নড়াইল প্রশ্নে ভালো একটা আদেশ !

নড়াইল প্রশ্নে ভালো একটা আদেশ !

নড়াইল প্রশ্নে ভালো একটা আদেশ এসেছে সোমবার। নড়াইল মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছে হাইকোর্ট। তদন্ত রিপোর্ট হবে নড়াইলের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে। ছয় সপ্তাহ তথা ১৭ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দিতে হবে।

এরসঙ্গে ভালো আদেশটি হলো লাঞ্ছিত শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের উপযুক্ত চিকিৎসা ও পরিবার সহ তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে। বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ সোমবার ওই আদেশ দিয়েছে।

রুলে নড়াইলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ওই ঘটনা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে ‘জনতার বিচার’ বন্ধে এবং লাঞ্ছনার শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষায় বিবাদী ব্যক্তিদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষনা করা হবেনা, তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইজিপি, নড়াইলের ডিসি, এসপি, থানার ওসিসহ বিবাদী ব্যক্তিদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনা-জুতোর মালা পরানোর সময় ডিসি-এসপি ওই কলেজে উপস্থিত ছিলেন। অথচ থানার ওসি-ফাঁড়ির ইনচার্জকে দায় দিয়ে তারা ফেরেশতা সাজতে চেয়েছিলেন!

শুক্রবার দিঘলিয়া গ্রামের ঘটনার পর আমরা স্বপন কুমার বিশ্বাসের ঘটনা ভুলতে বসেছিলাম। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার শয়তানিতে ওই ঘটনা ঘটে। নড়াইল মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের শিক্ষক ওই নেতা। যাকে এরমাঝে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ অব্যাহতি দিয়েছে।

কিন্তু নিরাপত্তার সমস্যায় শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এখনও এলাকায় এবং কলেজে ফিরতে পারেননি। এরমাঝে আমরা দিঘলিয়ার ঘটনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় হাইকোর্ট যদি আদেশটি না দিতো তাহলে স্বপন কুমার বিশ্বাস হয়তো তাঁর এলাকায় এবং কলেজে ফিরতেই পারতেননা।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র রিট মামলাটি দায়ের করে। নির্যাতিত মানুষের পক্ষে হাইকোর্টের যে সিনিয়র আইনজীবী বরাবর গিয়ে দাঁড়ান সেই শ্রদ্ধেয় জেড আই খান পান্না এই রিট মামলাতেও স্বপন কুমার বিশ্বাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তাঁকে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা।

নড়াইলে পরপর দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটলো। ডিসি-এসপির উপস্থিতিতে জুতোর মালা পরানো হয়েছে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নড়াইলের ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা! আওয়ামী লীগের উচিত এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা বলার ক্লাসের ব্যবস্থা করা!

তিনি এখন বলছেন নড়াইলের ঘটনায় কাউকে ছাড় দেবেননা! মানে আগের সব ঘটনায় তিনি ছাড় দিয়েছেন! এরজন্যেইতো এখন পর্যন্ত কোন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার বিচার হয়নি। একেকটি ঘটনার পর কয়েকশো অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা হয়। পুলিশ আয়-রোজগার ভালো করে। ঘটনার আর বিচার হয়না।

নড়াইলের দিঘলিয়ার ঘটনায় ২০০ থেকে ২৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। দিঘলিয়া গ্রামের ঘটনাও যে সাজানো তা এখন নানাভাবে জানা যাচ্ছে। মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ইসলাম নামের একজন আকাশ সাহা নামে একটি ফেইক আইডি বানিয়ে ঘটনা সাজান।

শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পুলিশের উপস্থিতিতে হিন্দু গ্রামে হামলার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ আকাশ সাহা এবং তার বাবাকে গ্রেফতার করেছে। কারা উত্তেজনা সাজিয়েছে কারা হিন্দু সম্পত্তিতে-মন্দিরে হামলা করেছে, আগুন দিয়েছে গ্রামের লোকজন তাদের সবাইকে চেনে-জানে।

দিঘলিয়া গ্রামের ঘটনায় এরমাঝে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন এলাকার এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজা। কারা পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে সে সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের তারকা ব্যক্তিত্ব। শেখ হাসিনা তাঁকে প্রার্থী করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কেউ কেউ যে ভিন্ন খেলা খেলছেন তা ইঙ্গিত করেছেন ম্যাশ।

মাশরাফি বলেন, ‘আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ ও অসহায় মানুষদের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন।’ রোববার রাত ১০টার দিকে ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ‘আপনারা সব তো করলেন। এবার আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ, পেছন থেকে আঘাত করতে করতে আপনারা ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তো আসুন, সামনে থেকে আঘাত করুন। আমার সঙ্গে সরাসরি লড়াই করুন। আমি সাধুবাদ জানাব।’

মাশরাফি তাঁর ফেসবুক পেজে বলেন, ‘একটু বোঝার চেষ্টা করছি, আর কত দিক থেকে আক্রমণ হতে পারে। কিছুদিন আগে মির্জপুরে সম্মানিত একজন শিক্ষককে অপমানের ঘটনায়ও আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ ওটা আমার নির্বাচনী আসনের ভেতরেই নয়। আমি জানি, নড়াইলে রাজনীতি যাঁদের কাছে পেশা, তাঁদের কাছে আমি এখন নেশা।’

মাশরাফি আগের একটি ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘তাঁরা প্রথম ঝামেলা করল মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে। তাঁকে যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা দিল, ঠিক সেই সময় ওয়াজ করার জন্য নড়াইলে আমন্ত্রণ জানানো হলো। আমাকে বিন্দুমাত্র না জানিয়ে ওয়াজ মাহফিল দেওয়া হলো নোয়াগ্রামে, যেখানে আমার শ্বশুরবাড়ি। বক্তাকে কালনা ঘাট পর্যন্ত আনার পর তবেই কেবল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানোনো হলো।’

তখন মামুনুল হককে কালনা ঘাট পার হতে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর মাহফিল কর্তৃপক্ষ জানায় মাশরাফিকে। মামুনুল হককে ওয়াজ মাহফিলে আনার ব্যবস্থা করতে মাশরাফিকে অনুরোধ করে মাহফিল কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গ টেনে মাশরাফি বলেন, ‘তখন এই সমস্যার সমাধান করা কীভাবে সম্ভব? এটা তো পুরোটাই একটা প্রক্রিয়া, যা আরও সাত দিন আগে থেকে করতে হয়।’

‘তখন ওই লোকগুলো বলা শুরু করে দিল, আমি নাকি ওয়াজ মাহফিল হতে দিচ্ছি না। পুরো খেলাটা খেলেছে এমনভাবে, তাঁকে আমার নির্বাচনী এলাকায়, আমার শ্বশুরবাড়ির এলাকায় এনে সরকারের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে আমি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মানছি না। আর যদি না আসতে পারে, তাহলে প্রচার করা হবে, মাশরাফি ওয়াজ মাহফিল করতে দেয় না। দুই দিক থেকেই তাঁদের জয়। আর দুই পক্ষের কাছেই আমাকে খারাপ বানাবে। তবে সত্য চাপা থাকেনি। সবাই কমবেশি জেনেছে সত্যটা।’

শুক্রবার দিঘলিয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয় উল্লেখ করে মাশরাফি বলেন, ‘এবার উল্টো খেলা খেলল তারা—সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের ওপর আক্রমণ করে তাঁদেরকে বিপদে ফেলা, পাশাপাশি আমাকেও বিপদে ঠেলে দেওয়া।’