ফজলুল বারী: দেশের রাজনীতি লিখতে বিষয় নির্বাচনে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো দেখি। অথবা শুনি টিভির অনুষ্ঠান। ফোনে অনেকের সঙ্গে কথাও বলতে হয়। বুধবার ইভিএম নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল। জনপ্রিয় এই লেখক-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ইভিএম’এ ভোট কারচুপির কোন সুযোগ নেই।
একাত্তর টিভির একাত্তর জার্নালে এসেছিলেন বিএনপির নেতা ও বিশেষ রাজনৈতিক দৌড়বিদ জয়নাল আবেদিন ফারুক। অধ্যাপক জাফর ইকবালের বক্তব্য খন্ডনের সাহস তিনি করেননি। সরাসরি বলেছেন, ‘আমি প্রযুক্তিবিদ নই। ইভিএম এর টেকনিক্যাল দিক আলোচনাতেই যাবোনা।
আমরা যেহেতু এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করবোনা, এই নির্বাচন কমিশন মানিনা, তাই এই নির্বাচন কমিশন ইভিএম’এ ভোট করবে না ব্যালট পেপারে ভোট করবে তা নিয়ে আমাদের আলোচনার কিছু নেই।‘ জয়নাল আবেদিন ফারুকের বক্তব্যে বিএনপির দূর্বলতা এবং লক্ষ্য দুটোই স্পষ্ট।
আমি একটা কথা প্রায় লিখি তাহলো আওয়ামী লীগ-বিএনপি কেউ রামকৃষ্ণ মিশন অথবা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম নয়। দুটোই রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে চায় এবং বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়। ক্ষমতায় থাকতে এবং যেতে যা যা রাজনৈতিক কৌশল এরা প্রয়োগ করে।
এখন যারা বিএনপির দূঃখে অনেক মানবিক আবেদনের কান্না করছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা কি আচরন করেছিল তা যদি তারা ভুলে গিয়ে থাকেন তাহলে তারা শয়তান। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রগ কাটতে কাটতে বিভিন্ন ক্যাম্পাস ছাত্র শিবির দখল করে রেখেছিল, এটা যেন কেউ ভুলে না যান।
ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ গত কয়েক নির্বাচনে একটি কৌশল নিয়েছে। তাহলো বিএনপি যাতে নির্বাচনে না আসে এবং এলেও যাতে রাগ করে চলে যায়। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির এবার নেতৃত্ব সমস্যাও বড় একটি সংকট। খালেদা জিয়া-তারেক দু’জনেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য।
এবার ইভিএম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ ইভিএম’এ নির্বাচন করবে। বিএনপি করবেনা। নির্বাচন ঠেকানোর সাংগঠনিক সামর্থ্য অথবা নেতৃত্ব কোনটাই বিএনপির নেই। অতএব শেষ পর্যন্ত তাদের লক্ষ্য গিয়ে দাঁড়াবে, তারেক রহমানের নেতৃ্ত্বে মুড়ি খাও।
গত নির্বাচনে ডক্টর কামালের নেতৃত্বে বিএনপির একটি সম্মানজনক এলায়েন্স ছিল। এবার সেটি নেই। লন্ডনবাসী হাওয়া ভবন নেতা ডক্টর কামালের প্যারালাল দূরে থাক, কোন লালই নন। বিএনপির নানান কথায় শিফটিংও শুরু হয়েছে। ‘জোড়াতালির পদ্মা সেতু’তে না উঠতে বলেছিলেন খালেদা জিয়া।
মির্জা ফখরুল বলতে শুরু করেছেন, পদ্মা সেতু কারও পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। দেশের কোন কিছুই কারও পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। সবাই সবকিছু জানবেন বুঝবেন সেটাও আশা করা অনুচিত। দুনিয়ার নানান প্রকৌশল কাঠামো এক জায়গায় বানানো হয়, আরেক জায়গায় নিয়ে বসানো হয়।
এক জায়গায় পুরো ঘরের কাঠামো তৈরি করে আরেক জায়গায় নিয়ে বসানো হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে এ নিয়ে সময় মতো ব্রিফ না করায় তিনি তার জ্ঞান মোতাবেক একটা ভুল বক্তৃতা দিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হচ্ছে! এটায় কেউ উঠবেননা’!
