শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সহযোদ্ধার বিদায়

শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সহযোদ্ধার বিদায়

ফজলুল বারী : স্ট্রোকের পর যখন তাঁর অপারেশন হলো, ডাক্তাররা মুখস্ত বললেন, অপারেশন সফল হয়েছে। কিন্তু তিনি চলে গেলেন ডিপ কোমায়। আর জাগলেননা। এমন রোগীদের অনুসরনের অভিজ্ঞতা থেকে তখনই ভাবতে শুরু করি, আশা শেষ।
মিরাকল ঘটনা ছাড়া এমন অবস্থা থেকে খুব কম মানুষ ফিরে আসেন। এমন ব্যক্তিরা জাতীয় জনগুরুত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি হলে হেলথ বুলেটিনেও আশার সলতে জ্বালিয়ে রাখাটাও একটি শিল্প। মিডিয়া ব্রিফিঙের জন্যে স্বনামখ্যাত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম।
তাঁর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিঙের আশার সলতের লাইনটি ছিল, ‘যেহেতু অবস্থার অবনতি হয়নি, এটিকেই আমরা বলবো অগ্রগতি! শুক্রবার বলা হলো এক দু’বার হাত নেড়েছেন মোহাম্মদ নাসিম!
আমরা আশাবাদী হলাম। কিন্তু এটিই যে ছিল সেই দূঃস্বপ্নের মতো সত্য! তাহলো ‘বাতি নেভার আগে দপ করে জ্বলে ওঠে শেষবারের মতো’। যিনি ডিপ কোমায়, তাঁর ম্যাসিভ কার্ডিয়াক এটাক এ্যারেস্ট হলো শনিবার সকালে!
এরপরও চিকিৎসকরা বললেন শেষ চেষ্টাটা করে দেখি! আর কোন কিছুতেই কোন লাভ হয়নি। মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে রাজাকারদের আন্ডাবাচ্চাদের খুশির যৌক্তিক কারন আছে। কারন তাদের রাজাকার বাপদের ফাঁসি হয়েছে।
আর যারা ‘নিরপেক্ষ বীর’ তারা তাকে খন্ডিতভাবে জানে। আর বীর কখনও নিরপেক্ষ হয়না। কোন একটি পক্ষে গিয়ে জয়ী হয়ে এরপরও বিজয় ঘোষনা করলে মানুষ তাদেরকে বীর হিসাবে বন্দনা করে।
বীরই যদি হবেন অমুক অমুককে বাদ দিয়া লিখেন কেনো? বেয়াইকে দেখেননা? দরবেশ চাচা দেখেননা? এক বেয়াইকে দেখিয়ে সেই জুনিয়র রিপোর্টারটা কিভাবে টাকার কুমির এর কী কিছুই জানেন না দেখেননা?
আজ আপাতত নাসিম ভাই পর্যন্ত থাকি। অতঃপর আজ তিনি সত্যি সত্যি সেখানে চলে গেলেন। যেখান থেকে কেউ কোনদিন ফিরে আসেননা। এরপর আর আমরা কি করতে পারি?
সিডনির ইমু প্লেইনস নামের একটি জায়গায় আমি এই মুহুর্তে। এলাকাটিকে কান্ট্রি সাইডও বলা চলে। খামার বাড়ি আছে বেশ কিছু। পাহাড় আছে। সে কারনে এখানে শীতের সকাল সন্ধ্যা ঢেকে থাকে কুয়াশায়।
চোখের সামনে সারাক্ষন বাংলাদেশের অনলাইন, নিউজ চ্যানেল। এরজন্যে যত দূরে থাকিনা কেনো জন্মভূমির কোন একটি খবর জানতে এক মুহুর্ত দেরি হয়না। এই খবর পেতেও দেরি হয়নি।
বুঝতে পারলাম আমার চোখ দুটি ভিজে গেছে। আমি কিন্তু একটুও শব্দ করে কাঁদিনি। এরপরও পানিও বুঝি কিছু গড়িয়ে পড়লো। শ্রদ্ধা-ভালোবাসার চোখের পানি। সবার বেলায় চোখে এমন পানি আসেনা।
আপনি কী যার তার জন্যে কাঁদতে পারবেন? এই করোনা সময়তো অনেক কিছুই শেখালো! আমাদের নাসিম ভাইর জন্যে ভালোবাসার কান্নার চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে একটা পোষ্ট লিখলাম ফেসবুকের জন্যে।
