ফজলুল বারী: বারবার একটা কথা বলি আর লিখি। তাহলো, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা আর ক্ষমতায় ধরে রাখা এসবের পিছনে শেখ হাসিনার শতভাগ পরিশ্রমী নেতৃত্ব ছাড়া অন্য কারও কোন ভূমিকা নেই। আর সবাই করে খাচ্ছেন। বেশি খাওয়া হয়ে গেলে বমিও যে করা হয়ে যায়। যা করে ফেলেছেন বেগম রেলমন্ত্রী!
এমন নাম ধরে ধরে বলতে পারবো কার কি ছিল আর এখন তারা কি করে এমন অঢেল সম্পদের মালিক! আর এতদিন ক্ষমতায় থেকেও শেখ হাসিনার স্বামীর রেখে যাওয়া সুধাসদন বাড়িটি ছাড়া আর কোন জমি-সম্পত্তিও নেই। নিজের লোকগুলোর লোভের সব খবর রাখেন বলে প্রায় তিনি বলেন, মরার সময়তো কিছুই সঙ্গে তিনি পারবেনা।
আর এদের পাপ-তাপ ধারন করে সবার মাথার ওপরে থাকা প্রধানমন্ত্রীর নিজের কিছু করার তাড়া নেই। ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার সড়কের পৈত্রিক বাড়িটাও দুইবোন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টকে উইল করে দান করে দিয়েছেন! গণভবনের রাষ্ট্রীয় খরচাপাতির বিষয়েও এই প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট মিতব্যয়ী। উন্দালে তিনিও যান।
আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক শাসনামলে দেশে অনেক উন্নয়ন-উন্নতির বড় একটি খাত হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে রেলওয়ের কত লাইন-রুট যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সেগুলোর বেশিরভাগ আবার চালু হয়েছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন রেলরুট। আগামীতে ট্রেনে চড়ে কক্সবাজারও যাওয়া যাবে।
পদ্মা সেতুর ওপারেও চলে যাওয়া যাবে ট্রেনে। মেট্রো রেল সহ নানান কিছু এরমাঝে দৃশ্যমান। সর্বশেষ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে সবার যথেষ্ট আন্তরিক এবং কর্মঠ মনে হচ্ছিল। কিন্তু বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমনকারীদের জরিমানাকে কেন্দ্র করে জানা গেল এই রেলমন্ত্রী চরম একজন মিথ্যাবাদী।
এর মাধ্যমে তিনি একজন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসাবে শপথের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। এরজন্যে পদত্যাগ না করলে তাকে বরখাস্ত করতে হবে। ঈদের ছুটিতে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকেটে ভ্রমনকারীদের আইনত জরিমানাকে কেন্দ্র করে মিডিয়া রিপোর্টগুলোতে কেঁচো খুড়তে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে সাপ!
অতঃপর জানা গেলো ও টিটিইকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের দ্বিতীয়া স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনি! বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়! সূর্যের চেয়ে গরম মরুভূমির বালি! কি ভয়ংকর তথ্য! দেশে এখন একজন মন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশেও একজন রেল কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা যায়!
