গত বছর করোনার কারণের অস্ট্রেলিয়াতে পহেলা বৈশাখ উৎসব পালন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করার পরে অস্ট্রেলিয়ার সবকটি রাজ্যেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। আর অস্ট্রেলিয়ার বাঙালিদের মধ্যেও শুরু হয়েছে বৈশাখী উৎসবের আমেজ।
গত চৌঠা এপ্রিল সিডনির ওয়ালী পার্কের হরিজন থিয়েটারে ‘সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি’ এবং ‘গল্প-আড্ডা’র সমন্বয়ে প্রবাসী বাঙ্গালীদের নিয়ে বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করা হয়।
সাজেদা আক্তার সানজিদা পরিকল্পনায় এবং সেলিমা বেগমের পরিচালনায় কভিড-১৯ এর সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে অনুষ্ঠানটি করা হয়েছে। সিডনির বাঙ্গালীরা পরিবার পরিজন নিয়ে বৈশাখের বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে মেতে উঠেছিল এই উৎসবে। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গন ছিল বৈশাখী থীমের আল্পনা, ফেস্টুন ও ব্যানারে সজ্জিত।
সমবেতকণ্ঠে “এসে হে বৈশাখ” গানটি দিয়ে অনুষ্ঠানটির শুরু করা হয়।এরপর অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের সাংস্কৃতিক দল কিশোর সংঘের বৈশাখের পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক পর্বে বৈশাখ নিয়ে কিশোর সংঘ দলীয় ও একক সংগীত পরিবেশনা করে। কিশোর সংঘের পরিবেশনায় ছিল রায়া খান, সেহরিশ সেইরিশ সাইফ , সুবাহ্ কবীর, তামিকা চৌধুরী সারা, এরিকা চৌধুরী, সাইফান কবীর, নুসরাত টুবা ইসলাম, সাফান আকতার, মুন, রাফিয়া রেজা এবং রাইমী রেজা। বিদেশের মাটিতে বড় হওয়া কিশোর সংঘের সদস্যদের শুদ্ধ বাংলা উচ্চারনে বৈশাখের গানের পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর।
সিডনির সুপরিচিত সংগীত শিল্পী জুটি আতিক হেলাল এবং আরেফিনা মিতার গানের মূর্ছনায় উৎসবমুখর পরিবেশে একটি ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সঙ্গীত শিল্পী উর্মি জান্নাতুল ফেরদৌস মনমাতানো কিছু গানের উপহার দিয়ে উপস্থিত সকলকে মাতিয়ে রাখেন। সংগীত শিল্পী নিলুফা ইয়াসমিন সুরেলা কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন ।
বৈশাখ নিয়ে আবৃত্তি করেন শাহীন সাদাত।
ব্যাঙ্কসটাউন ও ক্যান্টাবুরি সিটি কাউন্সিলের প্রাক্তন কাউন্সিলর শাহে জামান টিটু বলেন,”আজকের পহেলা বৈশাখের এই আয়োজনে নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান ছেলেমেয়েদের উপস্থিতি দেখে আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশি সব ধরণের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান গুলো অস্ট্রেলিয়ায় আমরা করতে পারলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতি কোনোদিন হারিয়ে যাবে না। ”
নারী নেতৃত্বর চিন্তা মাথায় রেখে দশজন নারীর উদ্যোগে গত ২১ শে ফেব্রুয়ারী “গল্প ও আড্ডা” নামের নারী সংগঁঠনটি গঠন করেন। “গল্প ও আড্ডা”র প্রথম অনুষ্ঠান ৪ঠা এপ্রিলের বৈশাখী উৎসব। উৎসবের শেষ পর্বে অনুষ্ঠানকে স্বার্থক ও সুন্দর করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন গল্প ও আড্ডার সদস্য আখতার শারমিন দিলশাদ, ফারজানা ডল , শায়লা টিংকু , শারমিন তুবা ,উর্মি জান্নাতুল ফেরদৌস , সেলিনা আখতার জুঁই এবং ইশরাত জাহান। অন্যতম সদস্য মাহমুদা রহমান অনুষ্ঠানের শেষ পর্বের আগেই কর্ম ব্যস্ততার কারনে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেন।
অনুষ্ঠানটির মূল পরিকল্পনায় থাকা সানজিদা তার বক্তব্যে বলেন, ,” পরিবারের সবাইকে নিয়ে বৈশাখী উৎসবের অনুষ্ঠানটি করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। প্রত্যেকটা সদস্য অনুষ্ঠানটির পিছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বলেই এতো সুন্দর হয়েছে।”
আর অনুষ্ঠানের মুল পরিচালনায় থাকা সেলিমা বেগম তার বক্তব্যে বলেন, “গল্প- আড্ডার সদস্যের মেধা এবং পরিশ্রমের জন্য তাদেরকে নিয়ে আমি ভীষণ গর্বিত। পরিবার পরিজনকে সাথে রেখে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থেকে সিডনীতে মেধাবী এবং পরিশ্রমী নেতৃত্ব এগিয়ে আসুক সেই শুভ কামনা রইলো”
উপস্থিত সকলকে বৈশাখী আমেজে আয়োজিত মধাহ্নভোজের আহবান জানিয়ে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি টানেন সিডনী বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক্ এর সাধারন সম্পাদক সেলিমা বেগম।
রৌদ্রোজ্জ্বল চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশে এই উৎসবে ছিল বাংলাদেশী ইলিশ-ভাত ও নানা পদের ভর্তা , নিজেদের তৈরী রকমারী পিঠাপুলী, হরেক রকমের মিষ্টান্নসহ নানান রকম বাঙালি খাবারের আয়োজন।
পোশাক সজ্জায় সহায়তা করেন সাইকা রহীম। খাবারসহ সার্বিক সহায়তায় ছিলেন গল্প-আড্ডার সকল সদস্য।
শব্দ নিয়ন্ত্রণ ও গিটারে ছিলেন সংগীত শিল্পী আতিক হেলাল।স্টেজ সজ্জায় সার্বিক সহায়তা করেন কিশোর সংঘের সদস্যরা।