পরিবহনের নামে তামাশা শুরু করেছে!
ডাক বিভাগের গাড়ি নেবে মানুষের চিঠি-পার্সেল এসব। সেই গাড়িতে যদি এখন পুইশাক-কচু শাক পরিবহন করা হয়, এসবের গন্ধে লোকজন আর চিঠি-পার্সেল এসব কী আর বাসা-বাড়িতে নিতে পারবে?
কচু শাকের চুলকানি যদি এখন চিঠি-পার্সেলের গায়ে লেগে বাংলার ঘরে ঘরে যায়, তাহলে এই দেশের ভবিষ্যত কী? না এর পিছনেও আওয়ামী-বাকশালী সরকারের সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্র রয়েছে!
করোনার পর বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে তা চর্ম রোগ ছড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্র? রিজভি কী এ নিয়ে একটি ব্রিফিং করবেন? আওয়ামী বিরোধী বিবেকের কন্ঠস্বরতো রিজভি ছাড়া কেউ নেই।
এ বিষয়টিও স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে তদন্ত করতে হবে। ছাগল নয়, মোটাতাজা গরুর ফর্মূলা নয় অতঃপর ঈদ উপহারের নামে আওয়ামী লীগের লোকজনকে টাকা দেবার ষড়যন্ত্রও ধরা পড়ে গেছে!
একেক মোবাইলে দেড়-দুশ লোককে টাকা দেবার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল! কিন্তু ফেসবুক যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পিছু হটেছেন! এই যোদ্ধারা কিন্তু যেই সেই সাধারন কেউ নন!
নিজেদের তারা ‘আওয়ামী পরিবারের সন্তান’-কখনো কখনো নিজেদের ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ও পরিচয় দেন। নুরু ভিপির মতো আর কি! আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে ‘আওয়ামী পরিবারের সন্তানরা’ শেখ হাসিনাকে যা খুশি করতে দেবেননা!
অতএব ‘তারা’ এবং ‘উনারা’ এখন বলছেন, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে এই টাকা মারা ভন্ডুল করে দিয়েছেন! ‘এক নাম্বারে একজনের বেশি টাকা যায়না, অটোমেটিক টাকা রিলিজ বন্ধ হয়ে যায়’, এসব নাকি সব গা বাঁচানো বানানো গল্প!
শেখ হাসিনাকে এসব বই-জামা-ব্যাগ দেয়া, ছাত্র বৃত্তি, বিধবা ভাতা-বয়স্ক ভাতা সহ সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচি বাদ দিয়ে ছাগল বিতরন-গরু মোটাতাজার ফর্মূলার ঐতিহাসিক কর্মসূচিতে ফিরতে হবে।
আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে ‘আওয়ামী পরিবারের সন্তানরা’ শেখ হাসিনাকে যা খুশি করতে দেবেননা। এসব করার জন্যে কী ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে এসেছিলেন?
খেয়াল করে দেখবেন, এদের কাছে শেখ হাসিনা, তাঁর সরকারের কোন সাফল্য নেই! দোষের শেষ নেই শেখ হাসিনার! গত ১২ বছর শেখ হাসিনা, তাঁর সরকার একটা ভালো কাজও করেনি!
ভুলতো শেখ হাসিনাও করেন। কারন তিনিও একজন মানুষ। কিন্তু সবকিছুতে নেগেটিভ এদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে শেখ হাসিনা নিশ্চয় এত কাজ করতে পারতেননা।