আবার বদমায়েশি করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে! থামেন। বাদ দেন এসব বদমায়েশি! একটা সরকারকে দেশে-বিদেশে আর কত খেলো করা হবে? যতোটা জানি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় কারো বিয়ের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অন্তত মৌখিক একটা সায় প্রয়োজন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এভাবে যথেষ্ট মানবিকও।
প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর নুরুল ইসলাম সুজনের বয়সে বাংলাদেশে যারা বিয়ে করেন তাদের শেষ বয়সের একাকিত্ব দূরীকরনের বিষয় কাজ করে। কিন্তু এখানেতো দেখা গেলো বিয়েটা চরম ধান্ধার উপকরন হয়েছে! প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদের পর এই ঘটনা মনে করিয়ে দিলো, অপব্যবহার হচ্ছে মন্ত্রীদের দ্বিতীয় বিয়ের মানবিক সুযোগটির।
জানা গেলো বোঝা গেলো শাম্মী আক্তারও বিয়ে করেছেন মন্ত্রীর বয়স্ক পড়ন্ত শরীরটাকে নয়, বিয়ে করেছেন মন্ত্রিত্বের দাপটকে। এই দাপটকে কাজে লাগিয়ে তিনি একজন রেল কর্মচারীকেও বরখাস্ত পর্যন্ত করে ফেলেছেন! এরমাঝে তিনি আর কি কি বাগিয়েছেন দুদককে এর তদন্তের ওহী পাঠাতে হবে। ওহী ছাড়া তারা কাজ করেনা।
আর রেলওয়ে বিভাগ দেশজুড়ে এমন একটি আলোড়নের ঘটনায় তাদের একজন সত্যনিষ্ঠ সাহসী কর্মী-সদস্যের পাশে না দাঁড়িয়ে তাঁকে চিহ্নিত করেছেন একজন মানসিক রোগী! পাকশী বিভাগীয় বানিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বিবৃতি দিয়ে টিটিই শফিকুল ইসলামকে মানসিক রোগী বলেছেন!
আশা করি রেলওয়ের কর্মী-সদস্যরা এই বর্বরতার প্রতিবাদ করবেন। একজন কথিত ‘মানসিক রোগী’কে দিয়ে কাজ করানোর ব্যাখ্যা দিতে হবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। টিটিই মোঃ শফিকুল ইসলামকে মানসিক রোগী বলার ডাক্তারি কাগজপত্র-চিকিৎসার প্রমাণাদির কাগজপত্র উপস্থাপন করতে হবে জনগনের সামনে।
না মন্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের পর পুরো রেল বিভাগটাই এখন একটা পাগলা গারদ! একজন কর্তব্যরত টিটিইকে মানসিক রোগী বলার জন্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দেশের জনগনের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। উল্লেখ্য মন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনে এই নাসির উদ্দিনই টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করেন।
এরমাধ্যমে চাকরিবিধি লংঘন করেছেন এই কর্মকর্তা। একজন মন্ত্রীর স্ত্রীর বেআইনি টেলিফোনিক নির্দেশে যে লোক তার একজন সহকর্মীকে বরখাস্ত করতে পারেন, এরপর আবার বিবৃতি দিয়ে তাকে মানসিক রোগী বলেন, তাকে রেলওয়ে থেকে তাড়াতে হবে। কেউ মানসিক রোগী হলে তা বলবেন একজন মনো চিকিৎসক।
নাসির উদ্দিন কোন মনো চিকিৎসক নন। আসলেইতো নাসির উদ্দিন এখানে বৈষয়িক বুদ্ধিমান, মন্ত্রীর স্ত্রীর পা চাটা, আর তার কর্তৃ্ত্বের প্রশাসনে এমন টিটিইতো মানসিক রোগীই বটে! কিন্তু এখানে দেশের মানুষের কাছে এই টিটিই এখন একজন সাহসী বীর। যিনি আইন প্রয়োগে কাউকে পরোয়া করেননা।
টিটিই শফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে আদালতে যেতে পারেন। তার বিরুদ্ধে তিনি মামলা করতে পারেন মানহানির। একজন কর্তব্যরত টিটিইকে যে নাসির উদ্দিন মানসিক রোগী বলেছেন তাকে চাকুরিচ্যুত করতে হবে। একবার হলেও কোমরে তার দড়ি, হাতে হাতকড়া পরা দরকার।
কি দূর্ভাগ্য আমাদের দেশটার! এই ২০২২ সালে এসে এসব কি সুশাসনের নজির? এই রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এক সময় ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। কাজেই চটঝলদি তাকে ভূঁইফোড় বলা যাবেনা। সুপ্রিমকোর্টেও আইনজীবী হিসাবে তার সুনাম ছিল। শেখ হাসিনা তার মূল্যায়ন করেছিলেন। কিন্তু কি তাঁর পরিণতি!