আজকাল যে কোন আনন্দ-শোকে এ কাজটিইতো আমাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া। আমরা ফেসবুকে বাস করি। কারন আমাদের অডিয়েন্স বাংলাদেশ। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের মানুষেরা আমাদের অডিয়েন্স।
আমাদের প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে তিনি ছিলেন শুধু নাসিম ভাই। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে তাঁর সঙ্গে সাংবাদিকদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এমন একজন মিডিয়া বান্ধব নেতা আওয়ামী লীগে আর কবে কখন আসবেন জানিনা।
তবে আসবেন। এটি দেশের সবচেয়ে প্রাচীন অথচ চিরসবুজ রাজনৈতিক দল। এ দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দলটির জন্যে ইতিহাসের পাপ-তাপ ধারন করে সপরিবারে যীশুর মতো প্রান দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।
দেশের তৃণমূল পর্যায়ে যে সংগঠনের অবস্থান, মানুষের মাঝে প্রবাহমান এ দলের অনেক মেধাবী নেতাকর্মী আসবেন, যাবেন। কিন্তু একজন মোহাম্মদ নাসিম আর আসবেননা। আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো।
এই অধ্যায় আর কোন আওয়ামী লীগ নেতার হবেনা। দেশ আর দলের কঠিন এক সময়ে অপ্রত্যাশিত এই বিদায়ের ঘটনা ঘটলো। এতে করে আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার কি ক্ষতিটা যে হলো এটা শুধু তিনিই জানলেন, বুঝলেন।
এরজন্য নাসিম ভাই হাসপাতালে যাবার পর থেকে বিচলিত প্রধানমন্ত্রী কতবার যে তাঁর ছেলে তানভির শাকিল জয়কে ফোন করেছেন! বিচলিত প্রধানমন্ত্রীর এই আকুল কান্নার খবর নাসিম ভাইর এই ছেলেটিই শুধু জানে।
সিএমএইচ রেডি রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুত রেখেছিলেন। একজন মায়ের মতো একজন বোনের মতো এই কাজগুলো তিনি সব সময় করেন। আর এভাবে কত ভাইয়ের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে বড়বোনকে!
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পর মোহাম্মদ নাসিমের বিদায়ে শেখ হাসিনা টের পেয়েছেন তাঁর ক্ষতি। দু’জনেই বঙ্গবন্ধুর দুই ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম আর ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে। রাজনীতির কারনে প্রধানমন্ত্রী পিতা-মাতা-ভাই হারা।
আর সৈয়দ আশরাফুলের মতো মোহাম্মদ নাসিমও একই ধারাবাহিকতায় জেল হত্যাকান্ডে পিতৃহারা। চার জাতীয় নেতার রক্তের দাম পরিশোধের চেষ্টা করেই যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাদের অনেকের কারনে অনেকের অনেক ক্ষোভ আছে।
কিন্তু আমার মূল্যায়ন হচ্ছে শেখ হাসিনা দেখেন এরা অন্তত বেঈমান না। যে কথাগুলো উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর শোক বার্তায়। বেঈমান তিনি ১/১১’এর সময়ও দেখেছেন। মাফ করে দিয়েছেন।
কিন্তু ধৈর্য না হারালে ডক্টর কামাল, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরদেরও তিনি মাফ করতেন। আমেরিকা চায় না আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক-থাকুক, শুধু এই কারনে আওয়ামী লীগ ছেড়ে গিয়েছিলেন ডক্টর কামাল!
