সিডনিতে ফাগুন উৎসবে মেতে উঠে প্রবাসী বাঙালিরা

সিডনিতে ফাগুন উৎসবে মেতে উঠে প্রবাসী বাঙালিরা

গত রবিবার ১৪ ই ফেব্রুয়ারি (পহেলা ফাল্গুন) অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় সংগঠন সিডনি বাঙালী কমিউনিটি ইনক, সিডনির বিডি হাব কমিউনিটি হলে আয়োজন করে বর্নাঢ্য ফাগুন উৎসব। কভিড-১৯ এর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াতে সিডনিতে বসবাসরত উৎসব প্রিয় বাঙালিরা বাংলাদেশের ফাগুন উৎসবকে উৎযাপন করতে বাসন্তী রঙকে প্রাধান্য দিয়ে দেশীয় পোশাকে সজ্জিত হয়ে জড়ো হয়েছিল। ফাগুনের অনুষ্ঠানটি উৎসব মুখর করার জন্য কমিউনিটি হলটি সাজানো হয় দেশীয় থিমে যেখানে প্রাধান্য পায় নানা রঙের ফুল, ফেসটুন, ব্যানার।

অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সেলিমা বেগম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। সিডনি বাঙালি কমিউনিটির অঙ্গ সংগঠন কিশোর সংঘের ফাগুনের গান দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়।সিডনিতে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোরদের স্পষ্ট উচ্চারণে বাংলা ভাষায় ফাগুনের গানের পরিবেশনা ছিল সত্যি মনমুগ্ধকর।

দেশীয় তৈজস পত্রে নানা ধরণের পিঠা পুলি, মুড়ি মুড়কি, খেজুরের গুড়, সন্দেশ, রসগোল্লা, চমচম, মোয়া, নাড়ু, খুরমা, নিমকী, সিঙ্গারা, চমচা, বাহারি ফল মূল, চটপটি, ফুসকা, বিরিয়ানী সহ নানবিধ দেশীয় খাবারের পরিবেশনা উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে।বিদেশের মাটিতে নকশী কাঁথা,মৃৎশিল্প, বাঁশ এবং বেতের তৈরি দেশীয় তৈজস পত্রের সংগ্রহ বসন্ত উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করে।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্য থেকে নতুন প্রজন্মকে নিয়ে ফাগুন উৎসবের এই আয়োজনকে সাধুবাদ দিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি সিরাজুল হক ও সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ সিং চুন্নু। সিডনির বাসভূমি টিভির নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিক আকিদুল ইসলাম ফাগুনের রঙে রাঙিয়ে সুদূর প্রশান্ত সাগরের পারে বাংলাদেশকে বুকে ধারণের এই নিরলস প্রচেষ্টাকে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন নতুন প্রজন্মের সব কয়টি অভিভাবককে।

সিডনী কমিউনিটি ইনক্ এর অন্যতম সদস্য, নৃত্যে ছায়ানটে শিক্ষাপ্রাপ্ত নুসরাত হুদা কান্তা নৃত্যে কিশোর সংঘের সদস্যদের সার্বিক সহায়তার অংগীকার ব্যক্ত করেন। ফ্যাশান ডিজাইনার এবং বুটিক হাউজ মালিক তাম্মি পারভেজ এবং ওমরানা ইয়াসমীন সিডনী বাঙালী কমিউনিটি ইনক্ এর বাংলা ভাষা, বাংলাদেশী উৎসব, দেশীয় খাবার এবং দেশীয় ফ্যাশান ডিজাইন নিয়ে নানাবিধ উদ্যোগ এবং উৎসবের ভুয়াসী প্রসংসা করেন।

সিডনীর সাংস্কৃতিক অংগনের পরিচিত মুখ মলয় দাস আয়োজকদের বসন্তের রঙিন আয়োজনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ফিরে যেতে চান তার কৈশরের বসন্তে এবং ভীষণ মুগ্ধতায় আয়োজকদের উৎসাহিত করেন তার চিরাচরিত কাব্যিক ভাষায়। এমদাদ হক এবং নীলুফার ইয়াসমীন দম্পতি দেশীয় আদলে দেশীয় খাবার সহ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তৈজসপত্র এবং উপকরন দিয়ে বসন্তকে বরন করে নেয়ার সুন্দর আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

বসন্তের বর্নিল এবং আনন্দ মুখর অনুষ্ঠানে অভিভাবক ও উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশে উৎযাপিত ফাগুন উৎসবের স্মৃতিচারণ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বিলকিস জাহান বলেন আয়োজকদের বসন্ত বরনের এই সুন্দর আয়োজনের সাথে যুক্ত হয়ে উনি বিদেশের মাটিতে দেশীয় আমেজের পহেলা ফাল্গুনকে ফিরে পেয়ে ভীষণ আনন্দিত। বিলকিস জাহান তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কিশোর সংঘের সদস্যদের দেশীয় স্টাইলে সাজ সজ্জা এবং বসন্ত বরনের পরিবেশনায় তার মুগ্ধতার কথা উল্লেখ করেন । সমাজ সেবক কাশফি আহম্মেদ সিডনী বাঙালী কমিউনিটি ইনক্ এর বসন্ত সহ অন্য সকল দেশীয় উৎসবের আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন আমাদের প্রজন্মকে দেশীয় উৎসব এবং সাংস্কৃতির সাথে যুক্ত রাখাটা তাদের মানসিক বিকাশ এবং সুস্থ্যতার জন্য ভীষণ প্রয়োজন।

সংগঠনের সভাপতি অজয় দত্ত সিডনির বুকে ফাগুন উৎসবকে সুন্দর করার জন্য উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি টানেন। সংগীত পরিবেশনায় ছিলে কিশোর সংঘের সদস্য : আনুভা আহম্মেদ, মুন, আরিবা জায়না, রায়া খান, এরিকা চৌধুরী, সারা চৌধুরী, সেহরীশ সাইফ। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সীমা আহমেদ এবং সহায়তায় ছিলেন নীলুফার ইয়াসমীন। বাদ্যযন্ত্রে সহায়তা করেন সাকিনা আক্তার।পোষাকসজ্জায় ছিলেন বিলকিস খানম পাপড়ী। উৎসব সজ্জায় সহায়তা করে কিশোর সংঘের সদস্য ঐহিক তারিক, আনুভা আহম্মেদ, ঈশান তারিক এবং শিশুশিল্পী সাফিনা। বাহারী খাবারের আয়োজনে সহায়তা করেন বিলকিস জাহান,শারমিন সুমী , তুলি চৌধুরী, তাহমিনা চৌধুরী সুমী, মাহবুবা ববি, ওমরানা ইয়াসমীন, ফৌজিয়া কালাম রুবা, ফ্রিজিয়া ফারুক, সামিনা হক। অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহায়তায় ছিলেন আবু তারিক, শাহে আলম বাদল, আতিক হেলাল ও আরেফিনা মিতা।