দ্বিতীয় বিবি’র কারনে তিনি আজ হেফাজতের দুশ্চরিত্র মামুনুলের পথ ধরেছেন! একদিকে রেলমন্ত্রী মিডিয়াকে বলছেন এরা তার আত্মীয় নন। তাদেরকে তিনি চানেননা। আবার বিনা টিকেটের ভ্রমণের জন্য দন্ডিত ইমরুল কায়েস প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপাকে ফোন করে বলছেন, ‘আপা আপনি এ নিয়ে কিছু মনে করিয়েন্না, মন খারাপ নিয়েন্না, দুশ্চিন্তা করিয়েন্না, বিষয়টি আমি দেখছি’।
বিনা টিকেটে ভ্রমণকারী ইমরুল কায়েস প্রান্তদের বাড়ি ঈশ্বরদীর নূরমহল্লার কর্মকার পাড়ায়। তার সঙ্গে ওই সময়ে বিনা টিকেটে ভ্রমণ করছিলেন, রেলমন্ত্রীর মামা শশুর জাহাঙ্গির আলমের দুই ছেলে হাসান ও ওমর। এটিই নানা বাড়ি মন্ত্রী স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনি। নানাবাড়িতে গেলে শাম্মী আক্তার সেই বাড়িতেই ওঠেন।
শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত মন্ত্রীর স্ত্রী সেখানেই অবস্থান করছিলেন। বাড়ির আরেকটি অংশে থাকেন ইমরুল কায়েসদের পরিবার। ইয়াসমিন আক্তার নিপা শনিবার একাত্তর টিভিকে ফোনে অনেক কথা জানিয়েছেন। সহজ সরলভাবে বলেছেন সব সত্য কথা। অথবা সত্য এভাবেই প্রকাশিত হয়। নতুবা রেলমন্ত্রীকে আমরা মিথ্যাবাদী বলতাম কি করে।
ইয়াসমিন আক্তার নিপা জানিয়েছেন তার ফুপাতো বোন রেলমন্ত্রীর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনি রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয়য় বানিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে ফোনে নির্দেশ দিয়ে ওই টিটিইকে বরখাস্ত করান! এই কর্মকর্তাদের ফোন নাম্বার যেহেতু বেগম রেলমন্ত্রীর কাছে থাকে, তাই এদের দিয়ে তিনি আর কী কী কাজ করান তা নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট হতে পারে।
ইয়াসমিন আক্তার প্রান্ত’র মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা বলেছেন, ওই টিটিইকে ফোনে বরখাস্তের সময় তিনি তার ফুপাতো বোন শাম্মী আক্তারের সঙ্গে ছিলেন। ঈদ করতে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তার ঈশ্বরদীতে গিয়ে নানাবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। নিপার কথায় বোঝা যাচ্ছিল বেগম রেলমন্ত্রী তাদের অনেক সার্ভিস দিচ্ছিলেন!
ইমরুল কায়েস প্রান্ত সহ তিনজন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঢাকা যাবেন এটা বেগম রেলমন্ত্রী ঈশ্বরদীর স্টেশন মাষ্টারকে বলে রেখেছিলেন। টিটিই শফিকুল ইসলামের সঙ্গে বাদানুবাদের সময় ইমরুল তার মাকে ফোন করে ঘটনা জানান। ইয়াসমিন আক্তার নিপা তখন মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারকে ঘুম থেকে তুলে ফোনটি তাকে ধরিয়ে দেন।
বেগম রেলমন্ত্রী শাম্মী আক্তারের ফোন ধরেননি টিটিই শফিকুল ইসলাম। বেগম রেলমন্ত্রী তাতেই রেগে যান। অপমানিত বোধ করেন। বেগম রেলমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে নিজের ক্ষমতার দাপটকে কাজে লাগিয়ে এর প্রতিশোধ নেন। রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় বানিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে ফোনে নির্দেশ দিয়ে ওই টিটিইকে বরখাস্ত করান!
