বিএনপির আমলে দেশে অনেক বিদ্যুৎ ছিল

বিএনপির আমলে দেশে অনেক বিদ্যুৎ ছিল

ফজলুল বারী:ইশরে বাংলাদেশে যদি শ্রীলংকার অবস্থা হতো! এই ছিলো দেশের কিছু মানুষের আশা। কিছু মিডিয়ারও। কিন্তু সতর্ক সরকার আগেভাগে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে। বিএনপি ফিরে  গেছে প্রেসক্লাবের সামনে। নতুন ইস্যু হচ্ছে ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ’!

এইদল এমন কিছুদিন খালেদা জিয়া, কিছুদিন তারেক রহমানের জন্যে আন্দোলন করে! অথবা বোকাদের এসব ইস্যুতে ব্যস্ত রাখা হয়! দেশের মানুষের কষ্টের কত ইস্যু বাজারে চলমান! কিন্তু এসব নিয়ে তাদের কোন আন্দোলন নেই! মির্জা ফখরুল বা রিজভী এসব নিয়ে মাঝে মাঝে মুখস্ত ভাষন দেন বা পড়েন! ব্যাস শেষ!

বুধবার তাদের পত্রিকার অনলাইন সংস্করনে লেখা হয়েছে, ‘প্রেসক্লাবের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়ে রাস্তার একপাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়’! মানে এখানেই দল শেষ! যানজটের শহরে মানুষ যখন এদের এসব ব্যক্তিগত কর্মসূচির কারনে তাদের ভোগান্তি বাড়াতে দেখে তখন একা একা গালগালাজ করতে করতে শেষ করে দেয়।

দেশের অসহায় মানুষজনতো এদের আর কিছু করতে পারেনা। অন্তত মনভরে গালি দিতে পারে। মন থেকে অভিশাপ দিতে পারে। দিন কয়েক আগে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের এক নেতা ‘তারেক রহমান সম্পর্কে ওই কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য’ রেখেছেন! তারেকের জিহবা ছেঁড়ার কথা ওই নেতা বলেছেন, এটা সত্য।

তারেক রহমানের আব্বা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান তৎকালীন সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় লেখা নিবন্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তার শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। লেখাটা জিয়াউর রহমানের না বিচিত্রা সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরীর তা ইতিহাসের গবেষকরা বের করবেন।

কারন শাহাদাত চৌধুরীর সঙ্গে জিয়ার সম্পর্ক পুরনো। মুক্তিযুদ্ধের সময় শাহাদাত চৌধুরী জিয়াউর রহমানের প্রচারের জন্যে আগরতলার সাংবাদিকদের কাছে আসতেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে পরে শাহাদাত চৌধুরী-নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরী এরা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

তারেক রহমানের আম্মা খালেদা জিয়া কি কারনে স্বাধীনতার পর ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার বাড়িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে যেতেন তা তোফায়েল আহমদের বক্তৃতায় পার্লামেন্টের প্রসিডিংসের মধ্যে আছে। সংসদে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তোফায়েল আহমদ ওই বক্তব্য রাখেন।

খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি রশীদ-হুদাদের সংসদে নিয়ে এসেছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আটকে দিয়েছিলেন, কিন্তু কখনও বঙ্গবন্ধুকে অশ্রদ্ধা করে বক্তব্য রাখেননি। আর গিয়াস উদ্দিন মামুনের বন্ধু তারেক রহমানের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন নেতাই নন!

লন্ডনে জামায়াতে ইসলামী পরিবেষ্টিত অবস্থায় তারেক রহমান জাতির পিতাকে যে ভাষায় কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখেন, তাতে বিএনপির সুহৃদ কাদের সিদ্দিকী, ডাঃ জাফর উল্লাহ চৌধুরী পর্যন্ত বিরক্ত। কাদের সিদ্দিকী একবার তারেককে সতর্ক করে বলেছিলেন, তার বাবা বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে খেতাব নিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের সেই নগর নেতা তাঁর বক্তৃতায় বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছিলেন, এরজন্যে তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেয়া হবেনা। দেশে এলে তার জিহবা ছিঁড়ে ফেলা হবে ইত্যাদি! এটা আসলে শুধু ওই নেতার শপথ নয়, তারেককে নাগালের মধ্যে পেলে আওয়ামী লীগের কোন সাধারন কর্মীও ঘটনা ঘটাতে পারে। সব দেশের একজন প্রধান নেতা থাকেন। বাংলাদেশের প্রধান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

গ্রেনেড হামলা মামলা সহ চার মামলার সাজা থাকায় তারেক রহমান দেশে আসবেননা। আওয়ামী লীগের ওই নেতা বা কোন কর্মী-সমর্থক তার জিহবাও ছিঁড়তে পারবেননা। আর তারেক রহমানের দেশে আসতে আগে বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে হবে। কারন তার বাংলাদেশী পাসপোর্ট নেই। পাসপোর্ট বা ব্রিটিশ পাসপোর্টে নো ভিসা রিকোয়ার্ড সীলমোহরের জন্য বিএনপিকে আগে ক্ষমতায় আসতে হবে।

বিএনপি ক্ষমতায় আসবে কী করে। দেশের মানুষের সমস্যা নিয়ে যদি দলটি আন্দোলন করতো, আওয়মী লীগ কী এতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে! কত যে ইস্যু এলো গেলো! এই মনে করেন রনি’র ইস্যু। রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একা একা আন্দোলন করে করে ছেলেটি এখন দেশেবিদেশে আলোচিত-পরিচিত।

পত্রিকার রিপোর্ট পড়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত এ নিয়ে সুয়োমোটো আদেশ দিয়েছে। আর বিএনপির আন্দোলনের ইস্যুর নাম খালেদা জিয়া আর তারেক জিয়া! উন্নত চিকিৎসার জন্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দিতে হবে! দেশের মানুষের চিকিৎসার কী অবস্থা? না এগুলো গরিব, দেশেই মরুক!

আর খালেদা জিয়া ধনী, তিনি দেশে কেনো চিকিৎসা করাবেন! তারেক রহমান-কোকোর দুর্নীতির কারনে দেশে ওয়ান ইলেভেন এসেছে। পুরো যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মালিক বনে গিয়েছিলেন কোকো! হাওয়া ভবন এত ভালো ছিলোতো বিএনপি এটি তুলে দিলো কেনো?

সাবেক সেনা প্রধান জিয়ার ছেলেকে কেনো ফ্যানের সঙ্গে বেঁধেছিল ওয়ান ইলেভেনের সেনারা? কেনো তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন তারেক অসুস্থ। তার আগে চিকিৎসা দরকার। তারেক-কোকো যে মুচলেকায় স্বাক্ষর করেন তাতে কী লেখা ছিল?

ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দূর্মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে সংকটে পড়েছে দেশ। এখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মেশিন-যন্ত্র আছে, পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই। আর তখন খাম্বা ছিল, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা ছিলোনা। সেই খাম্বার ঠিকাদারও ছিলেন তারেকের বন্ধু মামুন।

এখন পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ থাকায় দেশের শানৈ শানৈ উন্নতি হচ্ছিলো। যে কোন দেশের উন্নয়ন-উন্নতির অন্যতম অবকাঠামো হলো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। সরকার এই পরিস্থিতি দেশের মানুষকে আস্থায় এনে রাজনৈতিকভাবে মোটিভেট করে সামাল দিতে হবে। লেপটপের সামনে বসে নেতার বক্তৃতায় মানুষ বিরক্ত হয় মোটিভেট হয়না।