ফজলুল বারী: আমাদের সামাজিক নানান বন্ধনের কারনে বয়সকালের বিয়ের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো যায়না। এরজন্যে অনেকে স্ত্রী বিয়োগের পর বিয়ে ছাড়াই বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। বয়সকালে বিয়ের করা স্ত্রীর বেআইনি মন্ত্রিগিরির ঘটনায় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও এখন বিব্রত।
এতে গোটা সরকার, তার দল বিব্রত। ঈদ পরে মানুষ এখন কর্মক্ষেত্রে ফেরা নিয়ে পেরেশান। আর মন্ত্রী সামলাচ্ছেন দ্বিতীয় স্ত্রীর অবৈধ মন্ত্রিগিরি! গত ৪৮ ঘন্টায় মন্ত্রী তার নয় মাস বয়সী বর্তমান স্ত্রীর বেআইনি মন্ত্রিগিরি ধামাচাপায় সময় কাটাচ্ছেন। এর ধকল তিনি সামাল দিতে পারবেননা।
কারন খুব খারাপ জায়গা বাংলাদেশ রেলওয়ে। মহা দুর্নীতির জায়গা। দেশের ইতিহাসের সেরা একজন পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অভিজ্ঞতা সবাই জানেন। তাঁর মতো একজন বর্ষীয়ান পার্লামেন্টারিয়ানের সেখানে রেলওয়ের পচা শামুকে পা কেটেছে!
রেল ট্র্যাক থেকে পিছলে গিয়ে শুধু মন্ত্রিগিরি খোয়ানো নয়, কালো বিড়াল নাম নিয়ে চিতায় যেতে হয়েছে। বাকি জীবন তাকে তসবিহ জপে জপে বলে যেতে হয়েছে, ‘বাঘে ধরলে ছাড়ে কিন্তু শেখ হাসিনায় ধরলে ছাড়েনা’। আওয়ামী লীগও এখন আর জন্ম-মৃত্যুদিনেও স্মরন করেনা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে।
আর এই রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন তার নতুন শশুরবাড়ির বেগম রেলমন্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির মন্ত্রিগিরি নিয়ে শুরুতে দেশের মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলেছেন। প্রথম প্রথম আকাশ থেকে পড়ার ভান করে তিনি বলেছিলেন, বিনা টিকেটের আত্মীয় নামধারী যাত্রীদের তিনি চেনেনইনা।
এরপর আবার মিডিয়ার অনুসন্ধানী রিপোর্টের সত্য আড়াল করতে না পেরে সুর ৩৬০ ডিগ্রী পাল্টেছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে নির্দেশ আসতে পারে। কারন সব সত্য ফাঁস করেছেন মন্ত্রীর নতুন শশুরবাড়ির দিক থেকে ভাগ্নে বিনা টিকেটের যাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্তর মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা।
এই ইয়াসমিন আক্তার নিপা মিডিয়াতে যুক্ত হয়ে বলেছেন, মন্ত্রী তাদের চেনেননা বলাতে তারা দূঃখ পেয়েছেন। জামাই মন্ত্রী ভালোনা। পচা। এরপর হেফাজতের রিসোর্ট মামুনুলের মতো করে গোপনে রেলমন্ত্রী নতুন শশুর বাড়ির কুটুম্ব ইয়াসমিন আক্তার নিপাকে ফোনে বলেছেন, ‘দূঃখ পাবেননা।
অনেক কিছু এভাবে বলতে হয়’। রিসোর্ট মামুনুলের ফোনালাপ ‘মাঝখান দিয়ে তুমি আবার মনে কিছু করিওনা’ গোয়েন্দারা ফাঁস করে দিয়েছেন। সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদের ফোনালাপের অশ্লীলতাও ফাঁস করা হয়েছে। এই মন্ত্রীরটা হয়তো রেকর্ডেট আছে। এখনও ফাঁস করার ওহী নাই।