এভাবে ইয়াসমিন আক্তার নিপা অনরেকর্ড বলেছেন, মন্ত্রী নন, টিটিইকে বরখাস্ত করিয়েছেন তার মন্ত্রীর স্ত্রী বোন শাম্মী আক্তার। এরপর কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন পৌঁছবার পর বাকি নাটক করা হয়েছে! ইমরুল কায়েস প্রান্তকে দিয়ে লেখানো হয়েছে একটি অভিযোগপত্র! যেটিতে ইমরুল কায়েসের ঠিকানা-ফোন নাম্বার কিছুই উল্লেখ ছিলোনা!
কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ইমরুল কায়েস তার মন্ত্রী মামার বাড়িতেই গেছেন কিনা বা স্টেশন কর্তৃপক্ষ তাকে গাড়িতে করে পৌঁছে দিয়েছেন কিনা সে অনুসন্ধান আমার কোন অনুজ সাংবাদিক এখনও করেননি। তবে আমার অনুজ রিপোর্টাররা এখন পর্যন্ত রিপোর্ট ভালোই করেছেন। তাদেরকে অভিনন্দন ও অনেক দোয়া।
একাত্তর টিভির পারভেজ রেজা’র কাছে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এ ব্যাপারে মিডিয়াকে দোষারোপ করেছেন। এটাই এদের মুখস্ত চরিত্র! মন্ত্রী বলেছেন তারা তার আত্মীয় দূরে থাক, তাদের তিনি চেনেনইনা। আর মন্ত্রীর আত্মীয় দাবি করে কেউ অন্যায় কিছু করলে যাচাই বাছাই ছাড়া রিপোর্ট করে দিলেই হলো?
রেল বিভাগে আগে কি কখনও অসদাচারনের অভিযোগে কাউকে এমন কাউকে ফোনের নির্দেশে বরখাস্ত করা হয়েছে? পারভেজ রেজা’র এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেছেন, আগে করা হয়নি বলে এখন করা যাবেনা এটা কী হয়? মন্ত্রী যেন বলতে চেয়েছেন এই ঘটনায় তারা একটি নজির সৃষ্টি করে ফেলেছেন!
এখন আসল নজির হতে পারে মন্ত্রীর পদত্যাগে অথবা বরখাস্তে। কারন তিনি মন্ত্রী হিসাবে শপথ ভঙ্গ করেছেন। মন্ত্রী যে একজন মিথ্যাবাদী এর প্রমাণ আছে শ্যালিকা অথবা জ্যাঠাস ইয়াসমিন আক্তার নিপার বক্তব্যে। ইয়াসমিন আক্তার নিপা পুরো ঘটনার নির্মোহ বক্তব্য একাত্তর টিভি সহ অনেক মিডিয়াকে দিয়েছেন।
ইয়াসমিন আক্তার নিপা বলেছেন, তার বোন রেলওয়ের কর্মকর্তাকে ফোনে নির্দেশ দিয়ে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করিয়েছেন! তখন তারা ফোনে মন্ত্রীকে পাননি। শনিবার দুপুর একটার দিকে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন তাকে ফোন করে দুশ্চিন্তা না করতে বলেছেন!
এমন একজন মিথ্যাবাদী মন্ত্রীকে কেবিনেটে রেখে সরকার যে চলেনা প্রিয় আপা প্রধানমন্ত্রী। ভাবতে পারেন, এখানে একজন মন্ত্রীর স্ত্রী ফোনে নির্দেশ দিয়ে একজনের চাকরি খায়! এটা চরম অরাজকতা। বেআইনি ক্ষমতার দাপট দেখানো বেগম রেলমন্ত্রী শাম্মী আক্তার মনিকে গ্রেফতার করে তার সম্পদের হিসাব বের করতে হবে।