ফজলুল বারী: সিডনির এক বাংলাদেশি দোকানে গিয়ে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট নিয়ে গল্পে গল্পে লেখার এই শিরোনামটি পেয়ে গেলাম। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে সবুজ ঘাসের উইকেট দেখে টস জিতলেই ফিল্ডিং নেবার পরামর্শ দিয়ে রেখেছিলেন সব ক্রিকেট পন্ডিত। টস জিতে বাংলাদেশও ফিল্ডিং নিয়েছে।
কিন্তু কিউই ব্যাটসম্যানরা তাতে থোড়াই কেয়ার করছে। সবাই জানেন তাদের দেশে যে কোন পরিস্থিতিতে তারাই সেরা। বিশেষ করে ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে। সবুজ এই মাঠে কিউইরা কখনও হারেনি। এর আগের ৮ টেস্টের ৭টিতে তারা জিতেছে। ড্র করেছে একটিতে।
আর বাংলাদেশ এই মাঠে আগে একবার মাত্র টেস্ট খেলে হেরেছে। আরেকবার মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সফর বাতিল হওয়াতে বাংলাদেশ দলকে খেলতেও হয়নি হারতেও হয়নি। উল্টো মসজিদের ঘটনায় না খেলেই বাংলাদেশ দল আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক কভারেজ পেয়েছে।
সারা দুনিয়া জুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীরাও আহ, উফ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বাংলাদেশ দলের পক্ষে। এবারে মাউন্ট মঙ্গানুই’এ টেস্ট জিতে বাংলাদেশ দল অন্য এক উচ্চতা নিয়ে ক্রাইস্টচার্চে খেলতে আসে বাংলাদেশ দল। স্বপ্নও তৈরি হয় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়ের।
কিউইদের বিশ্বমানের বোলিং এর বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ১৭৩ ওভার ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। মাহমুদুল হাসান জয়’র মতো নতুন একজন ব্যাটসম্যান, যিনি এর আগে দেশের মাটিতে মাত্র দুটি টেস্ট ইনিংস খেলেছেন, এমন এক তরুনও দেশের জন্যে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন।
অবিস্মরণীয় সেই ইনিংস শেষে জয় বলেছিলেন বল দেখে দেখে খেলেছি, বোলারের নাম দেখে নয়!
মাউন্টমঙ্গানুইতে বাংলাদেশের কাছে হেরে কিউই দল সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে খেলতে নামে তাদের জন্য পয়মন্ত ভেন্যু ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে ওভালে। তাদের দেশ তাদের পিচ কিউরেটর সবকিছু। উইকেটে ঘাস থাকলো না খড় থাকলো তাতে কী! যেমন আমরা মিরপুরে পিচ বানালে সেটি স্পিন সহায়ক হবেই।
নিউজিল্যান্ড দলের প্রধান ব্যাটসম্যান টম ল্যাথামকে মাউন্টমঙ্গানুইর দুই ইনিংসেই ঝটপট আউট করতে সক্ষম হয়। এর ফলও পেয়েছে দল। টম ল্যাথামকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড দল বাংলাদেশকে টপকাতে পারেনি। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে ওভালে তা পারেনি টিম টাইগার্স।
হ্যাগলে ওভালে আবার অসাধারন খেলেন টম ল্যাথাম। তিনি যখন অসাধারন খেলেন তখন উজ্জিবিত হয় পুরো ব্ল্যাক ক্যাপস দল। কাজেই আমাদের ১০-১২ টেস্ট খেলা পেসার তাসকিন বা এবাদত যত ভালো বল করুননা কেনো টম ল্যাথামের মানের ব্যাটসম্যান যখন ঝলসে উঠেন তখন চেষ্টা করা ছাড়া বিশেষ করনীয় কিছু থাকেনা।
যার দেশে সেই বাঘ এর বিষয়তো আছেই। টম ল্যাথাম ২৫২ রানের এক ঝলমলে ইনিংস খেলেন। কনওয়েও পান দারুন এক শতক। এভাবে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট বাংলাদেশের নাগালের বাইরে চলে যায়। দেড়দিনে প্রতিপক্ষের পাহাড়ে চড়া চেয়ে চেয়ে দেখে তখন ক্লান্ত-অবসন্ন হয় মমিনুলরা।
সোমবার হ্যাগলে ওভালে তাই ঘটেছে। মমিনুলদের সমালোচনা করার আগে আমরা যাতে জাতি অথবা ব্যক্তি হিসাবে আমাদের গড় সক্ষমতার দিকে তাকাই। এমনিতে দলে একাধিক চালাক সিনিয়র নেই। এরপর আমরা মঙ্গানুই টেস্টের উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখতে পারিনি।
ইনজুরিতে পড়া জয় আর মুশফিককে হারিয়ে উইনিং কম্বিনেশন হারিয়ে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। রান পাহাড়ের নীচে চাপা পড়া দলের শুরুতে টপ অর্ডারদের হারিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা দাঁড়ায় ‘এলাম দেখলাম আর সাজঘরে ফিরলাম’!
ওই অবস্থায় ধংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে ইয়াসির আর নুরুল হাসান সোহানের সাহসী লড়াইর কারনে প্রথম ইনিংসে শতকের ঘর পেরুনো গেছে। এরপরও নিশ্চিত ফলোঅনে আর ইনিংস হারের মুখে দাঁড়িয়ে দল। মঙ্গলবার সেই দলটিও লড়াই করবে আশা করতে চাই।
এবার ভাঙ্গাচোরা দলটি যখন নিউজিল্যান্ড রওয়ানা হয় তখন কেউ আশা করেনি এই দলটি মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে জিতে যাবে। বিজয়ী দলটির সাফল্য নিয়ে আমরা বিরল আনন্দ উল্লাস করেছি। অতএব ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে দল আমাদের যাই দিক আলহামদুলিল্লাহ। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের জয়ের ফল আমরা আগামীতে কাজে লাগাবোই।