ব্যাংকসটাউন কাউন্সিলে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ ( শহীদ মিনার) উদ্বোধন

ব্যাংকসটাউন কাউন্সিলে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ ( শহীদ মিনার) উদ্বোধন

মহান ভাষা দিবস ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাওয়া শুরু করেছে আর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াও পিছিয়ে নেই।
একুশে ফেব্রুয়ারি ২০২১ সকাল ১১ টায় সিডনির বেলমোরের পীল পার্কে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ ( শহীদ মিনার)। আর মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভটির যাবতীয় সহযোগিতা করে সিডনির ক্যান্টারবারি ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিল।
ক্যান্টারবারি ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিলের মেয়র খাল আসফর অনুষ্ঠানের শুরুতেও বাংলাদেশ কমিউনিটি নির্বাচিত কাউন্সিলর মোহাম্মদ হুদা ,প্রাক্তন কাউন্সিলর শাহে জামান টিটুর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং মুনির বিশ্বাস, লিঙ্কন শফীউল্লাহ ,নোমান শামীমের সহায়তায় আজকের এই স্মৃতিস্তম্ভ। সাথে আরও উল্লেখ করেন বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান যারা এই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরী করতে আর্থিক সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, “কাউন্সিলের আজকে একটি গর্বের দিন কেননা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই দিনটিতেই আমার কাউন্সিলে স্মৃতিস্তম্ভটি অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে পেরেছি। “
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল এম পি টনি বার্ক বলেন,” পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে প্রতি বছরই মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে এবং অস্ট্রেলিয়া থেকেও আদিবাসীদের শতধিক মাতৃভাষা হারিয়ে গিয়েছে। ১৯৫২ সালের তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চাপিয়ে দেয়া ভাষার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান জেগে উঠে তাদের ভাষা রক্ষার জন্য। বহু সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করে বাংলাদেশের মানুষরা। আর সেই কথা স্মরণ করেই আজ পৃথিবী জুড়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। “
বাংলাদেশী কাউন্সিলর মোহাম্মদ হুদা বলেন, “আজকে আমি কাউন্সিলর হিসেবে নিজেকে খুবই ধন্য মনে করছি আমাদের বাংলাদেশ কমিউনিটির তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্য একটি স্মৃতিস্তম্ভ  করতে পেরেছি কাউন্সিলের সহায়তায়। আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ডিজাইন, অর্থ সংগ্রহ এবং কমিউনিটির অন্যান্য সংগঠনের প্রতিটি সদস্যকে যারা আমাকে সবসময় উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন ।”
বাংলাদেশ হাই কমিশনের সিডনির কনসোলেট জেনারেল খন্দকার মাসুদুল আলম বলেন,”১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারীর ভাষা আন্দোলন ধরেই পরবর্তীতে একটি নতুন দেশের জন্ম হতে পারে ভাষার জন্য এই বিরল উদাহরণ পৃথিবীর বুকে শুধুমাত্র একটি দেশের ই আছে তার নাম বাংলাদেশ। আজ আমার অহংকার লাগছে সেই ২১ শে ফেব্রুয়ারী এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে পৃথিবীতে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে সরকারি ভাবে আরও একটি মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে ।”
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভটির মোড়ক উন্মোচন করেন টনি বার্ক ।
পরে ফারিয়া নাজিম ও অমিয়া মতিনের সাথে সমবেত কণ্ঠে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী..”গানটি গেয়ে ভাষা শহীদদের স্বরণে স্মৃতিস্তম্ভতে উপস্থিত সবাই ফুল দেয়া শেষ করলে, উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে অনুষ্ঠানিকতার শেষ টানেন মেয়র খাল আফসোর ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়েন্ডি লিন্ডসে এম পি সহ সীমিত আকারে সিটি কাউন্সিলের বিভিন্ন প্রতিনিধিগণ। স্বাস্থ্যবিধির কারণে বাংলাদেশ কমিউনিটির অনেককেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ দেয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি বলে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশসহ শীগ্রই কমিউনিটির লোকজনকে নিয়ে আরো একটি অনুষ্ঠান করা হবে কাউন্সিলর হুদা জানান ।
কাউন্সিলর মোহাম্মদ হুদার নেতৃত্বে,প্রাক্তন কাউন্সিলর শাহে জামান টিটুর সার্বিক সহযোগিতায় এবং মুনির বিশ্বাস, লিঙ্কন শফীউল্লাহ ,নোমান শামীমে সহায়তায় স্মৃতিস্তম্ভটি বাস্তবে রূপ নেয়।
বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিডনি বাঙালি কমিউনিটির পক্ষে সেলিমা বেগম, একুশে একাডেমির আব্দুল মতিন , নেহাল নেয়ামুল বারি, রংধনু ইনকের ওহাব মিয়া ও লিঙ্কন শফিউল্লা, বিডিহাবের মুনির বিশ্বাস , মুক্তমঞ্চের নোমান শামীম, ইমিগ্রেশন আইনজীবী রেমন্ড সোলেমান , সাংবাদিকদের মধ্যে ফজলুল বারী, আনিসুর রহমান ও আমিনুল রুবেল উপস্থিত ছিলেন।
পিল পার্কের নতুন এ মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধটির নকশায় একজন মা ও ডানে–বাঁয়ে তাঁর দুই সন্তানকে আগলে রেখেছেন এবং ওপরে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা সাদৃশ্য প্রতীক রয়েছে। ২০১৯ সালে ১৩ অক্টোবর এই স্মৃতিস্তম্ভটির অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল প্রায় ৪৩ হাজার ডলার অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
উল্লেখ্য, এর আগে একুশে একাডেমি, অস্ট্রেলিয়ার ২০০৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ অ্যাসফিল্ড কাউন্সিলের সহযোগিতায় অ্যাসফিল্ড পার্কে স্থাপন করা হয়েছিল।