একই উদ্দেশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন! অথচ বঙ্গবন্ধু তাঁকে নিজের ছেড়ে দেয়া আসনে এমপি করে সংসদে এনেছিলেন। বেঈমান না এরজন্যে ওবায়দুল কাদেরের প্রতিও বড় আপা শেখ হাসিনা দূর্বল।
এরজন্যে তাঁর অসুস্থতাকে কেন্দ্র করেও সৃষ্ট ঝড়ও তিনি দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক কথার জবাব দিতে গিয়ে নাসিম ছাত্রলীগ করা শুরু করেছিলেন। শেষটা হলো তাঁর শেখ হাসিনার হাতে।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলীর ছেলে নাসিম। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি তিনি শুরু করেছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে। একবার তাদের বাড়িতে গিয়ে এ নিয়ে মজা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
খাবার টেবিলে বসে মজা করে বলে ছিলেন মনসুর আলীর ছেলে ছাত্র ইউনিয়ন করে কিভাবে। নাসিম তখন বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ঠিক আছে চাচা আজ থেকে আমি ছাত্রলীগ করবো।
এরপর থেকে শুরু করে আজ এখানে কাল সেখানে ঘোরাফেরা করেননি। পচাত্তরের পর কত বিশাল বিশাল বাটপার নেতা আওয়ামী লীগ ছেড়ে গেছেন। আর যুবলীগ হয়ে মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগে আসেন।
মূলত এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকেই একজন সাংবাদিক হিসাবে আমি বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। ১৯৮৭ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে থাকা শুরু করলে রাজপথের আন্দোলনের নেতাদেরও ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ হয়।
তখন আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে তোফায়েল আহমদ, মোহাম্মদ নাসিম এদেরকেই মনে হতো সবচেয়ে মিডিয়া বান্ধব। আব্দুর রাজ্জাক তখনও আলাদা বাকশাল করছিলেন।
শেখ হাসিনা ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বারের বাড়িতে, সুধা সদনে যখন থাকতেন তখন বেবী মওদুদ আপা, নজিব ভাই, মৃনাল দা, বাহাউদ্দিন নাছিম সহ আরও কয়েকজনের মাধ্যমে সরাসরি মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
ক্ষমতায় যাবার পর এই লিঁয়াজো মোহাম্মদ নাসিমের মাধ্যমে সবচেয়ে সংঘবদ্ধভাবে চলে আসছিল। মাঝে মাঝে এমন আক্ষেপও করেছি মোহাম্মদ নাসিমকে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক কেনো করা হয়না।
কারন আমার সব সময় মনে হতো মোহাম্মদ নাসিম যদি আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হতেন তাহলে এ দলটির সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক আমূল বদলে যেতো। এতে করে সহজ হয়ে যেত শেখ হাসিনার অনেক কাজকর্ম।
কিন্তু তেমন কোন সুযোগতো আর কোন দিন আসবেনা। যে কোন পরিস্থিতি দক্ষতার মোকাবেলা করতে তিনি জানতেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর তিন পার্বত্য জেলায় এর বিরুদ্ধে লাগাতার হরতাল করছিল বিএনপি-জামায়াতের সংগঠন।
আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ওই চুক্তির সরকার পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন। মতিয়া আপা, হাসনাত আব্দুল্লাহকে নিয়ে তখন হেলিকপ্টারে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সভা করছিলেন নাসিম ভাই।
আমি তখন তাদের সফরসঙ্গী ছিলেন। আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে দেখিয়ে তিনি প্রায় মজা করে বলতেন, সারা জীবন বাঙলিদের নিয়ে আমরা রাজনীতি করি। আর হাসনাত ভাই কী চুক্তি করলো সেই বাঙালিরাই আমাদের প্রতিপক্ষ মনে করে!
সেই পরিস্থিতিও তাঁর নেতৃত্বে দক্ষতার সঙ্গে সামাল দেয়া গিয়েছিল। অসুস্থ নাসিম ভাইকে নিয়ে লেখার কারনে এবার অনেক আওয়ামী লীগারও আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াতের মোহাম্মদ নাসিমের ওপর ক্ষিপ্ত থাকার একশ একটা কারন আছে। কারন ১৪ দলের আহবায়ক মোহাম্মদ নাসিম যখন বিএনপি-জামায়াত নিয়ে ব্রিফিং করতেন, তাদের অনেক কিছু কাঁপতো।
মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিমকে রাজাকাররা চিনত-জানতো। এখন চেনে জানে তাদের আন্ডাবাচ্চারা। কারন শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় যুদ্ধাপরাধীদের যেমন ফাঁসি হয়েছে, তেমনি ১৪ দলকে নেতৃত্ব দিতে নাসিম ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