দলের বাইরে মিডিয়ায় তার এতো পরামর্শক! কেউতো তার ভুল ধরিয়ে দিলোনা! এখনও তারা জোড়াতালি দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন! এখন নানান বাধা স্বত্ত্বেও সেতু হয়ে গেলো, সেতুর ওপর দিয়ে যেতে হবে বলে বলা শুরু করা হচ্ছে পদ্মা সেতু কারও পৈত্রিক সম্পত্তি নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা নিয়ে ভালোমানুষি দেখাতে গিয়েছিলাম। সবার ক্ষেত্রে ভালোমানুষি দেখাতে নেই। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্য পড়ে বিএনপির লক্ষ্য জানা গেলো। নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রদলকে তারা ক্যাম্পাস দখলের দোয়া পড়ে দিয়েছেন!
ছাত্রলীগকেও নিশ্চয় দোয়া পড়ে দেবার লোকজন আছে। ছাত্রদল আমরা শক্তি আমরা বল হলে ছাত্রলীগও নিশ্চয় কোন এতিম সংগঠন নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত দু’দিন ধরে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সংঘাতের খবর জানতে আমি তিনটি পত্রিকা পড়ি।
এই তিনটি পত্রিকা পড়লেই আপনি মানবেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে মারামারিতে ছাত্রদল একা নয়। ওই তিনটি পত্রিকাও সঙ্গে আছে। বৃহস্পতিবার এক পত্রিকা লিখেছে ছাত্রলীগের হামলায় সাংবাদিক সহ ছাত্রদলের ২০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন! মানে আহত সাংবাদিকও ছাত্রদলের নেতাকর্মীর অংশ!
এক সাংবাদিক বলেছেন, তিনি ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। তখন তার ওপর হামলা করে তার ফোন কেড়ে নেয়া হয়। তিনি যে পত্রিকার সাংবাদিক সেই পত্রিকা ছাত্রলীগককে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে লিখে যাচ্ছে। তার লাইভও নিশ্চয় পরবর্তীতে পত্রিকাটির অনলাইনে পাওয়া যেতো।
দেশের সাংবাদিকতাও এখন দলীয় এক্টিভিস্টের পর্যায়ে চলে গেছে। কাজেই ছাত্রলীগের ছেলেরাতো তাকে চিনেই বেয়াদবী করেছে। এসব পত্রিকার রিপোর্টের সঙ্গে পাঠক মন্তব্যের নামে দলীয় কর্মীদের বক্তব্যগুলোও পড়লেও অনেক ধারনা পাওয়া যায়। বোঝা যাবে পত্রিকাগুলোরও দলীয় চরিত্র।
কারন রিপোর্টের মতো সেখানে কোন মন্তব্য থাকবে কোনটা বাদ যাবে সেটি ঠিক করেন সম্পাদক। সেই সম্পাদক বিএনপি-জামায়াত সমর্থক, এটা লিখে দেখুন। কিছুক্ষনের মধ্যে সেটি আর দেখবেননা। একটি পাঠক মন্তব্যে লেখা হয়েছে, ‘ছাত্রলীগকে ধংস করা না গেলে দেশ ধংস হয়ে যাবে’, এটি দেখে সম্পাদক খুশিতে তা রেখে দিয়েছেন।
গত বিএনপি আমলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতে পারেননি। আদর্শিক না হওয়ায় ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী অবশ্য ছাত্রদলে যোগ দিতেও দেরি করেননি। যেমন এখন ছাত্রলীগ পরিচয়ে ছাত্রদল-শিবিরের কর্মীরা ক্যাম্পাসে কিলবিল করে।
সমসাময়িক ছাত্র না হওয়ায় ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেখে অনেক ছাত্র এটিকে চাচ্চু-আন্টিদের দলও বলে। ছাত্রদলকে ক্যাম্পাস দখলের দোয়া পড়ে দেয়া হয়েছে। দোয়া সফল হলে হয়তো সেই তিন পত্রিকার শিরোনাম হতো, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পিটুনি দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে’।
গত দু’দিনে দেখা গেছে ছাত্রদল নামধারী শিবির ক্যাডারদের হাতেও ফুলের তোড়া নেই! গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও দোয়া পড়ে দিয়েছেন! নির্বাচনের আগে ছাত্রদল দিয়ে ক্যাম্পাস দখল করাতে হবে! ছাত্রদলের সংঘর্ষ করার অন্যতম শক্তি মানে ছাত্র শিবির! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দখলের মরিয়া ভূমিকা নিয়েছে শিবির।
অতএব সামনে বাকি আছে আরও অনেক খেলা! সখি ফুল হাতে দাঁড়াবার সময় নয় অদ্য। আপনাদের রাজনৈতিক দল অথবা মিডিয়া হাউজগুলোও কোন রামকৃষ্ণ মিশন বা সেবা সংস্থা নয়। ছাত্রলীগকে রামকৃষ্ণ মিশন অথবা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের পুরোহিত অথবা ভলান্টিয়ার হবার জ্ঞান বিতরনকারী আপনারা কে?