গোটাবাইয়ার ঘটনায় ভীষন খুশি রিজভী

গোটাবাইয়ার ঘটনায় ভীষন খুশি রিজভী

ফজলুল বারী: ইহা একটি নির্দোষ রম্য রচনা। আপনারা আবার মাঝখান দিয়ে কেউ কিছু মনে করিয়েন্না। শ্রীলংকার গোটাবাইয়া রাজাপাকসের ঘটনায় নাকি ভীষন খুশি বিএনপির রুহুল কবির রিজভী। ফোনে কলম্বোর কিছু ক্লিপিং দেখতে দেখতে তিনি খালি গায় একা একা ঘরের মধ্যে হাঁটছেন আর খিক খিক করে হাসছেন।

এমন একা একা হাসির বিষয়টি নিয়ে কেউ যাতে তাকে আবার অন্য কিছু বলে না বসে এরজন্যে এ অবস্থায় তিনি রেজিয়া ভিলার তার কক্ষের বাইরেও আসতেও পারছেননা। কারন এমন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে তার একা একা হাঁটা আর হাসি নিয়ে লোকজন তাকে অনেক পচা কথা বলেছেন।

কলম্বোর প্রেসিডেন্ট ভবনের সুইমিং পুলে জনতার গোসল করার বিষয়টি তার বিশেষ পছন্দ হয়েছে। তার খুব ইচ্ছে করছিল কলম্বো ছুটে গিয়ে সেখান থেকে ফেসবুকে লাইভ করবেন আর শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলবেন, এখনও সাবধান হয়ে যান বলছি। নতুবা আমি কলম্বো থেকে ফিরেই আন্দোলন শুরু করে দেবো।

কিন্তু টিকেট-টিকেট কে দেবে কলম্বোর টিকেট বলতে বলতে চারদিকে ফোন করেও তিনি সুবিধা করতে পারেননি। এক সময় তার মনে হলো গণভবনের ভিতরে সুইমিং পুল আছে কিনা। কারা এটি জানেন তা জানতে তিনি হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন। তিনি হাঁটেন আর জপেন গণভবন, গণভবন। সুইমিংপুল।

দুষ্ট লোকেরা বলে বিএনপির অফিস রেজিয়া ভিলার মিডিয়া ব্রিফিং এর সময় রিজভীর পাশে যারা বসেন তারাই মূলত তার আয়ের উৎস। এই আয় থেকেই সংসারের চাল-ডাল-পিঁয়াজ কিনতে হয়। কারন ব্রিফিং এর সময় রিজভীর পাশে বসতে পারলেই পত্রিকায়-টিভিতে খোমা দেখানো যায়।

এতে করে ম্যাডাম বাসায় বসে সহজেই তাদের খোমা দেখেন। তারেক ভাইয়া লন্ডনে বসে খোমা দেখেন। এই খোমা দেখা ছাড়া তাদের আর কোন দৈনন্দিন রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। রিজভী আর মির্জা ফখরুলের ব্রিফিং-ই খোমা দেখানোর সহজ সুযোগ। মির্জা ফখরুলের পাশে শুধু স্থায়ী কমিটির সদস্যরাই বসতে পারেন।

রিজভীর পাশে বসতে স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়া লাগেনা। কাজেই ব্রিফিঙে তার পাশে বসতে কে কত দেবেন এ নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। টাকা তোলার ক্যাশিয়ারও আছেন। দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে  লাভ হয় রিজভীর।  দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি দেখিয়ে তখন অর্থ বেশি নেয়া যায়।

এই পাশে বসা খোমা দেখানেওয়ালাদের একজনকে রিজভি ফোনে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করেন, এই-গণভবনে সুইমিং পুল আছেনি। তুই জানোসনি’। ওই লোক মুখের ওপর বলেন, কেমনে বলবো। তের বছর ধরে আপনি শুধু ব্রিফিং-ই করলেন। কিন্তু ক্ষমতায় যাবার কোন ব্যবস্থা করতে পারলেননা।

রোজার ঈদের পর কুরবানির ঈদও চলে গেলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্দোলনের কোন ব্যবস্থা করতে পারলেননা! উল্টো মহাসচিব মির্জা ফখরুল এখন কোট-টাই পরে বিদেশিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই লোকের কথায় খ্যাক খ্যাক করে ওঠেন রিজভী। রাখ তোর মহাসচিব। আমারে সুইমিং পুলের খোঁজ দেয়।