কিন্তু মন্ত্রীর আশ্বাস ফাঁস করেছেন বুড়াকালে বিয়ের স্ত্রীর সেই মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তার নিপা। তার মাধ্যমে আমরা জেনেছি রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন একজন মিথ্যাবাদী। তিনি মিডিয়ায় এক কথা বলছেন। আরেক কথা বলেছেন, ইয়াসমিন আক্তার নিপাকে।
রেলমন্ত্রীর বুড়াকালের স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির অবৈধ মন্ত্রিগিরিও আমরা নিপার মাধ্যমে জেনেছি। ইয়াসমিন আক্তার নিপা একাত্তর টেলিভিশনে যুক্ত হয়ে বলেছেন তার ছেলে ইমরুল কায়েস প্রান্ত সহ আরও দু’জনের অবৈধ ভ্রমনের আরও কাহিনী আছে।
তারা যে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঢাকা যাবেন তা বেগম রেলমন্ত্রী শাম্মী আক্তার নিপা আগেই ফোন করে ঈশ্বরদীর স্টেশন মাষ্টারকে ফোন করে জানিয়ে রেখেছিলেন। বেগম রেলমন্ত্রীর ফোনে তখন থেকে ঈশ্বরদী স্টেশনে ভূমিকম্প শুরু হয়! কারন তাদেরও ঘাড়ে যে একটি করে মাথা!
বেগম রেলমন্ত্রীর টেলিফোনিক নির্দেশমতো ঈশ্বরদীর স্টেশন মাষ্টার সহ সবাই ইমরুল কায়েস প্রান্ত সহ তিনজনকে বিনা টিকেটে ট্রেনে তুলে প্রথম শ্রেনীর কামরায় বসিয়ে দেয়! বাংলাদেশে এমন হরহামেশা হয়। এখানে ট্রেনের এডেন্ডেন্ট, টিটিই মিলে বেরসিক কাজ একখান করে ফেলেছে!
তারা এমন একটি কাজ করে ফেলায় এই ঘটনা আমরা জেনে ফেলেছি! এমন কত ঘটনা আমরা জানিইনা। অতএব এই এপিসোডে বেগম রেলমন্ত্রীর অবৈধ মন্ত্রিগিরি বেয়াদব একজন টিটিইকে বরখাস্ত করাতে নয়, তার অবৈধ দাপট ঈশ্বরদী স্টেশন থেকেই শুরু হয়েছিল।
যেখানে রেলের হাজার হাজার যাত্রী এক-দুই দিন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকেট পায়নি, ডিজিটালাইজেশনের কথা বললেও অনলাইনে টিকেট না পেয়ে তারা সরকারের গোষ্ঠী উদ্ধার করেছে, সেখানে বেগম রেলমন্ত্রীর ফোন পেয়ে ঈশ্বরদী স্টেশনের সব লোকজন মিলে ভিন্ন এক সেবা দিয়েছে!
রেলমন্ত্রীর বুড়াকালের বিয়ের শশুরবাড়ির তিন কুটুম্বকে বিনা টিকেটে ট্রেনের প্রথম শ্রেনীর কামরাতেই তুলে দিয়েছে! এমন সাফল্যের তৃপ্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন আমাদের সৌভাগ্যবতী বেগম রেলমন্ত্রী শাম্মী আক্তার মনি! কিন্তু ওই টিটিই শফিকুলের বেয়াদবিতে তার সুখ নিদ্রা ভঙ্গ হয়।
ওগো শুনছো বলে ঘুম ভাঙ্গিয়ে তাকে দেয়া হয় টিটিই শফিকুলের বেয়াদবির তথ্য! কী সাহস টিটিইর! সে কিনা বেগম রেলমন্ত্রীর তিন কুটুম্বকে জরিমানা সহ সাধারন শ্রেনীর টিকেট ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে প্রথম শ্রেনী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে! এমন বেয়াদবী মন্ত্রী দেখে বিয়ে করা বেগম রেলমন্ত্রীর কি সহ্য হয়!
