ফজলুল বারী: দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পুরস্কার হোক বিতর্ক মুক্ত। কারন এসবের সঙ্গে দেশের মানুষের আবেগ-বিশ্বাস জড়িত। অস্ট্রেলিয়ায় পতাকা খচিত স্যান্ডেলও বাজারে বিক্রয় হয়। বাংলাদেশে এটি কল্পনায় ভাবতে পারবেননা। বাংলাদেশের পতাকা অর্জনের পিছনে রক্তক্ষয়ী ইতিহাস জড়িত।
স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্যে মনোনীত আমির হামজা খুনের মামলায় ৯ বছর জেল খেটেছেন। এই তথ্য গোপন করে তার সরকারি কর্মকর্তা ছেলে দেশের মানুষের বিশ্বাস নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তাকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করে গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখিন করতে হবে।
‘বাঘের থাবা’ বইটিকে ভাগ করে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে নতুন বই বের করে পুরস্কার কমিটির সহানুভূতি আদায়ে সমর্থ হয়েছেন এই চতুর কর্মকর্তা। অনেকে যুক্তি দেখাচ্ছেন আমির হামজার বইয়ের ফ্ল্যাপ লিখেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। অতএব যেন তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়াটা ঠিকই আছে!
আমির হামজার চতুর ছেলে শুধু নির্মলেন্দু গুণকে দিয়ে ফ্ল্যাপ লেখান নাই, শেখ সাদী খানকে দিয়ে তার বাবা’র বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গান সুরারোপ, বাচ্চাদের সহ ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকেও ছেড়েছেন! অনেকে মনে করছিলেন, তার এসব কর্মকান্ড ছিল চাকরিতে প্রমোশন বাগানোর উদ্দেশে প্রযোজিত!
কিন্তু তিনি প্রমান করেছেন এসব করে দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারও বাগানো যায়! পেশাদার সুরকার শেখ সাদী খান নিশ্চয় বিনে পয়সায় আমির হামজার আমলা পুত্রের কাজ করে দেননি। নির্মলেন্দু গুণ অনুরোধে না সম্মানীর বিনিময়ে ফ্ল্যাপ লিখেছেন কিনা এটা তিনি বলবেন।
সাবেক মুসলিম লীগার ও মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিস্থিতিতে পড়ে আকবর বাহিনীতে নাম লিখানো, পরবর্তিতে বিএনপি-জাতীয় পার্টি করা ও খুনী হিসাবে ৯ বছর জেল খাটা ব্যক্তি আমির হামজা, এসব তথ্য জানলে নির্মলেন্দু গুণ নিশ্চয় তার বইয়ের ফ্ল্যাপ লিখতেননা।
আমির হামজার নামে স্বাধীনতা পুরস্কার ঘোষনার পর বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, তারা তাকে চিনেননা, তারা তার কোন লেখা পড়েননি। অনেকে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, তারা তাকে চিনতে হবে, তার লেখা পড়তে হবে কেনো?
অবশ্যই তাদেরকে চিনতে-জানতে হবে। এরজন্যে তাদেরকে বাংলা একাডেমির সভাপতি, মহাপরিচালক করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে স্বকীয় উজ্জ্বল ভূমিকা-অবদানের জন্যে তাদেরকে দেয়া হয়েছে এসব মর্যাদার পদ। একই কারনে চাঁদ দেখা কমিটিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিবকে রাখা হয়।
আমির হামজার সাহিত্যকর্ম যা এরমধ্যে বেরিয়েছে তাতে তাকে এমন আহামরি কোন সাহিত্য ব্যক্তিত্ব মনে হবেনা যে তাকে চোখ বন্ধ করে দেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বেসরকারি পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার দিতে হবে। বাংলাদেশে মেধাবী সাহিত্যিক, সাহিত্য ব্যক্তিত্বের কোন আকাল পড়েনি।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কারনে আমির হামজার লেখা যা বেরিয়েছে তিনি একজন পল্লী কবি। প্রত্যুৎপন্নিমতি ব্যক্তি। তাৎক্ষনিক যে নিয়ে কাউকে তিনি কবিতা-গান লিখতে পারতেন। এরজন্যে তিনি শুধু বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনাকে নিয়ে নয়, জিয়াকে নিয়েও কবিতা-গান লিখেছেন।
যখন যে আমলে যেটা কাজে লাগে। গ্রামে আমরা এক সময় এমন ব্যক্তিদের দেখতাম। কিন্তু স্বাধীনতা পুরস্কারতো বাংলাদেশের নোবেল পুরস্কার। বিএনপির মজিদ উল হক নিশ্চয় আমির হামজার বঙ্গবন্ধুকে লেখা গান দেখেশুনে তাকে খুনের মামলা থেকে মুক্ত করেননি।
একজন পল্লী কবি অবশ্যই স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্যে যোগ্য বিবেচিত হতে পারেন। কিন্তু তার লেখা বাংলা সাহিত্যের মানদন্ডে উন্নীত মানসম্মত কীনা, এসবতো মূল্যায়ন করবেন সংশ্লিষ্ট শাখার বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা। মুনতাসীর মামুন, সেলিনা হোসেন, মুহাম্মদ নুরুল হুদা’র মতো ব্যক্তিত্ব। আমলা কমিটি নয়।
এক আমলা জালিয়াতির আশ্রয় নিলেন, আরেক আমলা তাকে সত্যায়ন করলেন! জাতীয় পুরস্কার নিয়ে এসব খেলো কর্মকান্ড যখন চিহ্নিত হয়েছে, পুরো বিষয়টির খোলনলচে নিয়ে ভাবা উচিত। সাহিত্য, সাংবাদিকতা, চিকিৎসা, শিল্পকর্ম সহ যে দশ শাখায় পুরস্কার দেয়া হচ্ছে এর আলাদা আলাদা কমিটি হোক।
সংশ্লিষ্ট শাখার দেশবরেণ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা চূড়ান্ত বাছাইয়েরর কাজ করবেন। খুন সহ অপরাধ-নৈতিক স্খলনের বিষয়গুলোকেও অযোগ্যতায় রাখতে হবে। পশুর সঙ্গে অমানবিক আচরন করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করা হয়নি।