অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত !

অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত !

জাতীয় শোক দিবস পালন কমিটি ২০২১ এর উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল ১৪ আগস্ট, শনিবার রাত সাতটায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটায়) জুমের মাধ্যমে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় শোক দিবস পালন কমিটির আহ্বায়ক গামা আব্দুল কাদিরের সভাপতিত্বে ও কমিটির সদস্য সচিব ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টনের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডা. এস এ মালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, রুবিনা মীরা এমপি, এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মান্যবর মোহাম্মদ সুফিউর রহমান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পচাত্তরের পনেরোই আগস্টে শাহাদাতবরনকারী সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

রুবিনা মিরা এম পি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ছিলেন মহান পুরুষ যে বাঙালি জাতির জন্য তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি ৭ ই মার্চের ঘোষণায় বাঙালিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরীর দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকলকে হত্যা করে বাঙালি জাতির অস্তিত্ত্ব চিরতরে বিলীন করতে চেয়েছিলো পরাজিত শক্তিরা কিন্তু পারেনি। এখন সারা বাংলার মানুষের অন্তরে শুধু বঙ্গবন্ধু না, বঙ্গবন্ধু ছড়িয়ে আছে সারা বিশ্বের মানুষের মনে। ”

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বঙ্গবন্ধুর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী তুলে ধরেন এবং তিনি বলেন, বাংলার ইতিহাসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার আদর্শ ও কাজ বুলেট দিয়ে হত্যা করা যায় না যেটা ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বুঝতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন তার কীর্তিতে।

অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মান্যবর মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বলেন,”বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল শোষণমুক্তির , অন্যায়ের অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে, বাংলার মানুষের জন্য সোনার বাংলা গড়ে তোলার , ধর্মান্ধতা থেকে জাতিকে মুক্ত করা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জাতিকে কলঙ্কিত করেছিল কিছু বিশ্বাসঘাতক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নগুলো একে একে বাস্তবায়িত করেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। ”

আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী বলেন ,”বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না, থাকতোনা কোন জাতীয় পতাকা
কিংবা জাতীয় সংগীত।বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং ১৯৭০ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর মৃত্যু বার্ষিকীতে বলেছিলেন আমরা নতুন একটি দেশের স্বপ্ন দেখছি আর যার নাম হবে বাংলাদেশ।”

প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডা. এস এ মালেক বলেন, ” আমি দেখেছি ৬ আগস্ট রাতে খন্দকার মোস্তাকের বাসায় জিয়াউর রহমান, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ,মাহবুবুল আলম চাষি সহ আরো দুই জনকে গোপন বৈঠক করতে দেখি এবং সকালবেলা আমি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে তথ্য দিতে গিয়ে দেখি খন্দকার মোস্তাক বসে আছেন। পাবনা থেকে একলোক মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে এসেছিলেন আর বঙ্গবন্ধু মোস্তাককে এতোটাই বিশ্বাস করতেন তাকে সেই মিষ্টির হাড়ি থেকে মিষ্টি নিজের হাতে তুলে খাইতে দিয়েছিলেন। মোস্তাক বাসা ছেড়ে যাবার সময় আমার দিকে রূঢ় চোখের দৃষ্টি দিয়েছিলেন। আমি বঙ্গবন্ধুকে গভীর রাতে মোস্তাকের বাসায় একটি গোপন মিটিং হয়েছে বলে সতর্ক করেছিলাম কিন্তু বঙ্গবন্ধু বিষয়টি উড়িয়ে দেন। ”
বর্ষীয়ান এই নেতা তারপরেএকে একে বন্ধবন্ধুর সাথে তার জীবনের অনেক স্মৃতি তুলে ধরেন এবং তিনি বলেন,”বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি চক্র মারতে পারেনি অথচ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু যখন দ্বিতীয় বিপ্লব ঘোষণা করলেন তখনই তাকে পরিবার সহ নিশ্চিহ্ন করে দিলো। দেশ স্বাধীন হবার পরে বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার কাজ যখনই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো তখনই জাসদ ও সর্বহারা দেশের প্রতিটা কাজে বাধা সৃষ্টি করে যাচ্ছিলো কিন্তু তারাও সাহস পায়নি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে। একদল বিপদগামী সৈনিক যখন হামলা চালালো ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ২০ মিনিট ধরে ফোনে সাহায্য চেয়েছিলো আর্মি প্রধানসহ সবকয়টি জায়গায়। কর্নেল জামিল ছাড়া কোন সাহায্য আসেনি সেইরাতে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে। কেনো আসেনি কারণ তাকে হত্যা করার চক্রান্ত ছিলো একদিনের না। ”

অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, অস্ট্রেলিয়া যুবলীগসহ অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের উদ্যোগে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সর্বজনাব ড. নুরুর রহমান খোকন, আব্দুল জলিল, প্রকৌশলী শফিকুর রহমান অনু, ড. খায়রুল চৌধুরী, নাসিম সামাদ, ড. লাভলী রহমান, এমদাদ হক, শফিকুল আলম, ড. কামালউদ্দিন, রহমত উল্লাহ, আবু তারিক, সেলিমা বেগম, মোহাম্মদ মুনীর হোসেন, নির্মাল্য তালুকদার, ডা. আসাদ শামস, অনুপ কুমার মণ্ডল, অপু সারোয়ার, ডা. তুহিন তরিকুল ইসলাম, মোশতাক মিরাজ, নোমান শামীম, এলিজা রহমান টুম্পা, প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি আইভি রহমান।

বাঙালির অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সবসময়েই আপোষহীন। তিনি হলেন বাঙালির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তিনি কোনদিন ভাবতেও পারেন নি, বাংলার বুকে তাকে হত্যা করা হতে পারে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে পচাত্তরের পনেরোই আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে সেদিন থামিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা শেষ পর্যন্ত সফল হয় নি। সময়ের পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ আর কেবল স্বপ্ন নয়, এটি আজকের বাস্তবতা। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের বুকে বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরও বিচার করা হয়েছে। বক্তারা আরো বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের দারিদ্র্য, দুর্নীতি, চিন্তার অনগ্রসরতা, অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িকতাকে বাংলাদেশের বুক থেকে চিরতরে দূর করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কলঙ্কের দায়মোচন করতে হবে। আগামী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশের জন্য ‘মুজিববাদ’ যে একটি টনিকের মত, সেটি আমাদের বেশী বেশী করে বলতে হবে। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বলে নিজেদের দাবী করি, আমাদের সবাইকে কাজে-কর্মে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করতে হবে। আমাদের কথা ও কাজে ভিন্নতা কাম্য নয়। দেশে-বিদেশে সবাই মিলে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রায় স্ব স্ব অবস্থান থেকে আমাদের সবাইকে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে হবে।