টিটিই শফিকুলের বিরুদ্ধে যে অসদাচারনের অভিযোগ আনা হয়েছে, এটিইতো গুরুতর অসদাচারন! রেলের টিটিইরা সবাই ফেরেশতা না। তারা কিভাবে যাত্রীদের হয়রানি করেন, টাকা মারেন সে অভিজ্ঞতা কমবেশি অনেকেরই আছে। কিন্তু টিটিই শফিকুল এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার মতো কান্ড করে ফেলেছেন!
অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ সহ সবাই সুযোগ খোঁজেন, কিভাবে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জরিমানা করা যাবে। কারন এতে তাদের প্রফেশনাল এসিআর সমৃদ্ধ হয়। ভালো হয় মিডিয়া কভারেজ। এরজন্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী-উপ প্রধানমন্ত্রীকেও জরিমানা করা হয়েছে।
স্পিডবোটে ভেস্ট ছাড়া বসা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের ছবি ছাপা হয়েছিল পত্রিকায়। ওই ছবি দেখে জরিমানার চিঠি পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাড়ির ঠিকানায়। করোনার তুমুল সময়ে উপ প্রধানমন্ত্রী বার্নাবি জয়েসে মাস্ক ছাড়া একটি পেট্রোল স্টেশনে ঢুকেছিলেন।
একজন অভিযোগ করায় পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাকে জরিমানার চিঠি পাঠানো হয়। এরজন্যে তারা মিথ্যা বলেননি। জরিমানা পরিশোধ করায় তাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। করোনা বিধি ভঙ্গ করে সরকারি বাড়িতে জন্মদিনের পার্টি করায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে জরিমানা করা হয়েছে।
আর আমাদের রেলমন্ত্রী মিথ্যা বলেছেন! তিনি এসব দেখেছেন মিডিয়ার রিপোর্টে! যেন তার বুড়াকালের নয় মাসের স্ত্রীর সঙ্গে এসব কথা বলে জানার টেলিফোনের সম্পর্কও এখন নেই! এরজন্যে ঈদে মন্ত্রী যান নিজের বাড়ি আর স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনি যান নানার বাড়ি!
মন্ত্রী বলেছেন তার নয় মাসের এই স্ত্রী সম্ভবত সবকিছু এখনও জেনে বুঝে উঠতে পারেননি! বেচারী একজন আইনজীবী হলেও এমন অবুঝ! এখন দুষ্টু লোকেরা তার বিয়ের হিসাব দিচ্ছেন। আর মন্ত্রীর ছেলেকে বিলাতে হাত খরচ কত হাজার পাউন্ড দেয়া হয়, সেটাও দেয়া হচ্ছে ইনবক্সে!
রেলমন্ত্রীর বুড়াকালের স্ত্রীর কাছে পাকশীর সেই কর্মকর্তার টেলিফোন নাম্বার থাকে যাকে দিয়ে টেলিফোনের নির্দেশে টিটিইকে বরখাস্ত করা যায়! আবার সেই কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন টিটিই শফিকুল ইসলামকে মানসিক রোগী বলে বিবৃতি দেন!
এখন চিপায় পড়ে মন্ত্রী বলছেন টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার আর সেই কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে শোকজ করা হবে! বেগম রেলমন্ত্রী শাম্মী আক্তার মনি যে বেআইনি মন্ত্রিগিরি দেশের মানুষকে দেখালেন, তার শাস্তি কী? না তিনি কিশোরী সংশোধনাগারে যাবার যোগ্যা!
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের এই ধামাচাপা মিশনে সর্বশেষ কালি পড়েছে বুড়াকালের বিয়ের নানাশশুরবাড়িতে সাংবাদিক পেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে! মারের ভয়ে সাংবাদিকরা সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে এসেছেন! এমন সব বিব্রত হবার মতো ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে যেতে হবে।