একজন পরামর্শ দিয়ে বলেন, ভাই সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করেন। আপনার সঙ্গে কত সাংবাদিকের খাতির। তারা আপনার ব্রিফিঙের কথা শুনলেই দৌড়াইয়া আসে। সাংবাদিকদের খরচ দিতে হবে বলেও আমাদের থেকে টাকা নেন আপনে। তাদের কারে কত দেন বা আদৌ দেন কীনা তাও কেউ জানেনা।

রিজভী মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলেন, এই চুপ কর! দেয়ালেরও কান আছে। সাংবাদিকদের নামে টাকা তোলার কথা এভাবে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় বলা যাবেনা। সংসার শুধু আওয়ামী লীগ-বাকশালীরাই করে না। সংসার সবারই আছে। আমাদেরও বৌ-বাল-বাচ্চা আছে। সংসার চালাতে আমাদেরও টাকা লাগে।

দুনিয়ার মানবিক সরকারগুলো বিরোধীদলের নেতা-কর্মী-ফুলটাইমারদেরও সংসার চালানোর টাকা দেয়। কিন্তু এই জালিম সরকারের দয়া-মায়া কিস্যু নেই। তের বছর ধরে আমাদের সংসারগুলো কিভাবে চলছে সে খোঁজ কোনদিন নিলোনা। টাকা দেয়া দূরের কথা। এরপর রিজভী একজন সাংবাদিককে কল করেন।

ভাই কেমন আছেন। একটা ইনফরমেশনের জন্যে ফোন করেছি। আমি জানি আপনি অনেক ইনফরমেশন রাখেন। রিজভী বলেন কলম্বোর ছবি দেখছেন? সুইমিংপুলে জনতার সাঁতার কাটতে দেখেছেন? প্রেসিডেন্টের বেডরুমে প্রেসিডেন্টের বেডে জনতাকে ঘুমাতে দেখেছেন?

হুম, এই দিন আমাদেরও আসবে। আমরাও এভাবে সাঁতার কাটবো। এরপর রিজভী জানতে চান, ভাই গণভবনে কী সুইমিং পুল আছে? ফোনের স্পিকার অন করা ছিল। ক্ষোভ ঝাড়ছেন সাংবাদিক। মশকরা করেন রিজভী ভাই? তের বছর ধরে আপনাদের সঙ্গে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটছি।

বিএনপি বিটের সাংবাদিকদের কী গণভবনে ঢুকতে দেয়? এ কথা বলে ফোন কেটে দেন ওই সাংবাদিক। রিজভী তখন চারপাশ দেখেন। এরপর আবার একা একা হেঁটে হেঁটে হাসতে থাকেন। না, কেউ দেখেনি। কেউ শোনেনি। একা একা ঘরে কেউ চড় মারলেও সমস্যা নেই। কারন সাক্ষীতো নেই।

কেউতো ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে বলতে পারবেনা অমুক সাংবাদিক রিজভীকে চড় মেরেছে বা অমুক সাংবাদিক রিজভীর ফোনের লাইন কেঁটে দিয়েছে। এরপর আরেক টেনশন মাথায় চাপে রিজভীর। কলম্বোর প্রেসিডেন্ট ভবনের সুইমিং পুলের কথা বলতে গিয়ে গণভবনে সুইমিং পুল আছে কিনা এটা যে রিজভী জানতে চেয়েছেন এটা আবার ওই সাংবাদিক রিপোর্ট করে দেন কিনা।

ধ্যাৎ বলে নিজের ফোন ছুঁড়ে মারেন রিজভী। এরপর ফোন কুড়িয়ে এনে আবার খিক খিক করে হাসতে থাকেন। না ভাঙ্গেনি ফোনটা। আল্লাহ বাঁচাইছে। এখন ফোন ভাঙ্গলে মহাবিপদ হয়ে যেত। একা একা বসে সুইমিংপুলের সাঁতার দেখার জন্যে বিশ্বস্ত মাধ্যম এই ফোন। প্রানের চেয়ে প্রিয়।

রিজভীর ঘুম পায়। অন্য সময় রিজভী ঘুম তাড়ানোর জন্যে এটাসেটা করেন। এবার কিন্তু একদম তেমন কিছু করেননা। ঘুমানোর আয়োজন করেন। সুইমিংপুল সুইমিংপুল করে করে তার মাথায় যেটা উঠেছে তা নামানোর একমাত্র মহৌষধ এখন ঘুম। বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে রিজভী কল্পনা করেন তার পরনে সাঁতারের পোশাক। তিনি সুইমিংপুলে সাঁতরাচ্ছেন। কিন্তু পুলটি ঢাকার না কলম্বোর তা বোঝা যাচ্ছিলোনা।