ফজলুল বারী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মারধর করেছে। অভিযোগ ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক। এর দায় কিন্তু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের।
মির্জা ফখরুল নাকি এক সময় শিক্ষকতা করতেন। খালেদা জিয়াকে ম্যাডাম ডাকতে ডাকতে তারেক রহমান এখন মির্জা ফখরুলের স্যার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর মির্জা ফখরুলরা হেন কাজ নেই যা তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে করেননি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবকে একুশ বছর ধরে তারা রেডিও টিভিতে নিষিদ্ধ করে রেখেছিলেন। এখন তারা সবাই সাধু সেজেছেন। মির্জা ফখরুল সহ বিএনপি নেতারা শেখ হাসিনার উদ্দেশে এমন ভাবে কথা বলেন যেন, তাকে কেনো তারা পচাত্তরে হত্যা করতে পারলেননা, সেই ক্রোধ ঝরে পড়ে!
অথবা গ্রেনেড হামলা চালিয়েও কেনো তাকে মারতে পারলেননা! কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে! শেখ হাসিনা এখন ধারাবাহিক ক্ষমতায় আর গোপালগঞ্জেরও নাম পরিবর্তনের শপথকারী খালেদা জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী।
শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করে তাকে বাসায় থাকতে হয়। ছয়মাস পরপর আবেদন করে করে মেয়াদ বাড়াতে হয় বাসায় থাকার। মির্জা ফখরুলরা ছাত্রদলের ছেলেমেয়েদের উত্তেজিত করে ঠিক করছেননা। লাঠি হাতে ক্যাম্পাসে ঢোকার চাচ্চু–আন্টিদের ছাত্র সংগঠনের ছবি যেমন তাদের চিহ্নিত করছে, তেমনি তাদের ওপর আক্রমনের ছবিও ছাত্রলীগ–আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাচ্ছে।
কারন আওয়ামী লীগ সব অর্জন করেছে রাজনীতি দিয়ে। মারপিট করে নয়। মার খাওয়া লোকজনের পক্ষে সহানুভূতি সৃষ্টি হয়। নুরুল হক নুরু মার খেয়ে খেয়ে আজ নেতা। ডাকসু ভিপিও হয়েছিলেন। বিএনপি–জামায়াত–জাতীয় পার্টি এরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারতে মারতে খাটি সোনায় পরিণত করেছিল।
আমান উল্লাহ আমানের নেতা হবার গল্প এই প্রজন্ম জানেনা। আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন এরা ছিলেন এরশাদ আমলে ছাত্রদলের সভাপতি–সাধারন সম্পাদক। কিন্তু ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রভাব ছিল মাস্তানিতে। নীরু–অভি এরা ছিলেন ছাত্রদলে জনপ্রিয়।
ক্যাম্পাসে নিত্য শ্লোগান হতো নীরু তবু ভীরু নয়। এমন ক্যাম্পাসে ডাকসুর ভিপি–জিএস প্রার্থী করা হয় আমান–খোকনকে। কিন্তু নীরু–অভির সমর্থকরা তা মানবেইনা। আমান উল্লাহ আমানকে মধুর কেন্টিনের সামনে মাটিতে বসিয়ে ঘিরে রাখে নীরু–অভির সমর্থকরা।
তাকে সেখানে লাঞ্ছিত করা হয়। কেরানীগঞ্জের আমান তখন সাদা পাজামা–পাঞ্জাবি পরতেন। পাজামা–পাঞ্জাবির রং দেখেই বোঝা যেত পয়সাকড়ি কম। মধুর কেন্টিনের সামনে তাকে ঘেরাও করে চাপ দেয়া হচ্ছিল তিনি যাতে ঘোষনা দেন, তিনি ডাকসু নির্বাচন করবেননা।
কিন্তু আমান সেই ঘোষনা দেননি। ওই অবস্থায় আমান হাউমাউ করে কাঁদেন আর পারলে জুনিয়র নেতাকর্মীদের পায়ে ধরেন! ছাত্রদলের সাধারন নেতাকর্মীরা তখন নিজ দলের নীরু–অভির সমর্থকদের মস্তান হিসাবেই ভয় পেতেন। সেই মস্তানরাই পরে রাজনীতির মূলধারা থেকে হারিয়ে গেলেন।
আমান–খোকনরা হলেন ডাকসুর ভিপি জিএস। এরশাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান বিজয়ী ছাত্রনেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মালকড়ি কামিয়েছেন আমান। সেই ছাত্রনেতাদের মধ্যে তার সম্পদের পরিমান সবচেয়ে বেশি। এরাই হলো গিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মহাসাধু!
আবার ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এমপি–ছোটমন্ত্রী হয়ে তার মস্তানিতেই বিএনপি বিপদে পড়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যখন জনতার মঞ্চ হয়, তখন সচিবালয়ে লিফটে ওঠা নিয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে কর্মকর্তা–কর্মচারী বিক্ষোভ ত্বরান্বিত হয়।
সেই দলের মির্জা ফখরুল–আমান উল্লাহ আমানরা এখন ফেরেস্তা সেজে সাধু বক্তৃতা দেন!
এই ছাত্রলীগ শেখ হাসিনা বা দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলন দেখেওনি, এসব জানেওনা। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছাত্র–ছাত্রীরা ভালোবাসতো, ভয় পেতোনা। এখন ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীদের সাধারন ছাত্র–ছাত্রীরা ভয় পায়। এরজন্যে আবরারের মতো ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে গণরূমে অবিশ্বাস্য সালিশি শাসনের ঘটনা ঘটে। সালাম দিতে দেরি হওয়ায় মারপিটের ঘটনা ঘটে। কত গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এসে আবাসন সমস্যায় আশ্রয় নেয় এসব গণরূমে। তাদের ভালোবাসার বদলে দেয়া হয় দুঃশাসন! এসব রগকাটাদের দল বিএনপি–জামায়াতের কাজ, ছাত্রলীগের নয়।
এসব জবরদস্তিমূলক আচরন করতে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলে দেননি। কিন্তু তাদেরকে এসবের দায় ফেস করতে হয়। বখাটে সন্তানদের তাদেরকে শাস্তি দিতে হয়। এসব অস্বস্তির। দলবাজির শিক্ষক নামধারীরা মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যর্থ।
সেই ১৯৪৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর জন্ম দিয়েছে। কিন্তু মারপিট মস্তানি যারা করছেন তাদের একজনও নেতা হয়েছেন, এমন রেকর্ড নেই। তারা ব্যবহৃত হয়েছেন। দল যখন সহ্য করতে পারেনি, তাদেরকে টিস্যু পেপারের মতো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। মাইন্ড ইট।
এই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বদলাতে হবে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের যাতে ভয় না পায়। যে ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাধারন ছাত্রছাত্রীরা যখন ভয় পায় তারা মূলধারা হয়ে লাভ নেই। মস্তান নেতাকর্মীরা দল ক্ষমতাচ্যুত হলে দল বদলাতে মূহুর্ত দেরি করেনা। এমন বহু নজির আছে।
প্রিয় প্রজন্ম, এখন তোমাদের ভবিষ্যত গড়ার সময়। তোমরা মেধাবী। পড়াশুনাটা ঠিকমতো হলে ক্যারিয়ার হলে মা–বাবার মুখ উজ্জ্বল হয়। মা–বাবা বড় আশা নিয়ে তোমাদের দিকে তাকিয়ে। যাদের ক্যারিয়ার হয়না পরিবারে–সমাজে–রাজনীতিতে তাদের দুর্গতির শেষ নেই। একটু দাঁড়াও, ভেবে দেখো প্রিয় প্রজন্ম।