এরশাদও জানতেন মোহাম্মদ নাসিম কিভাবে তছনছ করেছেন তার সাম্রাজ্য। ১৯৯১-১৯৯৬’ আর ২০০১-২০০৬ সময়ের খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক তান্ডবের বিরুদ্ধে রাজপথে মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্ব এই প্রজন্ম দেখেনি।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার গণকার্ফুও সফল হয়েছে মোহাম্মদ নাসিমদের দৃঢ়তায়। এরজন্যে পনের ফেব্রুয়ারির প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া টিকে থাকতে পারেননি। একুশ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে।
কাজেই মোহাম্মদ নাসিমকে কেউ খন্ডিতভাবে দেখবেননা। প্রিয় সবাইকে আমি বলি উচ্চ রক্তচাপ আর স্ট্রোকের ব্যাপারে সাবধান। এটি ছিল আবার মোহাম্মদ নাসিমের দ্বিতীয় দফার স্ট্রোক। প্রথমবার সামাল দিতে পারলেও দ্বিতীয়বার আর পারেনননি।
চোখের সামনে আওয়ামী লীগ নামের রাজনৈতিক পরিবারের একের পর এক ঘনিষ্ঠ স্বজনের বিদায় পরিবারের বড় সদস্য হিসাবে এটি শেখ হাসিনার জন্যে কত কষ্টের তা তিনি লিখে জানিয়েছেন তাঁর অশ্রু দিয়ে লেখা শোকবানীতে।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘পিতা মোহাম্মদ এম মনসুর আলীর মতোই মোহাম্মদ নাসিম আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারন করে দেশ ও জাতির কল্যানে কাজ করে গেছেন।
সব ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় তিনি অনন্য অবদান রেখে গেছেন। শেখ হাসিনা লিখেছেন, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক ও জনমানুষের নেতাকে হারাল।
আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে’। ক্যাথলিক মোর দ্যান পোপ’রা এমন শোক প্রকাশের জন্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করবেন? জামায়াত-বিএনপি করতে পারে।
মুক্তিযোদ্ধা নাসিমের মৃত্যুতে রাজাকারের বাচ্চাদের খুশি খুশি হা হা রিঅ্যাক্টের স্ক্রিনশটে ভরে গেছে ইনবক্স। আমি এসবকে গুরুত্ব দিতেও নারাজ। কারন এদের অনেক কিছুকেই ভেস্তে দিয়েছিলেন এই দৃঢ় চেতা নেতা।
তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগারদের ক্ষোভ নিয়ে আরেকদিন লিখবো। তাঁরাও সংগঠনকে ভালোবাসেন। সংগঠন এবং শেখ হাসিনার মঙ্গল চান। আমি একজন কম পড়াশুনা জানা সাধারন মানের রিপোর্টার।
দেশে থাকতে অনেকের মতো মেধাবী না হওয়াতে পরিশ্রম দিতে ঢেকে দিতে চাইতাম সব সীমাবদ্ধতা। নাসিম ভাইর মৃত্যুর পর মনে পড়লো তিনি পূর্তমন্ত্রীও ছিলেন। আমার বন্ধুদের অনেকে শুধু তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোন নয়, প্লটও পেয়েছেন।
জনকন্ঠে আমার সময়ে আমিই একমাত্র রিপোর্টার, যাদের আশেপাশে বসতাম তাদের কেউ আওয়ামী লীগের আমলে কেউ বিএনপির আমলে প্লটসহ নানাকিছু পেয়েছেন সাংবাদিক কোটায়।
আর নাসিম ভাইর সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্বত্ত্বেও সে চেষ্টাও কখনও করিনি। আসলে দেশে যখন ছিলাম প্লটের আবেদনের সঙ্গে যে টাকা জমা দেয়া লাগতো সে টাকাও আমার ছিলোনা।
আমার সময়ের বা আগে পরের এমন খুব সাংবাদিক পাওয়া যাবে যার দেশেবিদেশের কোথাও এক টুকরো জমি বা প্লট কিছুই নেই। এমন বোকাসোকা থাকার সুবিধা এখনও সব সময় স্বাধীন লিখতে পারি।
নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ে যারা রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে চাও তাদের প্রতি পরামর্শ নাসিম ভাইর মতো মিডিয়া বান্ধব হবার চেষ্টা করো। অনেক কিছু সহজ হওয়া যায়।
মিডিয়া মানেই সুশীল এসব গালি তোমাদেরকে যারা যেখানে শিখিয়েছে তারা কিন্তু সম্পর্কটি ঠিকই রেখে চলে। আর তুমি মিডিয়ার চোখে দানব হতে থাকো! ৫৭ ধারাও তোমাকে খুঁজে! দানব কোথাও কেউ নেতা হতে পারেনা।
আপনি ভালো থাকবেন নাসিম ভাই। করোনা সময় না হলে আপনার শেষযাত্রাটি অন্য রকম হতো। এখন সংক্রমন ঝুঁকি এড়াতে আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সহ দেশের বিদেশের মানুষজন যারা মোহাম্মদ নাসিমের কাঁদছেন তাদেরকে সহানুভূতি, সমবেদনা জানাই। আপনাদের ক্ষতি কোনভাবেই পূরন হবার নয়। ভালোবাসি আপনাদের। কারন আপনাদের ভালোবাসা পেয়েই বড় নেতা হয়েছিলেন মোহাম্মদ নাসিম।
© ফজলুল বারী ভাই