ফজলুল বারী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু লোকের কাজ হলো হায় হায় করা। তারা হায় হায় করতে থাকুক। আমরা আমাদের কাজ করতে থাকি। সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কথাটি প্রধানমন্ত্রী কথাটি বলেছেন। তিনি বাংলাদেশের উজ্জিবনী নেতৃত্ব। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়ন দৃষ্টান্ত।
সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই এখন দিনরাত কাজ করেন। আবার কিছু লোক সবার কাজের সমস্যা তৈরি করেন। এমন কিছু লোক অবশ্য বাংলাদেশের মতো দেশে সব সময় থাকেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা সাবোটাজের কাজ করেন তাদের নিয়েই যত ভয়।
দুর্নীতির পাশাপাশি এখন সাবোটাজের আশংকা শুধুই বাড়ছে। কারন প্রশাসনের ভিতর সবাই এখন আওয়ামী লীগ-বঙ্গবন্ধুর সৈনিক সেজে বসে আছেন। বাস্তবে যা তারা নন। বাংলাদেশের ভরসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির উর্ধে। তিনি অতন্ত্র প্রহরী। তাই বাংলাদেশ শ্রীলংকা হবেনা।
আমি মিডিয়ার মানুষ। সারাক্ষন মিডিয়ার চোখে দুনিয়া দেখি। জন্মভূমি বাংলাদেশ দেখি। সারাক্ষন দেশের প্রধান কিছু অনলাইনে নক করি কিছু সময় পরপর। ইন্টারনেটের যুগের এই সুবিধা। দেশের কিছু মিডিয়ার সারাক্ষন শুধু হায় হায় নয়, একটা আক্ষেপ স্পষ্ট বুঝতে পারি, ইশরে ইশরে! ইশরে দেশটা যদি এই সুযোগে শুধু নাই নয়, যদি শেষ হয়ে যেতো!
সেই ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনা ক্ষমতায়। এটা তাদের আর কত সহ্য হয়! খালেদা জিয়া-তারেক রহমানদের নিয়ে আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম! তারেক রহমানের লম্বা টিভি ইন্টারভ্যু করা! আহা! ১/১১’এর সময়ও তারা জেনারেলদের পক্ষে ছিলেন।
তখনও চিন্তা-চেষ্টা ছিল অন্তত আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় না আসে। সেই আওয়ামী লীগ এমনভাবে ক্ষমতায় এলো! আর যাবার নাম নেই! অতঃপর কিছুদিন পরপর তারা এমন সুর নেন, এইতো গেলো বলে! এখন ইউক্রেন যুদ্ধ কেন্দ্রিক বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সরকার যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে শুধু বলতে বাকি, শেখ হাসিনাই এই যুদ্ধ বাধিয়েছেন!
করোনা মহামারীর কারনে বিশ্বজুড়ে ভার্চুয়াল বৈঠকের নতুন যুগ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনেক বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। অনেক উদ্বোধনও করেন ভার্চুয়ালি। এতে করে তাঁর জনবিচ্ছিন্নতা বাড়ার কথাও উঠেছে। বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী জনবিচ্ছিন্ন। দেশের মানুষের কষ্ট তিনি বোঝেননা।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কোথাও যাওয়া আসাকে কেন্দ্র করে রাস্তা বন্ধ-যানজটের যে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হয়, এরচাইতে ভার্চুয়াল বৈঠক-উদ্বোধন অনেক ভালো। বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক বেশি সৃষ্টিশীল। উৎপাদনমুখী। যানজট তাদের কর্মস্পৃহাকে বাধাগ্রস্ত করে।
দেশে টেলিভিশন চ্যানেল বেশি হওয়াতে বিএনপির কিছু তৃতীয়-চতুর্থ সারির নেতাও এখন মহাব্যস্ত! টকশোর অনুরোধ রক্ষা করতে করতে তারা দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেননা! এদের একজন এক টকশোতে বলছিলেন, সরকার যে শতভাগ বিদুতের কথা বলেছিল সেই বিদ্যুৎ তাহলে কোথায় গেলো!
যেন বিদ্যুৎ মজুদের পাওয়ার ব্যাংক আর কি! এটি যে সারাক্ষন উৎপাদন আর সরবরাহের বিষয় এটা বোঝাতে এদের ক্লাস নেবে কে। এলপিজি, জ্বালানি তেলের দাম বিপুল বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের মতো দেশকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লোডশেডিং সহ নানা ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
এরমাঝে বাংলাদেশ প্রস্তুত করছে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সমূহ। এ বছরের শেষের দিকে বেশকিছু কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসার কথা। তখন পরিবেশ দূষন নিয়ে আরেক শোরগোল প্রতিবাদ শুরু হবে। আনু মোহাম্মদ স্যাররা তৈরি হচ্ছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি এড়াতে বিশ্বে কার্বন নিস্বঃরন কমাতে অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের অনেক দেশ তাদের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সমূহ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন উপায়হীন বাংলাদেশের মতো দেশ হবে তাদের কয়লার কাষ্টমার। অস্ট্রেলিয়াও তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের কাছে কয়লা বেচবে বলে।
এক পত্রিকার শিরোনাম আর বত্রিশ দিনের ডিজেল মজুদ আছে দেশে! যেন তেত্রিশতম দিনেই দেশ শেষ। যেহেতু শ্রীলংকার সংকট জ্বালানি সহ নানা কিছু আমদানি বন্ধ, বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকে কেন্দ্র করে বেড়েছে-বিস্ফোরিত হয়েছে তাই এইসব মিডিয়ার আশা বাংলাদেশ যদি ডোবে যদি ডোবে!
প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টার অর্থনৈতিক সহায়তায় চলা পত্রিকা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কতবার যে এমন সব হায় হায় মার্কা শিরোনাম করেছে এর টালি করলে বলতে হবে বাংলাদেশ নামের কোন দেশই এখন আর জীবিত নেই! যা দেখা যায় তা আসলে একটি ফসিল!
বাংলাদেশ যে এখন কোথায় পৌঁছে গেছে, বাংলাদেশের মানুষ যে এখন কত সৃষ্টিশীল এর সব মনে হয় দেশে বসে ধারনা করা কঠিন। ডিজেল, তেল সহ নানাকিছুর চাহিদা গত এক দশকে দেশে অবিশ্বাস্য বেড়েছে। এসবের একটাও দেশে উৎপাদিত বা উত্তোলন হয়না। বিদেশ থেকে আমদানি করে আনতে হয়।
কিন্তু দিনশেষে বাংলাদেশের লড়াকু সাহসী মানুষ আর শেখ হাসিনার মতো একজন ২৪/৭ নেতৃত্বের কারনে বাংলাদেশ আর ডোবেনা। তুরিয়া নন্দে ছুটে চলে বারবার! ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন জোটের নিষেধাজ্ঞায় জ্বালানি তেল সহ সবকিছুর দাম বেড়েছে ধারনাতীত।
মার্কিন রিজার্ভ ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানোর উদ্বেগ অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পৌঁছেছে। বাংলাদেশের কার্ভ মার্কেটে ডলারের দাম যে এত বেড়েছে এর কারনও কিন্তু মার্কিন রিজার্ভ ব্যাংকের নড়াচড়া। ভারত, পাকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশের ডলারের দাম জানার চেষ্টা করুন। চমকে যাবেন।
মুদ্রাস্ফীতি সর্বত্র আকাশচুম্বি। কারন জিনিসপত্রের দাম সব জায়গায় বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বাজারে কোন একটা তরকারির কেজি এখন ৭/৮ ডলারের কম নয়। একটা পাতাকপির দাম দশ ডলার, মানে বাংলাদেশের সাতশ টাকা। করোনা উপলক্ষেও অস্ট্রেলিয়া সরকার নাগরিকদের প্রনোদনা দিয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ উপলক্ষে জিনিসপত্রের দাম বাড়া উপলক্ষেতো কোন টাকা দেবেনা! ইউক্রেনকে নানান সহায়তা দিয়েছে-দিচ্ছে। কিন্তু নাগরিকদের আর্থিক প্রনোদনা দেয়নি বলেতো মানুষ বসে থাকবেনা। বাংলাদেশের মানুষের এসব চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রনোদনা পাবার অভ্যাসও নেই।
তারা বাড়তি কাজ করেই সব পরিস্থিতি সামাল দেয়। বৈশ্বিক সংকট মাথায় রেখে বাংলাদেশ বিপদ ঘটার আগে সতর্ক ভূমিকা নিয়েছে। রেমিটেন্স কমবেনা। দেশে যেহেতু সবকিছুর দাম বেড়েছে তাই পরিবারগুলোর কাছে বিদেশ থেকে টাকা বেশি যাবে। এটাই আমাদের পারিবারিক বন্ধন।
বিদ্যুৎ সমস্যার মধ্যেও রপ্তানিমুখী কোন কারখানাই বন্ধ নেই। জেনারেটর দিয়ে কাজ চালিয়ে হলেও সবাই যার যার বায়ার ধরে রাখতে তৎপর। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক সহ রপ্তানি আয় বন্ধ থাকেনি। সরকারকে শুধু আইনশূংখলা পরিস্থিতি-রাজনৈতিক স্থিতি বজায় রাখতে হবে।
জ্বালানি তেল সংগ্রহে সরকারও হাত গুটিয়ে বসে নেই। ভারত থেকে এরমাঝে এখন অপরিশোধিত তেল এসেছে। আরও আসছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর যে সম্পর্ক, একবার ফোন তুললেই অনেককিছু চলে আসবে। এই সময়ে আমরা বিদেশ থেকে বেশি ডলার দেশে পাঠাবো।
আপনি-আপনারাও যার যার মতো করে ভূমিকা রাখুন। বিএনপিও এখন দেশের মানুষকে সহায়তার কর্মপন্থা নিতে পারে। কারন দেশটা আমাদের সবার। মোটকথা আমাদের দেশের মানুষকে আমরা হারতে দেবোনা। আমরা দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামাল দেই। সেভাবে সম্মিলিতভাবে এই বৈশ্বিক দুর্যোগও সামাল দিতে হবে। কান্ডারি হুশিয়ার।